Thursday, November 27, 2014

বিদেশী নাগরিকদের পেছনে ব্যয় বাড়ছে:নয়াদিগন্ত

দেশে হঠাৎ বিদেশী নাগরিকদের বেতনভাতা ব্যয় বেড়ে চলছে। যেকোনো সময়ের চেয়ে এ বেতনভাতা ব্যয় বেড়ে গেছে। আর এ সুবাদে সেবামূল্য খাতে ব্যয় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সেবা খাতে বিদেশী নাগরিকদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ২১৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার, আর বাংলাদেশ সেবা খাতে আয় করেছে ৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে
হিসাবে সেবা খাতে ঘাটতি রয়েছে ১৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।   বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সেবা খাতে অস্বাভাবিক হারে ব্যয় বেড়ে গেছে। সেই সাথে রফতানি আয় কমছে। পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ না বাড়লেও হঠাৎ আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে। এরই ফলে চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থা কিছু দিন চলতে থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাবে।   সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশে হঠাৎ করে বিদেশী নাগরিকদের কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। বিশেষ করে দেশের তৈরী পোশাক খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিবেশী দেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা চাকরিতে ঢুকে পড়ছে। এর ফলে বিদেশী নাগরিকদের পেছনে বেতনভাতা ব্যয় বেড়ে গেছে। আর এটাই উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা, প্রতি বছর দেশের শ্রমবাজারে নতুন ২০ থেকে ২৫ লাখ শ্রমিক আসছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অবকাঠামো সুবিধার অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মাঝে বর্ধিত হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে কর্মক্ষম শ্রমিকের সংখ্যা বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে সুযোগ বাড়ছে না। এ পরিস্থিতিতে বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্বের হার। এ সময়ে দেশের কর্মক্ষেত্রে বিদেশী শ্রমিক ঢুকে পড়লে বেকারত্বের হার আরো বেড়ে যাবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর হবে না।   বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এ সময়ে সেবা খাতে বিদেশী নাগরিকদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ২১৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার, আর বাংলাদেশ সেবা খাতে আয় করেছে ৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে সেবা খাতে ঘাটতি রয়েছে ১৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। প্রাইমারি আয় ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো আয়ে সেকেন্ডারি আয় হয়েছে ৪১১ কোটি ডলার। সেবা খাতে গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় ছিল ৮৮ কোটি ডলার, যা চলতি অর্থবছরে এসে অনেক বেড়ে গেছে।     চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এরপর গত দুই অর্থবছরে কখনো ঘাটতি দেখা যায়নি। ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত দাঁড়ায় ২৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ওই সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কট, ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা কারণে দেশে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ হয়নি। বর্তমানেও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত না হলেও তহবিল ভিন্নখাতে ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।   বিশ্লেষকদের মতে, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই চলতি হিসাবের এ চিত্র। কিন্তু আমদানি ব্যয় বাড়লেও প্রকৃত আমদানির চিত্র নিয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন। কেননা, আমদানির সাথে বিনিয়োগ গতির সামঞ্জস্য নেই। যে পরিমাণ মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির তথ্য আসছে সে অনুযায়ী বিনিয়োগ নেই। কাজেই আমদানির আড়ালে অর্থপাচার কিংবা আমদানি ব্যয় অতি মূল্যায়িত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত। তাদের মতে, ভবিষ্যতে চলতি হিসাবে ঘাটতি বাড়তে থাকলে তা রিজার্ভে চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির ওপরও প্রভাব ফেলবে।

No comments:

Post a Comment