Monday, November 24, 2014

সাতকরার সাতসতেরো:প্রথম অালো

বড় বড় ডাঁসা সাতকরায় ছেয়ে গেছে সিলেটের হাটবাজার। স্বাদে টক ও তিতা হলেও এ সবজি বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোরাঁ সবখানেই সমান জনপ্রিয়। সাধারণত গরুর মাংস, ছোট মাছ ও ডাল রান্নায় সবজি হিসেবে সাতকরার বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সাতকরা দিয়ে তৈরি আচারও সিলেটিদের প্রতিদিনকার খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত হয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী ভারতের করিমগঞ্জ অঞ্চলের পাহ
াড়-টিলায় সাতকরার চাষ হয়। সিলেটে এ সবজির চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও এখন সেটি দেশের অপরাপর অঞ্চলের ভোজনরসিক মানুষের ঘরেও পৌঁছে গেছে। এমনকি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে সাতকরা এখন বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানি হচ্ছে। তাই হয়তো কেউ কেউ ‘কমলালেবুর দেশ’ সিলেটকে ‘সাতকরার দেশ’ হিসেবেও চিনে থাকেন। সিলেটে সাতকরার সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট হচ্ছে নগরের সোবহানীঘাট এলাকায়। এখানে অন্তত ২০ জন ব্যবসায়ী কেবল সাতকরাই বিক্রি করে থাকেন। এঁদেরই একজন সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার এলাকার বাসিন্দা কামাল আহমদ। তিনি ১৫ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন। কামাল জানালেন, অতীতে কেবল সিলেটিদের মধ্যে এ সবজির চাহিদা ছিল, এখন সারা দেশেই এর চাহিদা। বিশেষ করে লন্ডনপ্রবাসী সিলেটিদের কাছে এ সবজির আবেদন ব্যাপক। পাইকারি দরে এক হালি সাতকরা ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে সিলেট নগরের বন্দরবাজার, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, পাঠানটোলা, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, পাঠানটোলা, আখালিয়াসহ বিভিন্ন সবজিবাজারে খুচরায় তা ৬০ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত বিকোয়। প্রচুর চাহিদা সত্ত্বেও সিলেটের বিয়ানীবাজার ও বড়লেখায় সাতকরার চাষ অনেকটাই কমে এসেছে। তাই পার্শ্ববর্তী ভারতের করিমগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার সাতকরা আমদানি করা হয়ে থাকে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। পাহাড়-টিলার বনজঙ্গলে সাতকরার চাষ হয়। গাছের উচ্চতা সাধারণত ২০ থেকে ২৫ ফুট পর্যন্ত। গোলাকার এ সবজি দেখতে অনেকটা ছোট জাম্বুরার মতো। কাঁচা অবস্থায় রং সবুজ এবং পাকলে হলুদ। দুই অবস্থাতেই এই সবজি রান্নায় ব্যবহার করা যায়। স্থানীয়ভাবে এ সবজি ‘হাতকরা’ নামে পরিচিত। গরুর মাংস, ছোট মাছ ও ডালে সাতকরা ব্যবহারের ফলে তরকারিতে আলাদা সুগন্ধ ও স্বাদ তৈরি হয়। খোসা দিয়ে তৈরি হয় আচার। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে সাতকরার আচার প্রস্তুত করছে কয়েকটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে কয়েক হাজার বোতলজাত আচার যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হচ্ছে। এসবের ক্রেতা মূলত প্রবাসী সিলেটিরা। সাধারণত বসন্ত ঋতুতে সাতকরার গাছে ফুল ফোটে এবং শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসে এ সবজি পরিপক্ব হয়। পরিপক্ব হওয়ার পর টানা কয়েক মাস এ সবজি সিলেটের বাজারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। তবে খোসা শুকিয়ে সারা বছরই এ সবজি সংরক্ষণ করা যায়। রান্নাশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘গৃহিণী’-এর প্রশিক্ষক কাজী তাসলীমা সায়েরা বলেন, ‘সাতকরা দিয়ে রান্নাবান্না করাটা সিলেটে একটা ঐতিহ্য ও রীতিতে পরিণত হয়েছে। এমনকি বিয়ে কিংবা উৎসব-পার্বণে পরিবেশন করা তরকারিতেও সাতকরার ব্যবহার করা হয়। খাবার সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যবহার সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।’

No comments:

Post a Comment