বন্দুকযুদ্ধ নয়, বসতভিটার দেড় কাঠা জমির জন্য রাজধানীর কদমতলী থানার বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দিন তারেককে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। তারা বলেছে, এক নারী পুলিশ কর্মকর্তার ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রতিবেশী কয়েকজন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মেজবাহর বাবা আবু জাফর সিকদার এ অভিয
োগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে মা জয়নাব বেগম ছাড়াও পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আবু জাফর বলেন, ‘গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাত দুইটার দিকে বাসায় ঢুকে আমার ছেলেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপর বাসার সামনে তাকে বেদম মারধর করে হত্যা করে। পরদিন সকালে কথিত বন্দুকযুদ্ধ নাটক সাজিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ডিবি।’ তিনি বলেন, ‘মেজবাহর বিরুদ্ধে মামলা দূরে থাক, কোনো জিডি পর্যন্ত ছিল না। আমার ছেলে শিক্ষার্থী ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কোনো ধরনের অপকর্মের সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।’ আবু জাফর বলেন, কদমতলীর দনিয়ার তাঁর বসতভিটা জমি বিক্রি না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেশী খাইরুল আলম ও তাঁর পরিবার ডিবিকে দিয়ে মেজবাহকে হত্যা করিয়েছে। খাইরুলের স্ত্রী একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় ডিবির সাত সদস্য, তিন প্রতিবেশীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি নালিশি অভিযোগ করেছেন তিনি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি হবে। তবে এ ঘটনায় ডিবির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, মেজবাহ একজন অস্ত্রবাজ। কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীর প্রশ্রয়ে কদমতলী ও মাতুয়াইল এলাকায় অস্ত্র ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করতেন তিনি। তাঁকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মুগদার গ্রিন মডেল টাউন এলাকায় তাঁর কয়েকজন সহযোগী একত্র হবেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালালে সহযোগীরা ডিবি পুলিশকে লক্ষ৵ করে গুলি ছোড়ে। ডিবিও পাল্টা গুলি চালায়। এতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মেজবাহ নিহত হন। তবে তার বিরুদ্ধে আগের কোনো মামলা বা জিডি ছিল না বলে স্বীকার করে ডিবি। সংবাদ সম্মেলনে আবু জাফর আরও বলেন, সাড়ে পাঁচ কাঠা জমির ওপর বাড়ি করা হলে হাঁটার জন্য দরকার আরও জায়গা। এ কারণে খাইরুল ও তাঁর ভগ্নিপতি আবদুল আহাদ দীর্ঘদিন ধরে তাঁর দেড় কাঠা জমি বিক্রির জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তিনি তা বিক্রি করতে রাজি হচ্ছিলেন না। প্রস্তাব দিয়ে রাজি করাতে না পেরে তাঁরা হুমকি-ধমকির পথ বেছে নেন। ‘বিপদ হতে পারে’ বলে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ হত্যা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খাইরুল ও আবদুল আহাদ। তাঁরা দাবি করেন, আবু জাফরের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক ছিল। কেউ এখন আবু জাফরকে বিভ্রান্ত করছেন। যোগাযোগ করা হলে ডিবির উপকমিশনার (ডিসি) নাজমুল আলমও পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
No comments:
Post a Comment