সম্ভাব্য ফলাফল তিনটি। বাংলাদেশের জয়, জিম্বাবুয়ের জয়, কিংবা ড্র। চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনে অপেক্ষা করছে কোন রোমাঞ্চ? ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তার সূত্র বলছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ শেষ দিনে এর যেকোনোটাই ঘটা সম্ভব। তবে সম্ভাবনার নিক্তিতে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লাটাকেই মনে হচ্ছে বেশি ভারী। জিততে হলে বাংলাদেশের চাই ৯ উইকেট, জিম্বাবুয়ের ৩৭৮ রান। উইকেটের আচরণে কাল যে সামান্য পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছ
িল সেটি বাস্তব হয়ে উঠলে হয়তো আজ প্রথম সম্ভাবনাটাই সত্যি হওয়ার কথা। ৩-০-তে সিরিজ জিতে জিম্বাবুয়েকে ধবলধোলাই করবে বাংলাদেশ দল। চতুর্থ ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সামনে ৩৫০-এর মতো লক্ষ্য দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের। সেটির জন্য কাল চা-বিরতির পর আরও ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করা হবে, সিদ্ধান্ত ছিল এমনই। কিন্তু উইকেট চতুর্থ দিনের বেশির ভাগ সময়ও যে রকম ব্যাটিং-সহায়ক হয়ে থাকল, বাংলাদেশ দল ৩৫০ রানের লক্ষ্য পেরিয়েও এগিয়ে গেল অনেকটা। টেস্টে মুমিনুল হকের চতুর্থ সেঞ্চুরির সুবাদে চা-বিরতির ৫৪ মিনিট পর ইনিংস ঘোষণার সময় দ্বিতীয় ইনিংসে দলের স্কোর ৫ উইকেটে ৩১৯। প্রথম ইনিংসের ১২৯ রানের লিডসহ জিম্বাবুয়ের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ৪৪৯ রানের। এই রান টপকে জেতা কতটা কঠিন তা বুঝতে পারবেন একটি মাত্র তথ্যেই। জিততে হলে জিম্বাবুয়েকে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার বিশ্ব রেকর্ডটাই লিখতে হবে নতুন করে। তবে বাংলাদেশের একটা রেকর্ড নতুন করে লেখা হয়ে গেছে কালই। এক টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে এত দিন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১২ সালে মিরপুরে করা ৭২৩। কালকের পর এখন রেকর্ডের অঙ্কটা ৮২২। কাল শেষবেলায় ১৯ ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ওপেনার ব্রায়ান চারির উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের রান ৭১। সিকান্দার রাজা ৪৩ আর হ্যামিল্টন মাসাকাদজা অপরাজিত ২৬ রানে। এই জুটির অবিচ্ছিন্ন থাকা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রথম ইনিংসের কথাই। টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেও ১ উইকেটে ১১৩ রান করে অবিচ্ছিন্ন ছিল রাজা-মাসাকাদজা জুটি। পরে তো তাঁদের ১৬০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলের রানটা হয়ে গেল ৩৭৪। জিম্বাবুয়ের সামনে যে বাংলাদেশ চতুর্থ ইনিংসে নিজেদের দেওয়া সর্বোচ্চ লক্ষ্যটা রাখতে পারল, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব মুমিনুল হকের। তিন নম্বরে নেমে ১৮৯ বলে ১৩১ রানে অপরাজিত মুমিনুল এ নিয়ে টানা নয় টেস্টে ফিফটির দেখা পেলেন, যার চারটিই পরিণত হয়েছে সেঞ্চুরিতে। মোহাম্মদ আশরাফুল ও তামিম ইকবালের ছয় টেস্ট সেঞ্চুরির পর মুমিনুলের চারটিই এখন বাংলাদেশের পক্ষে কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরি। কালকের ১৩ বাউন্ডারিতে সাজানো সেঞ্চুরিটি আরেকটা জায়গাতেও মুমিনুলকে নিয়ে গেছে অনেক ওপরে। কমপক্ষে ২০টি টেস্ট ইনিংস খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে রানের গড়ে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের পরই এখন তাঁর অবস্থান। ব্র্যাডম্যানের গড় ৯৯.৯৪, মুমিনুলের ৬৩.০৫। ব্যাটিংবান্ধব উইকেট পেয়ে সকাল থেকেই জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আগের দিনের বিনা উইকেটে ২৩ নিয়ে খেলতে নেমে ওপেনার ইমরুল কায়েসের উইকেটটি হারিয়ে লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশের রান হয়ে যায় ১২৪, তার মানে প্রথম সেশনেই যোগ হয়েছে ১০১। ততক্ষণে আরেক ওপেনার তামিম ইকবালের ফিফটি (৬৫) তো হয়েছেই, ফিফটি হয়ে যায় দিনের পঞ্চম ওভারে তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধা মুমিনুলেরও। ৬৯ বলে ফিফটি করা মুমিনুলের সেঞ্চুরি এসেছে ১৫৬ বলে, রাজাকে পয়েন্ট আর শর্ট থার্ডম্যানের মাঝ দিয়ে চার মেরে। দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে ১১৩ রানের জুটির পর তৃতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে হয়েছে ৫৫ রানের জুটি। পরে পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে মাত্র ৮ ওভার ২ বলে ৭১ রানের আরেকটি জুটি গড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তিন শর ওপরে রান করায় নেতৃত্ব দেন মুমিনুল। রাজাকে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে লং অনে নাতশাই মুশাঙ্গুয়ের হাতে মুশফিকের ক্যাচে ভাঙে এই জুটি। জিম্বাবুয়ের সামনে কমপক্ষে ৩৫০ রানের লিড দেওয়ার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা এত সহজে রান তুলতে পেরেছেন, সেখানে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরাও নিশ্চয়ই বসে থাকবেন না। আজ শেষ দিনেও উইকেট আগের মতোই ব্যাটিং-সহায়ক হলে একটা শেষ চেষ্টা নিশ্চয়ই করে দেখবে ব্রেন্ডন টেলরের দল। কাল চা-বিরতির পর আরও ৫৪ মিনিট খেলে ৪৪৮ রানের লিড নিল বাংলাদেশ দল সে জন্যই। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভাষায় যে রানটা ‘ভালো ও নিরাপদ।’ চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশ: ৫০৩ ও ৩১৯/৫ ডি. জিম্বাবুয়ে: ৩৭৪ ও ৭১/১
No comments:
Post a Comment