সংসারে সচ্ছলতা আনতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেয় ওরা। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অবৈধ পথে ওরা যেতে চেয়েছিল মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু থাইল্যান্ডে গিয়ে আটকে যায় ভাগ্যের চাকা। ‘ক্রীতদাস’ হিসেবে বিক্রি হয় ওরা। এমন ১৭০ জনকে একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেছে থাই কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১২২ জন বাংলাদেশি। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে তাদের কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পুলি
শ। জানা গেছে, উন্নত চাকরির লোভ দেখিয়ে মানবপাচারকারীরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যায় গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ওই লোকজনকে। কক্সবাজার থেকে নৌকা ছাড়ার পর তাদের ওষুধ খাইয়ে, হাত-পা বেঁধে থাইল্যান্ড নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের থাইল্যান্ডের উপকূলে জঙ্গলের মধ্যে গোপন কিছু ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিন সপ্তাহ তাদের জঙ্গলে আটকে রাখা হয়। এরপর ‘ক্রীতদাস’ হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই শ্রমিকদের বিভিন্ন খামারে ও মাছ ধরার ব্যবসায় দাস শ্রমিকের মতো কাজ করানো হতো। গতকাল বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। উদ্ধার হওয়া আবদুর রহিমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, তাদের জঙ্গলে নিয়ে রাখা হয়েছিল, কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। সেই সময় তারা শুধু পাতা খেয়ে বেঁচে ছিল। এদিকে উদ্ধার হওয়া ১৭০ জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং আরো যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের উদ্ধার করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের একটি দল এ মুহূর্তে থাইল্যান্ডে রয়েছে। তারা এরই মধ্যে উদ্ধার হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রায় ভেঙে পড়েছে। তারা যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে যেতে চাইছে। থাইল্যান্ডের স্থানীয় কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা সেখানকার জঙ্গলে ‘দাস’ বেচাকেনা করছে। উদ্ধার হওয়া অবৈধ অভিবাসীদেরও সেই উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। থাই কর্তৃপক্ষ এই পাচারচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টিকে দেখছে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। যারা এই পাচারকারী চক্রের হোতা, তাদের অনেকেই প্রভাবশালী এবং উচ্চপর্যায়ে তাদের ভালো যোগাযোগ আছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে পুলিশের মধ্যে অনীহা আছে। এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকারের পক্ষে ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ১৭০ জনের মধ্যে ১২২ জন বাংলাদেশি বলে থাই কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ধারণা দিয়েছে। বাকিরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা হতে পারে। উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের আপাতত থাইল্যান্ডের থাংরা প্রদেশে রাখা হয়েছে। শহীদুল হক আরো বলেন, এ ধরনের মানবপাচারের ঘটনা আগেও ঘটেছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশকে ঘিরে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা যাতে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জাতীয়তা যাচাই করতে পারে সে জন্য থাই কর্তৃপক্ষের কাছে তারা অনুমতি চেয়েছেন। শহীদুল হক বলেন, যদি যাচাই করে দেখা যায যে এরা বাংলাদেশি, তখন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। থাই কর্তৃপক্ষ তাদের বিচারের মুখোমুখি দঁাঁড় করাবে না বলেই তিনি আশা করেন। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনেই তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান সচিব।
No comments:
Post a Comment