Sunday, November 16, 2014

বুকভরা কষ্ট নিয়ে বাঁচা:কালের কন্ঠ

‘আংকেল, আমার আব্বু আসছে না কেন? মাম্মি বলেছে, আব্বু ভারতে বেড়াতে গেছে। আমার জন্য খেলনা, চকোলেট ও সুন্দর জামা-প্যান্ট ন
িয়ে আসবে। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেছে, আব্বু তো আসছে না। কেন আসছে না বলতে পারো? আমার যে আর ভালো লাগছে না। মোবাইল করলে আব্বু তা-ও ধরে না। আমার জন্য কি আব্বুর খারাপ লাগে না?’ কথাগুলো বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে ছয় বছরের শিশু সাদমান শিহাব। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর গুম হন পুরান ঢাকার বই ব্যবসায়ী খালেদ হাসান সোহেল। তাঁর একমাত্র সন্তান শিহাব। কী কারণে তাঁকে গুম করা হয়েছে পরিবারের সদস্যরা বলতে পারছেন না। সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন সোহেল। তিনি না থাকায় পরিবারে নেমে এসেছে দুঃসহ দিন। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী পারভেজ হোসাইনকে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর র‌্যাব পরিচয়ে গুম করা হয়। পারভেজ না থাকায় পরিবারের সদস্যরা একরকম অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। ভাড়া দিতে না পেরে বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে হয়েছে তাঁর বাবা-মাকে। আর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে চলে গেছেন বাবার বাড়িতে। সোহেল ও পারভেজের মতো গুম হওয়া কয়েক শ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা দুঃসহ মানসিক যন্ত্রণায় ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। প্রতীক্ষায় আছেন সবাই। হঠাৎ করে কেউ এসে মা বলে, বাবা বলে ডেকে উঠবে। আদরের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে চুমু খাবেন। স্ত্রী অপেক্ষায় আছেন স্বামীর; বোন অপেক্ষায় আছেন ভাইয়ের। ফিরে এসে আবার হাল ধরবেন তাঁরা পরিবারের। সবার মুখে হাসি ফুটবে। কিন্তু কারো আশাই পূরণ হচ্ছে না। উল্টো গুম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করার নামে একটি চক্র ‘মুক্তিপণ’ আদায় করছে। সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে পরিবারগুলো। আইন ও সালিস কেন্দ্রের হিসাবে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৪ জন অপহৃত বা নিখোঁজ হন। আর ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময় ৫৮ জন অপহৃত বা নিখোঁজ হন। এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গুম হওয়ার পেছনে নিশ্চয় কেউ জড়িত আছে। জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচার করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আজ না হোক, কাল না হোক; কিন্তু একদিন রাষ্ট্রকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। দোষী ব্যক্তিরা একদিন না একদিন আইনের আওতায় অবশ্যই আসবে। যেমন আসতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের।’ তিনি বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারের দেখাশোনা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর কত মায়ের বুক খালি হবে জানি না। গুম করে ক্ষমতায় থাকা যায় না, এটা ইতিহাস বলে। এ পথ থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতেই হবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অপহরণ ও গুমের ঘটনা বেড়েই চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ বার্তা যাওয়ার পরও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সুযোগে র‌্যাব-পুলিশের নামে অপহরণ বাণিজ্যও বেড়েছে। মাঝে মাঝে অপহৃত কারো কারো লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে। অপহরণ হওয়ার পর মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে। এ জাতীয় অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ লোকজন আতঙ্কিত। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, সরকারের কোনো সংস্থা/বাহিনীর নির্দেশে রাজনৈতিক নেতাদের গুম করা হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গুপ্তহত্যা, গুমের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। গুমের ঘটনার দায়সারা তদন্ত হচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারে নেমে এসেছে দুঃসহ দিন। আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে সব কটি পরিবারে। অনেক পরিবারে খাবার জুটছে না। নবম শ্রেণির ছাত্র বড় সন্ত্রাসী! : কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা পাইলট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র রনি চৌধুরী (১৮)। গত বছরের ২৮ এপ্রিল লালবাগ এলাকা থেকে র‌্যাব পরিচয়ে তাকে অপহরণ করা হয়। রনির বাবা মোজাম্মেল হোসাইন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কী কারণে ওকে গুম করা হয়েছে জানি না। ও তো কোনো অপরাধী বা রাজনৈতিক দলের নেতা ছিল না। কেন আমার বুক খালি করা হয়েছে? রনির সঙ্গে নায়েম ও নির্জলকেও অপহরণ করা হয়। ২৮ দিন পর দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দুজন ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। তিন মাস আগে মোবাইল ফোনে এক লোক জানায়, ‘রনি আমাদের হেফাজতে আছে। বিকাশের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। তাদের কথায় বিশ্বাস করে দুই লাখ টাকা দিয়েছি। বরিশালের উজিরপুরে গিয়েছি আদরের ধনকে আনতে। কিন্তু সেখানে কাউকে পাইনি। তাকে ফিরে পেতে ফকির, কবিরাজের পেছনেও টাকা খরচ করতে হয়েছে।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘রনিকে খুঁজতে গিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। সংসারে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। দুই ছেলে জনি ও জামিল এবং মেয়ে শান্তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে ওরা। বাংলাবাজার পোস্ট অফিসে ছোট্ট একটি চাকরি করছি। আর পারছি না সংসার চালাতে। স্বাধীন দেশে কী করে একটি পরিবারকে ধ্বংস করা হয়, সে প্রশ্ন করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জীবিত বা মৃত, যেকোনো অবস্থায় হলেও আমার ছেলেকে ফেরত দিতে হবে। অন্তত তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে যেন বাবার দায়িত্ব পালন করতে পারি!’ বলেই তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। সন্তানহারা এই মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কোথায়? গুমের শিকার আবদুল কাদেরের ছবিই আজ তাঁর একমাত্র সম্বল। ছবি : কালের কণ্ঠ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন মাসুমের বাবা : গত ১১ সেপ্টেম্বর তিতুমীর কলেজের মেধাবী ছাত্র আবদুল কাদের ভুঁইয়া মাসুমের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্ত তিনি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। শুধু পরীক্ষা নয়, মাসুম আর কোনো দিন ঘরে ফিরে আসবেন কি না তা নিয়েও সংশয়ে তাঁর পরিবার। তাঁর মা আয়শা আক্তার, বাবা মো. রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া আশায় বুক বেঁধে আছেন যদিও- এই বুঝি তাঁদের সন্তান ঘরের দরজায় নক করে বলে উঠবে, ‘আব্বু, আম্মু- আমি ফিরে এসেছি।’ ছেলের শোকে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাবা রফিকুল ইসলাম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। মাসুমের ভাই সাদেকুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ভাইকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। সে তো কোনো দোষ করেনি। মামলা দূরের কথা, জিডি পর্যন্ত নেই তার বিরুদ্ধে। কেন তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম করে রাখা হয়েছে। পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মাসুম কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না।’ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর মাসুমকে অপহরণ করা হয়। সাদেকুল জানান, তার খোঁজ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। সন্ধান দেওয়ার কথা বলে দুই লাখ টাকা নিয়ে গেছে প্রতারকরা। পরিবারের সবাই বিপর্যস্ত। ৯০ বছরের দাদি এখনো জানেন না, মাসুম বাসায় নেই। বারবার জিজ্ঞাসা করেন, মাসুম কোথায় বেড়াতে গেছে? আক্ষেপ করে সাদেকুল বলেন, ‘র‌্যাব বা পুলিশের উচিত মাসুমের মতো আমাদের পরিবারের সবাইকে গুম করে ফেলা। তা হলেই সবাই শান্তি পাবে।’ এ কথা বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। শিশু আরোয়া ইসলামের হাজারো প্রশ্ন : ঢাকা মহানগর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সুমনকে র‌্যাব পরিচয়ে বারিধারা থেকে অপহরণ করা হয় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর। এখনো তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। সুমনের ছোট বোন সানজিদা ইসলাম জানান, উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি না থাকায় সংসার আজ বিপর্যস্ত। ঠিকভাবে সংসার চলছে না। সবাই অপেক্ষায় আছে ভাইয়া ফিরে এসে সংসারের হাল ধরবেন। ভাইয়া গুম হওয়ার পর এমন কোনো সংস্থা নেই যেখানে খোঁজ নেওয়া হয়নি। ‘মুক্তিপণ’ও দেওয়া হয়েছে অনেককে। এ পর্যন্ত সাত-আট লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। সুমনের দুই মেয়ে রায়তা ও আরোয়া প্রতিদিনই বাবাকে দেখার জন্য বায়না ধরে। তখন বাবার ছবি নিয়ে তাদের সামনে ধরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সানজিদা জানান, ‘ভাইয়ার ছবি ধরে কান্না শুরু করে আরোয়া। হাজারো প্রশ্ন তার। কোনো উত্তর দিতে পারি না। নীরবে চোখের জল ফেলে মনকে সান্ত্বনা দেই। এভাবেই আমাদের দিন কাটছে।’ ছেলে ফিরে আসবে এ আশায় প্রহর গুনছেন সুমনের মা হাজেরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘এখনো বিশ্বাস করছি, ও জীবিত আছে। আমার বুকে ফিরে আসবেই।... কারো বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই। শুধু আমার ছেলেকে ফেরত দিক।’ কাঁদতে কাঁদতে দুই হাত তুলে ছেলের জন্য মোনাজাত করেন তিনি। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের সদস্যরাই আমার বুকের ধনকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা বিষয়টি অস্বীকার করছে।’ ১৫ লাখ টাকা খরচ করেও রাসেলকে পাওয়া যায়নি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাজহারুল ইসলাম রাসেল নিখোঁজ হন গত বছরের ৪ ডিসেম্বর। তাঁকে ফেরত পেতে পরিবারের সদস্যরা জায়গাজমি ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন। প্রতারকদের ‘মুক্তিপণ’ বাবদ সাত লাখ টাকা দিয়েছেন তাঁরা। রাসেলের বড় ভাই মশিউর রহমান লোটাস বলেন, ‘ওর কোনো অপরাধ নেই। ও রাজনীতিও করে না। মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল্টের অপেক্ষায় ছিল ও। চাকরি খুঁজছিল; চেষ্টা করেছিল সংসারের হাল ধরতে। পুরো স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে। বিনা কারণে ওকে গুম করা হয়েছে। ভাইকে জীবিত না পেলে মা-বাবাকে বাঁচানো যাবে না। তাঁদের মিথ্যা আশ্বাস দিতে হচ্ছে।’ রাসেলের মা মোসাম্মাৎ মজিদা খাতুন ও বাবা মো. আমিনুল হক। তাঁরা পরিবারের অন্য সদস্যদের আশ্বাসেই ভর করে আছেন। লোটাস বলেন, ‘অভাব-অনটনের কারণে একমাত্র বোন নুসরাত জাহান লাকিকে বিয়ে দিতে পারছি না। কিভাবে সংসার চালাব, সে হিসাবও মেলাতে পারছি না।’ তিনি আকুতি জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের বাঁচান। আমার বাবা-মাকে বাঁচান। রাসেলকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিন।’ রাসেলের মা মজিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নেই। সে অপরাধ করে থাকলে আইনে তার শাস্তি হোক।’ তিনি বলেন, ‘গাছের পাতায় পাতায় আমি আমার ছেলের ছবি দেখি। গাছের দিকে তাকিয়ে থাকি।’ বাসাভাড়া দিতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে পারভেজের পরিবার : গত বছরের ২ ডিসেম্বর শাহবাগ থেকে র‌্যাব পরিচয়ে পুরান ঢাকার কাপড় ব্যবসায়ী পারভেজ হোসাইনকে অপহরণ করা হয়। আজও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর খোঁজ করতে গিয়ে অন্তত চার লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। পারভেজের স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, ‘ইসলামপুরে সাবিয়া ফেব্রিক্স নামের একটি কাপড়ের দোকান ছিল। পারভেজ নিখোঁজ হওয়ার পর দোকানটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। অভাব-অনটনের কারণে বংশালের মালিটোলার বাসা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শ্বশুর সাফি উদ্দিনসহ পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জ চলে গেছেন। আর আমি বাবার বাড়ি মাতুয়াইলে চলে এসেছি। অপহরণের সময় আমি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। ছেলে আরাফ পৃথিবীতে এলেও এখনো বাবার মুখ দেখেনি। আর তিন বছরের মেয়ে আদিবা ইসলাম শুধু বাবার খোঁজ করে। তাকে বলি, তোমার বাবা বিদেশ গেছে। আসতে অনেক দেরি হবে।’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলতে থাকেন, ‘পারভেজ বিএনপির মতাদর্শী ছিল। কিন্তু কোনো নেতা ছিল না। কী কারণে তাঁকে গুম করা হয়েছে, সরকারই ভালো বলতে পারবে। দুটি বাচ্চাকে কিভাবে মানুষ করব, ভেবে পাচ্ছি না।’ ‘বলেছিল ফেরত দিয়ে যাবে’ : নিখোঁজ আদনান চৌধুরীর বাবা রুহুল আমীন বলেন, ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে র‌্যাব পরিচয়ে আদনানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। নেওয়ার সময় বাসার প্রতিটি কক্ষ তছনছ করে ওরা। আমি বলেছিলাম, ‘ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন, তখন তারা বলেছিল, নিয়ে যাচ্ছি, ফেরত দিয়ে যাব। কিন্তু আজও আমার ছেলেকে ওরা ফেরত দেয়নি। সে বিএনপির সমর্থক ছিল। এটাই হয়তো তার কাল হয়েছে। ওকে খুঁজতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।’ শোকে কাতর মা : গত বছরের ২৮ নভেম্বর হলুদ ব্যবসায়ী সম্রাট মোল্লাকে কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। তাঁর মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘মিথ্যা অপরাধের অভিযোগে ছেলেকে নিয়ে গেছে পুলিশ। সে কোনো রাজনীতি করে না। টাকার অভাবে বাসা ছেড়ে দিয়ে বস্তিতে ঘর ভাড়া নিয়েছি। শ্যামবাজারের হলুদ-মরিচের দোকানটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিভাবে সংসার চালাব, ভাবতে পারছি না।’ যদি মেরে ফেলা হয়ে থাকে, তাহলে সন্তানের লাশ পুঁতে রাখার স্থানটি দেখিয়ে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি। অনেকে উপোস থাকছেন : তেজগাঁও কলেজের ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, নিজাম উদ্দিন মুন্না, পুরান ঢাকার সেলিম রেজা পিন্টু, ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের কলেজছাত্র কামরুজ্জামান টুটুল, নুরুজ্জামান আরিফ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মফিজ উদিন, বংশালের মাহফুজুর রহমান, হাবিবুল বাশার জাকির, হোসাইন ওরফে চঞ্চল, তৌফিক ইসলাম তুষার, সাভারের মোহন মিয়া ও মোহাম্মদ মোস্তফা, লাকসামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু, কেরানীগঞ্জের রফিকুল ইসলাম রাজা ও মতিউর রহমান অপহৃত হওয়ার পর থেকে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা একরকম অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। ফিরে পাওয়ার আশায় অনেকের পরিবার প্রতারকচক্রকে ‘মুক্তিপণ’ও দিয়েছে। মুন্নার বাবা সামসুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। একবেলা খেলে আরেক বেলা উপোস থাকতে হচ্ছে।’ একই কথা বলেন, রফিকুলের ভাই শফিকুল ইসলাম সজল। তিনি বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর এক প্রতারক বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ভাইকে আর পাইনি।’

No comments:

Post a Comment