আরেক দফা ব্যর্থতার গ্লানি বহন করতে যাচ্ছে দণি এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ক। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে আগামী ২৬-২৭ নভেম্বর ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মূল পর্ব শুরুর তিন দিন আগেই এই ব্যর্থতার খবর প্রকাশ হলো। বহুল আলোচিত যেই তিন চুক্তির জন্য এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনেক দিন ধরে আলোচিত হচ্ছিল সেই প্রধান তিন চুক্তি স্বার নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। গতকাল রোববার সকালে কাঠমান্ডুর হোট
েল সল্টিতে শুরু হওয়া সার্কের আট সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবদয় দুই দিনের বৈঠকের প্রথম দিন শেষে এ তথ্য জানা গেল। গত রাতে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কয়েকটি দেশের প্রস্তুতির অভাবেই এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে কোন কোন দেশের প্রস্তুতির অভাবে এমনটি হলো সে ব্যাপারে কিছু পরিষ্কার করেননি পররাষ্ট্র সচিব। তিনি শুধু বলেছেন, কয়েকটি দেশ এই চুক্তির জন্য এখনো প্রস্তুত নয়। যেই তিন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল তা হলো সার্ক বিদ্যুৎ সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য সার্ক আঞ্চলিক রেল সহযোগিতা চুক্তি এবং সার্ক পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচলবিষয়ক চুক্তি। এর আগে প্রথম দিনেই সাকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আট দেশের যুগ্ম-সচিবদের অংশগ্রহণে প্রোগ্রামিং কমিটির সভায় সার্কের ১১টির মধ্যে তিনটি কেন্দ্রই বাতিল এবং চারটিকে একীভূত করে একটি কেন্দ্র করার সুপারিশ করা হয়। এভাবে একের পর এক ব্যর্থতার রেকর্ড নিয়ে শেষ পর্যন্ত দণি এশীয় দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আঞ্চলিক উন্নয়নের ল্যমাত্রা কতটা অর্জিত হবে তা নিয়ে এখন শঙ্কা অনেকেরই। সার্ক পররাষ্ট্র সচিবদের ২ দিনের বৈঠক শুরু : দণি এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়েছে স্ট্যান্ডিং কমিটির দুই দিনের বৈঠক। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর হোটেল সল্টেতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক। সার্কের স্ট্যান্ডিং কমিটির ৪১তম এই সভার উদ্বোধন করেন কমিটির চেয়ারম্যান মালদ্বীপের প্রতিনিধি দলের প্রধান আলী নাসের মোহাম্মদ। প্রথা অনুযায়ী এরপর চলতি সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ নেপালের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব এবং নেপাল প্রতিনিধি দলের প্রধান শঙ্কর দাস বৈরাগীকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক চলবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত। দুই দিনের বৈঠকে আলোচনার জন্য বিশাল এজেন্ডা পেশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছেই গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামিং কমিটির সুপারিশ ও প্রতিবেদন পেশ করা হবে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন তহবিল সংক্রান্ত সার্কের কেবিনেট সচিবদের দ্বিতীয় দফা সভার প্রতিবেদনের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণও থাকছে দুই দিনের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে। এ ছাড়া দারিদ্র্যদূরীকরণ, খাদ্য-নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়ন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, যোগাযোগ, জ্বালানি, কৃষি, জৈব-প্রযুক্তি, সামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা, সন্ত্রাস, শিা এবং নেশা জাতীয় উপকরণের বিস্তার রোধসহ নানা বিষয়ে সমন্বিতকার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে এই বৈঠকে। সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসহযোগিতা বৃদ্ধির কলাকৌশল নির্ধারণ ও সার্ক অ্যাপেক্স বডিসহ (সহযোগী সংগঠন) সার্ককে ঘিরে যেসব সংস্থা কাজ করছে তাদের মধ্যে কাজের সমন্বয় সাধনসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা সংগঠন হিসেবে গোটা সার্ককে কিভাবে আরো শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে। দুই দিনের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক শেষে এর প্রতিবেদন সার্ক মন্ত্রীদের কাউন্সিলে পেশ করা হবে। সার্কভুক্ত আট দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে কাঠমান্ডুতে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। নেপালের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব ও সার্ক স্ট্যান্ডিং কমিটির নতুন চেয়ারম্যান শঙ্কর দাস বৈরাগীর বরাত দিয়ে দেশটির প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য হিমালয়ান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ট্যান্ডিং কমিটির দুই দিনের সভায় সার্কের মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা একটি বিশ্লেষণধর্মী মতামত পেশ করবেন। সেই মতামত প্রতিবেদনে থাপার মেয়াদকালে সার্কের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হতে পারে তার দিকনির্দেশনা থাকবে। চীনসহ সার্কের অবজারভার বা পর্যবেকের মর্যাদাপ্রাপ্ত ৯টি দেশের সাথে সার্ক সদস্যভুক্ত আট দেশের সম্পর্ক বর্তমানে কোন পর্যায়ে রয়েছে তা-ও স্থান পেয়েছে স্ট্যান্ডিং কমিটির সভার এজেন্ডায়। সার্ক ফোরামে ৯ পর্যবেক দেশের ভূমিকা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে দুই দিনের সভায়। শঙ্কর দাস বৈরাগীর বরাত দিয়ে দ্য হিমালয়ান টাইমস আরো জানায়, সার্কের সর্বোচ্চ সম্মেলনগুলোতে এ যাবত প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কতটা হয়েছে এবং এ অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় কিভাবে সার্কের সেবা পৌঁছে দেয়া যায় আলোচনায় তা-ও স্থান পাবে। Deeper Integration for Peace and Prosperity অর্থাৎ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য গভীর যৌথপ্রয়াসÑ এমন প্রতিপাদ্য সামনে রেখে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যাতে এই স্লোগানের সত্যিকারের বাস্তবায়ন হয় সেই বিষয়কে স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। এ অঞ্চলের আন্তঃবাণিজ্য ও সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ এবং জ্বালানি সহায়তাসংক্রান্ত যে চুক্তি এবারের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে স্বারিত হওয়ার কথা রয়েছে তা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় প্রস্তুত করা হবে।
No comments:
Post a Comment