দিন বাধ্য করতেন তার সাথে অনৈতিক কাজ করতে। এমন কি বিয়ের পরও তার কাছে আসতে তিনি বাধ্য করতেন কোনো কোনো ছাত্রীকে। এভাবে দেড় শতাধিক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে দিনের পর দিন তিনি এ অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। পান্না মাস্টার একা নন, তিনি তার কোনো কোনো বন্ধুবান্ধবের সাথেও মিলিত হতে বাধ্য করতেন ছাত্রীদের। এসব গোপন ভিডিও পান্না মাস্টার পর্নোগ্রাফি চক্রের কাছে বিক্রি করে বড় অঙ্কের অর্থও উপার্জন করতেন। অবশেষে গত বছর জুন মাসে ফাঁস হয়ে গেছে পান্না মাস্টারের এ জঘন্য অপকর্ম এবং গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর সবুজবাগ অভয় বিনোদিনী উচ্চবিদ্যালয়ে আরেক পান্না মাস্টার ধরা পড়ার খবর ফাঁস হয়। মনিরুজ্জামান নামে ওই স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ত দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। একদিন শিক্ষক মনিরুজ্জামান ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে রাখেন। পরে ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে যান শিক্ষক। মনিরুজ্জামান একা ওই ছাত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে ক্ষান্ত হননি। পান্না মাস্টারের মতো তিনিও তার এক বন্ধুর সাথে মিলিত হতে বাধ্য করেছেন ওই ছাত্রীকে। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ছাত্রীটি। তখন গাজীপুরে একটি কিনিকে নিয়ে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়। ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের কাছে ঘটনা খুলে বলে এবং এর পরই ফাঁস হয় এ জঘন্য ঘটনা। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ফাঁস হয় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পরিমল জয়ধরকর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা। পরিমলের কাছে পাইভেট পড়ত দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। একদিন ওই ছাত্রীকে বাসায় ডেকে এনে ধর্ষণ করে পরিমল এবং তা ভিডিও করে রাখে। পরে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে আবারো এ কাজ করতে বাধ্য করে শিক্ষক পরিমল। ভিকারুননিসার মতো স্কুলে শিক্ষককর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হলে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষককর্তৃক এ ধরনের হয়রানির ঘটনা শহরে গ্রামে প্রায়ই ঘটছে। কিন্তু দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এসব ঘটনা গোপনই থেকে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছাত্রীরা নিজেরাই চেপে যায়। অনেক সময় পরিবার জানলেও এ নিয়ে নাড়াচাড়া করে না মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে। ঘটনা যখন দুর্ঘটনায় গড়ায় শুধু তখনই এসব গণমাধ্যমে উঠে আসে। গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক হুমায়ুন কবির শাহজাহানপুরে ভাড়া বাসায় কোচিং করানোর সময় একা পেয়ে এক ছাত্রীর সম্ভ্রমহানির চেষ্টা চালান। ছাত্রীর চিৎকারে বাড়িওয়ালা এবং তার স্ত্রী ছুটে এলে রক্ষা পায় ছাত্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ পাওয়ায় গত জুন মাসে তাকে স্কুল থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে এবং গ্রেফতার করা হয় ওই শিক্ষককে। শিক্ষককর্তৃক বিশেষ করে কোচিং প্রাইভেটে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রায় সব অভিভাবক। অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন তারা চাইলেও প্রাইভেট কোচিং বাদ দিতে পারেন না কারণ স্কুলে যা পড়ানো হয় তা দিয়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট তো দূরের কথা পাস নম্বরও জুটবে কি না সন্দেহ। শাপলা জানান, তার এক মেয়ে আইডিয়াল স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। পরিমলদের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি তার মেয়েকে এক মুহূর্তের জন্যও আলাদা করেন না। সব সময় কোচিংয়ে নিজে নিয়ে যান, নিয়ে আসেন এবং কোচিংয়ের সময়ে তিনি কখনো কোচিংয়ের ভেতর বা বাইরে বসে থাকেন। তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আমরা সন্তান নিয়ে অন্তহীন দুর্ভাবনায় থাকি সারাক্ষণ। আমরা সন্তানদের জন্য চাকরি করতে পারি না, ঠিকমতো রান্না করতে পারি না, ঘরসংসার দেখাশুনা করতে পারি না, কোনো আত্মীয়স্বজনের বাসায় যেতে পারি না, দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারি না। সব সময় তাদের পেছনে লেগে থাকতে হয়। স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা, কোচিংয়ে আনা-নেয়া করতে করতে সারা দিন পার হয়ে যায়। অভিভাবকরা জানান, শিক্ষকদের কারণে তাদের মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবেÑ এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে!
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Thursday, November 27, 2014
শিক্ষক যখন ভয়ঙ্কর:নয়াদিগন্ত
দিন বাধ্য করতেন তার সাথে অনৈতিক কাজ করতে। এমন কি বিয়ের পরও তার কাছে আসতে তিনি বাধ্য করতেন কোনো কোনো ছাত্রীকে। এভাবে দেড় শতাধিক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে দিনের পর দিন তিনি এ অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। পান্না মাস্টার একা নন, তিনি তার কোনো কোনো বন্ধুবান্ধবের সাথেও মিলিত হতে বাধ্য করতেন ছাত্রীদের। এসব গোপন ভিডিও পান্না মাস্টার পর্নোগ্রাফি চক্রের কাছে বিক্রি করে বড় অঙ্কের অর্থও উপার্জন করতেন। অবশেষে গত বছর জুন মাসে ফাঁস হয়ে গেছে পান্না মাস্টারের এ জঘন্য অপকর্ম এবং গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। গত ১৬ নভেম্বর রাজধানীর সবুজবাগ অভয় বিনোদিনী উচ্চবিদ্যালয়ে আরেক পান্না মাস্টার ধরা পড়ার খবর ফাঁস হয়। মনিরুজ্জামান নামে ওই স্কুলের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ত দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। একদিন শিক্ষক মনিরুজ্জামান ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে রাখেন। পরে ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে যান শিক্ষক। মনিরুজ্জামান একা ওই ছাত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে ক্ষান্ত হননি। পান্না মাস্টারের মতো তিনিও তার এক বন্ধুর সাথে মিলিত হতে বাধ্য করেছেন ওই ছাত্রীকে। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ছাত্রীটি। তখন গাজীপুরে একটি কিনিকে নিয়ে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়। ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের কাছে ঘটনা খুলে বলে এবং এর পরই ফাঁস হয় এ জঘন্য ঘটনা। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ফাঁস হয় রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক পরিমল জয়ধরকর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা। পরিমলের কাছে পাইভেট পড়ত দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী। একদিন ওই ছাত্রীকে বাসায় ডেকে এনে ধর্ষণ করে পরিমল এবং তা ভিডিও করে রাখে। পরে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে আবারো এ কাজ করতে বাধ্য করে শিক্ষক পরিমল। ভিকারুননিসার মতো স্কুলে শিক্ষককর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হলে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষককর্তৃক এ ধরনের হয়রানির ঘটনা শহরে গ্রামে প্রায়ই ঘটছে। কিন্তু দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এসব ঘটনা গোপনই থেকে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছাত্রীরা নিজেরাই চেপে যায়। অনেক সময় পরিবার জানলেও এ নিয়ে নাড়াচাড়া করে না মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে। ঘটনা যখন দুর্ঘটনায় গড়ায় শুধু তখনই এসব গণমাধ্যমে উঠে আসে। গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষক হুমায়ুন কবির শাহজাহানপুরে ভাড়া বাসায় কোচিং করানোর সময় একা পেয়ে এক ছাত্রীর সম্ভ্রমহানির চেষ্টা চালান। ছাত্রীর চিৎকারে বাড়িওয়ালা এবং তার স্ত্রী ছুটে এলে রক্ষা পায় ছাত্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ পাওয়ায় গত জুন মাসে তাকে স্কুল থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে এবং গ্রেফতার করা হয় ওই শিক্ষককে। শিক্ষককর্তৃক বিশেষ করে কোচিং প্রাইভেটে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রায় সব অভিভাবক। অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন তারা চাইলেও প্রাইভেট কোচিং বাদ দিতে পারেন না কারণ স্কুলে যা পড়ানো হয় তা দিয়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট তো দূরের কথা পাস নম্বরও জুটবে কি না সন্দেহ। শাপলা জানান, তার এক মেয়ে আইডিয়াল স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। পরিমলদের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি তার মেয়েকে এক মুহূর্তের জন্যও আলাদা করেন না। সব সময় কোচিংয়ে নিজে নিয়ে যান, নিয়ে আসেন এবং কোচিংয়ের সময়ে তিনি কখনো কোচিংয়ের ভেতর বা বাইরে বসে থাকেন। তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আমরা সন্তান নিয়ে অন্তহীন দুর্ভাবনায় থাকি সারাক্ষণ। আমরা সন্তানদের জন্য চাকরি করতে পারি না, ঠিকমতো রান্না করতে পারি না, ঘরসংসার দেখাশুনা করতে পারি না, কোনো আত্মীয়স্বজনের বাসায় যেতে পারি না, দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারি না। সব সময় তাদের পেছনে লেগে থাকতে হয়। স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা, কোচিংয়ে আনা-নেয়া করতে করতে সারা দিন পার হয়ে যায়। অভিভাবকরা জানান, শিক্ষকদের কারণে তাদের মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবেÑ এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment