Tuesday, November 4, 2014

ঝুলতে হবে ফাঁসিতেই:কালের কন্ঠ

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জ
ামানকে। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতের ভিত্তিতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়েছে বলে সংক্ষিপ্ত রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ রায়ের পর তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এর প্রায় দেড় মাস পর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হলো। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সংক্ষিপ্ত আদেশের অনুলিপি চেয়ে মৌখিকভাবে আবেদন করেন। আদালত বলেন, ‘পরে দেখা যাবে।’ এদিকে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের অনুলিপি চেয়ে গতকালই আবেদন করেছে আসামিপক্ষ। ‘রিভিউ করা হবে, তাই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি দরকার’- এ কথা উল্লেখ করে এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানান কামারুজ্জামানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো. মনির। এ ছাড়া রিভিউ আবেদন করা হবে বলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আপিল বিভাগে কামারুজ্জামানের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন গতকাল এ নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে জানান ওই আইনজীবী। দেশের সর্বোচ্চ আদালত কামারুজ্জামানের ফাঁসির নির্দেশ দেওয়ায় এখন আর তাঁর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বাধা নেই। শুধু রায় প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকর করবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এর আগে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। গতকাল সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি এজলাসে ওঠেন। প্রথমে কামারুজ্জামানের আপিল রায় ঘোষণার জন্য উপস্থাপন করা হয়। বিচারপতি এস কে সিনহা মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। গতকাল রায় শোনার জন্য সরকারপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজসহ বেশ কয়েকজন প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে উপস্থিত ছিলেন মো. শাহজাহান, তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী, শিশির মো. মনির প্রমুখ। এ ছাড়া কামারুজ্জামানের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে উপস্থিত ছিলেন। আরো উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়কারী আবদুল হান্নান খান, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল ইসলাম ও প্রায় ১০০ সাংবাদিক। সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়, কামারুজ্জামানের আপিল আংশিকভাবে মঞ্জুর করা হলো। আপিলকারী কামারুজ্জামানকে সর্বসম্মতভাবে ১ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হলো। অভিযোগ নম্বর ২ ও ৭-এর সাজা সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে বহাল রাখা হলো। ৩ নম্বর অভিযোগে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। ৪ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে সাজা দেওয়া হলো এবং সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো। বদিউজ্জামানকে হত্যার অভিযোগ থেকে খালাস : কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ছিল একাত্তরের ২৯ জুন শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রাম থেকে নৌবাহিনীর সদস্য মো. বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যার। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। গতকাল রায়ে আপিল বিভাগ এই অভিযোগ থেকে সর্বসম্মতভাবে তাঁকে খালাস দেন। অধ্যক্ষ হান্নানকে নির্যাতনের অভিযোগে সাজা বহাল : দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে প্রায় নগ্ন করে শহরের রাস্তায় নিয়ে নির্যাতন করার। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে সাজা বহাল রেখেছেন। সোহাগপুরে নির্বিচারে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল : তৃতীয় অভিযোগ ছিল শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামের ১৬৪ জনকে নির্বিচারে হত্যা এবং অসংখ্য নারী ধর্ষণের। ওই হত্যাকাণ্ডের পর এ গ্রামের নাম দেওয়া হয় বিধবাপল্লী। এই অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। আপিল বিভাগ সর্বসম্মতভাবে কামারুজ্জামানকে এই অভিযোগে শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। গোলাম মোস্তফা হত্যায় সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন : চতুর্থ অভিযোগ ছিল গোলাম মোস্তফা নামের একজনকে অপহরণ করে সুরেন্দ্র সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর শেরপুরে মৃগী নদীর ওপর শেরি ব্রিজে নিয়ে হত্যা করার। ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে এই অভিযোগে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দারাসহ ছয়জনকে হত্যায় যাবজ্জীবন বহাল : সপ্তম অভিযোগে উল্লেখ ছিল, ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের বাড়ি থেকে টেপা মিয়া ও তাঁর ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে অপহরণ করা হয়। এরপর দারাসহ ছয়জনকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ওই সাজা বহাল রাখেন। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগে উল্লেখ ছিল, ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনাক্যাম্পে বন্দি ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাকি তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ষষ্ঠ অভিযোগ বলা হয়, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে টুনু ও জাহাঙ্গীরকে নিয়ে নির্যাতনের পর হত্যা করেন কামারুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে খালাস দিয়েছিলেন। এ কারণে আপিল বিভাগের বিচার্য বিষয় ছিল না। মানব সভ্যতার বিজয় : গতকাল রায় ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে যে রায় দিয়েছেন, তাতে একাত্তরে শহীদদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। আর সেই সব শহীদ পরিবারও শান্তি পেয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে গোটা মানবজাতির বিজয় সূচিত হলো। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রিভিউর বিষয়টিও দেখতে হবে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এ রায় সরকার কার্যকর করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আসামিপক্ষের প্রতিক্রিয়া : রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মক্কেলের সাজা বহাল আছে, এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কিছু হতে পারে না। আমরা বেদনাহত, আমরা মর্মাহত। আমরা আমাদের পেশাগত দক্ষতার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি।’ আপিল বিভাগের এ রায়ের ওপর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি। কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী বলেন, ‘যে অপরাধে আমার পিতাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেসব অপরাধের সঙ্গে আমার পিতার সংশ্লিষ্টতা ছিল না। আমার পিতা ন্যায়বিচার পাননি।’ এটি তৃতীয় চূড়ান্ত রায় : এ রায়ের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের তৃতীয় মামলায় চূড়ান্ত রায় দিলেন আপিল বিভাগ। এর আগে আপিল বিভাগ আবদুল কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পরিবর্তন করে সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন আপিল বিভাগ। সাঈদী দণ্ড ভোগ করছেন। আর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয় গত বছর ১২ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত রায়েও প্রাণদণ্ড বহাল কামারুজ্জামানের : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ৬ জুন তিনি আপিল করেন। এই আপিলের ওপর গত ১৮ মে থেকে শুনানি শুরু হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উভয় পক্ষ ১৭ কার্যদিবস শুনানি করে। ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ : ট্রাইব্যুনালের রায়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, সাংগঠনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন স্তর বিন্যাসে বিরাজমান বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে অপরাধের দায় নিরূপণ বিষয়ে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি- ‘অধীনস্থদের দ্বারা অপরাধের দায় ঊর্ধ্বতন অবস্থানে যিনি বিরাজ করেন, তার ওপর সরাসরি বর্তায়।’ এই প্রতিষ্ঠিত ধারণা ও মূলনীতি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ধারা ৪(২)-এ উল্লেখ রয়েছে। গণহত্যা, গণহত্যা সংঘটনে ষড়যন্ত্র, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যা, ব্যাপক নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করা, ধর্ষণ, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে ক্রমাগত নির্যাতনের সুপিরিয়র (ঊর্ধ্বতন) হিসেবে সব অপরাধের একক ও যৌথ দায় কামারুজ্জামানের ওপর বর্তায়। আসামি কামারুজ্জামান একাত্তরে আলবদর বাহিনীর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান হিসেবে ঊর্ধ্বতন অবস্থানে থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগতভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ধারা ৩(২) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য একাধিক অপরাধ সংঘটন করেছেন। ভয়ংকর আলবদর : কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলায় যেসব সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁরা নিরীহ স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর তাঁর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন। রায়েও বলা হয়েছে, আলবদর নেতা হওয়ার পর তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায় ইসলামী ছাত্রসংঘের তরুণ সদস্যদের নিয়ে বিরাট বাহিনী গঠন করেন। তাদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পরে ভয়াবহ অত্যাচার চালান নিরীহ বাঙালিদের ওপর। সাক্ষীদের বক্তব্যে উঠে আসে, কামারুজ্জামান আলবদর কমান্ডার হিসেবে বৃহত্তর ময়মনসিংহে দুটি ক্যাম্প পরিচালনা করেন। এর একটি ছিল ময়মনসিংহ শহরে, আরেকটি শেরপুর শহরে। সেখানে নিরীহ বাঙালিদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যা করা হতো। শেরপুর শহরে ‘সুরেন সাহা হাউস’ ছিল আলবদর ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পের একজন দারোয়ান ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে নিরীহ জনগণের ওপর কামারুজ্জামানের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। ওই সাক্ষী সাত মাস ওই ক্যাম্পের দারোয়ান হিসেবে কাজ করেছেন উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যে বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের নির্যাতনে প্রত্যক্ষ মদদ ছিল কামারুজ্জামানের।’ অন্য সাক্ষীরাও কামারুজ্জামানের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। কামারুজ্জামান ভানটিয়া সেনাক্যাম্প, আহমদনগর সেনাক্যাম্পসহ সব সেনাক্যাম্পে যাতায়াত করে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করতেন বলে সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে আসে। সোহাগপুরের একটি গ্রামকে পুরুষশূন্য করে দেয় কামারুজ্জামান ও তাঁর সহযোগী আলবদররা। সেখানকার ১৬৪ জনকে হত্যা করা হয়। অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়। এসবের বর্ণনা দেন সাক্ষীরা। মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যার একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই কামারুজ্জামানকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। ওই বছরের ৪ জুন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ২ নম্বর ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১৮ জন এবং কামারুজ্জামানের পক্ষে তিনি নিজে ও তাঁর ছেলেসহ পাঁচজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

No comments:

Post a Comment