ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডির ২৯ বছর পূর্তি আজ। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে হলের একটি ভবনের ছাদ ধসে ৪০ ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথির মৃত্যু হয়। দিনটিকে দীর্ঘকাল ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শোক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বড় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটার পরও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই হলগুলোতে বসবাস
করছেন। অন্তত আটটি হল রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন এ হলগুলোতে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ হলেরই দু’টি শতবর্ষী ভবন এখনো মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন এসব হলের শিক্ষার্থীরা। দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছেÑ সকাল ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল সাড়ে ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শোক মিছিল সহকারে ছাত্র-শিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও নীরবতা পালন, সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত জগন্নাথ হল অক্টোবর স্মৃতিভবনের টিভি কক্ষে আলোচনা সভা, ৯টা থেকে ১০টা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের প্রার্থনা সভা, বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ ও বিভিন্ন হলের মসজিদে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মুনাজাত, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জগন্নাথ হল প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় নিহতদের তৈলচিত্র ও তৎসম্পর্কিত দ্রব্যাদি প্রদর্শন, সকালে জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচি এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জগন্নাথ হল উপাসনালয়ে ভক্তিমূলক গানের অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও, শোক দিবস উপলক্ষে ‘অক্টোবর স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট’ আয়োজন করা হয়েছে, যা ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ঝুঁকিতে বসবাস শিক্ষার্থীদের : জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির পর ২৯ বছর পার হলেও এখনো হলটির দু’টি ভবন মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে কয়েক শত শিক্ষার্থী দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করে আসছেন। অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় ভবন দু’টি যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা ভবন এবং গোবিন্দ চন্দ্র দেব ভবন নামের এ দু’টি ভবনের ছাদের অনেক অংশের পলেস্তরা খসে পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। হলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জুয়েল বর্মণ নয়া দিগন্তকে বলেন, হলের এ দু’টি ভবনে থাকতে প্রচণ্ড ভয় করে। বড় বড় ফাটল হওয়ার পাশাপাশি ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। খুব দ্রুত এর সংস্কার না করলে আমাদের বড় ধরনের তি হয়ে যেতে পারে। জগন্নাথ হলের পাশাপাশি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো সাতটি হল। এর মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের দোতলার ছাড়ে বড় বড় ফাটল ধরেছে। অনেক অংশে ছাদ খসে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে গজিয়েছে গাছ। বেশ কয়েকটি বাথরুমের ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা নয়া দিগন্তকে বলেন, কয়েক বছর আগে হলটি সংস্কার করা হয়েছে। তার পরও এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পুরনো ভবনটির অবস্থাও একই। এ ভবনটির সামনের অনেক অংশ বিকট শব্দে খসে পড়েছে। হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হল এবং মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের অবস্থাও দীর্ঘ দিন ধরে নাজুক। এ হল দু’টি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শহীদুল্লাহ হল এবং ফজলুল হক মুসলিম হল শতবর্ষী হওয়ায় এ হল দু’টির অবস্থাও বেশ খারাপপর্যায়ে পৌঁছেছে। ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে রোকেয়া হলের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এসব হল সামান্য ভূমিকম্প কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগ হলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হলগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। তবে আর্থিক কারণে এগুলো দ্রুত সংস্কার করা যাচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক দু’টি হল নির্মাণ করে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান করা হয়েছে। এ ছাড়া রোকেয়া হলের কম্পাউন্ডে একটি ১১ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কয়েকটি হলে ছোট পরিসরে সংস্কার কাজও চলছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নয়া দিগন্তকে বলেন, কিছু হল সংস্কার করা হচ্ছে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হলগুলো ভেঙে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে আর্থিক সঙ্কটের কারণে এসব কাজ দ্রুত করা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
No comments:
Post a Comment