১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, খালেদ মোশাররফের পাল্টা অভ্যুত্থানের পর চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্রে
রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ। বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজররা বাংলাদেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে চলে যাওয়ার পর তড়িঘড়ি করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ পাঠান মোশতাক। পরিস্থিতি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানান। প্রাণ বাঁচানোর প্রয়োজনে মোশতাকের জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ডেভিস বোস্টারকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে খুনি মেজররা দেশ ছাড়ার আগে জেলহত্যার কথা জানতেন না খালেদ মোশাররফ। অভ্যুত্থানের তিন দিনের মাথায় পাল্টা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে তাঁর বিপক্ষে ‘ভারতপন্থী’ প্রচারণাও জোরালো হয়ে উঠেছিল। নিউ ইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক বি জেড খসরুর ‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক’ গ্রন্থে এসব বিষয় উঠে এসেছে। নয়াদিল্লির রূপা পাবলিকেশনস এ বছরই ওই বইটি প্রকাশ করে। এর আগে খসরু ‘মিথস অ্যান্ড ফ্যাক্টস বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার, হাউ ইন্ডিয়া, চায়না অ্যান্ড ইউএসএসআর শেইপড দ্য আউটকাম’ নামে গ্রন্থ লিখেছিলেন। ‘দ্য বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু অ্যান্ড দ্য সিআইএ লিংক’ গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের (ক্যু) আগাম ইঙ্গিত পেয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২১ অক্টোবর ও ৩ নভেম্বর। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে উৎখাত করা মেজরদের সঙ্গে মোশাররফের বিরোধ শুরু হয় ৩ নভেম্বরের প্রথম প্রহরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর কয়েকজন সহকর্মীর পদোন্নতি হলেও খালেদ মোশাররফের পদোন্নতি হয়নি। এতে তিনি বিরক্ত হন। যে মেজররা খন্দকার মোশতাক আহমদকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়েছিলেন তাঁরাই মোশাররফকে বরখাস্ত করেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়েছিল, ‘মোশাররফ বা আরো অনেকে ওই বিরোধ সূচনা করেছিলেন কি না সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। বিশ্বাসযোগ্য একটি সূত্র আমাদের বলেছে যে তিনি কেবল তাঁর অধীনস্থদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁর অধীনস্থরাই মোশতাক সরকারে ওই মেজরদের বিশেষ ভূমিকা শেষ করতে চেয়েছিলেন। ওই মেজরদের ভূমিকা অনেক সামরিক কর্মকর্তার হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’ ওই সূত্রের বরাত দিয়ে তারবার্তায় আরো বলা হয়েছিল, খালেদ মোশাররফের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বড় ধরনের রক্তপাত ছাড়াই অধীনদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। নিজের মহিমার বিষয়ে তিনি সজাগ ছিলেন। মোশাররফ ও তাঁর মিত্ররা ৩ নভেম্বর ভোরে বঙ্গভবনের আশপাশের নিয়ন্ত্রণ নেন। রাষ্ট্রপতি মোশতাককে চারটি শর্ত দেন মোশাররফ- ১. চিফ অব স্টাফ (সেনাপ্রধান) পদ থেকে জিয়াউর রহমানকে সরিয়ে তাঁকে (মোশাররফ) সে পদে বসানো, ২. মেজরদের নিয়মিত সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার আওতায় আনা, ৩. সরকার অনুগত ট্যাংক বাহিনীকে নিরস্ত্রীকরণ এবং ৪. রাষ্ট্রপতি পদে মোশতাককে বহাল রাখা। অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা থেকে সরে যান মোশতাক, সর্বোপরি তিনি চেয়েছিলেন রক্তপাত এড়াতে। তাঁর আশঙ্কা ছিল, রক্তপাত হলে ভারতের হস্তক্ষেপের ঝুঁকি বাড়বে। মোশাররফের সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়েন। সেই সমঝোতার আলোকেই মোশতাককে ক্ষমতায় বসানো মেজর ও তাঁর সহকর্মীদের দেশ ছাড়তে হয়েছিল। ওই সমঝোতার আগে মোশতাক কুমিল্লা সেনানিবাসের সেনাবাহিনীর কাছে সাহায্য চান। কিন্তু কুমিল্লার অধিনায়ক তা নাকচ করে বলেন, তিনি কেবল চিফ অব আর্মি স্টাফ (জিয়া, তখন তিনি বন্দি) বা চিফ অব জেনারেল স্টাফের (মোশাররফ) আদেশ মানবেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার নেতার হত্যার ঘটনা ছিল সম্ভাব্য অন্য পরিকল্পনার একটি অংশ। মোশতাক নিহত হলে আওয়ামী লীগে তাঁর সহকর্মী, রাজনৈতিক বিরোধীদের মেরে ফেলার কথা ছিল। এ তালিকায় ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী কামারুজ্জামান। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়েছিল, ‘এক বা একাধিক মেজরের নির্দেশে সোমবার (১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর) ভোরে ঢাকা কারাগারে ওই নেতাদের হত্যা করা হয়েছে।’ তারবার্তায় আরো বলা হয়, ‘জেলহত্যার ঘটনায় জড়িত মেজরদের দেশ ছাড়ার ব্যাপারে মোশাররফের রহস্যময় মৌন সম্মতি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। অন্য একটি পক্ষ বলছে, সোমবার রাতে মেজরদের নিয়ে বিমানের ঢাকা ছাড়ার কথা তিনি জানতেন না। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, ওই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ভারতপন্থী সরকারের নেতাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ ১৯৭৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সায়েম বলেছেন, মেজরদের বাংলাদেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার সময় মোশাররফ জেলহত্যার বিষয়ে জানতেন না। ঘটনা জানার পর হতভম্ব মোশাররফ সায়েমের কাছে ছুটে গিয়ে বলেছিলেন, ‘স্যার, এটি কিভাবে হলো?’ জেলহত্যার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুরো মন্ত্রিসভা মোশতাকের অধীনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে জিয়াউর রহমান মোশতাককে রাষ্ট্রপতি পদে থাকার আহ্বান জানালে এ কারণে তিনিও থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। মেজরদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণে মোশাররফের অভ্যুত্থানের পর শাহ মোয়াজ্জেম ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাহ মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারের কারণ তেমন স্পষ্ট ছিল না। তবে তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে আগস্টের অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা জানতেন সন্দেহে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে থাকতে পারেন। ৩ নভেম্বর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে মোশতাক যখন মোশাররফের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন তখন তাঁর (মোশতাক) মুখ্যসচিব মাহবুবুল আলম চাষী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিস বোস্টারকে জানান, পরিস্থিতির প্রয়োজনে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে কি না তা জানতে চেয়েছেন মোশতাক। কয়েকজন বলতে ফারুক ও রশীদের কথা বলছিলেন মুখ্য সচিব চাষী। ওয়াশিংটনের নির্দেশনায় রাষ্ট্রদূত বোস্টার মুখ্য সচিব চাষীকে জানান, ‘বিদেশে আশ্রয় দেওয়া আমাদের স্বাভাবিক চর্চার মধ্যে পড়ে না। আর এ কারণে তাঁকে (মোশতাক) আশাব্যঞ্জক উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় ও রাষ্ট্রপতির নির্দেশে তাঁর মুখ্য সচিব এর খোঁজ নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বোস্টার এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজি হন। চাষী বলেন, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। বোস্টার জানতে চান, কতটা সময় আছে। জবাবে মাহবুবুল আলম চাষী বলেন, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা আর ওয়াশিংটন সময় ৩ নভেম্বর সকাল ৬টা ১৮ মিনিটের মধ্যে তিনি উত্তর পেতে চান। এরপর চাষী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে জানান, ‘দুই মেজর (ফারুক ও রশীদ) ছাড়াও রাষ্ট্রপতি মোশতাক দেশ ছাড়তে চান।’ রাষ্ট্রদূত বোস্টার খন্দকার মোশতাকের মুখ্য সচিব চাষীকে আবারও বিষয়টি বলতে বলেন। চাষী বলেন, রাষ্ট্রপতি মোশতাক ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী ওই সময়ের পর রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ জানাতে চান। বোস্টার ওয়াশিংটনকে এসব কথা জানান। ৫ মিনিট পর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে মুখ্য সচিব চাষী রাষ্ট্রদূত বোস্টারকে টেলিফোন করে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে চলমান আলোচনার কথা জানান। বোস্টারের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার আগে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে সামরিক আশ্রয় নিতে চান। তৃতীয় দেশটি যে যুক্তরাষ্ট্রই হতে হবে এমন নয়। তিনি এ ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের কথাও বলেন। এর বাইরে অন্য কোনো দেশকে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কি না বোস্টার জানতে চাইলে চাষী তা নাকচ করেন। নির্দেশনা চেয়ে হেনরি কিসিঞ্জারকে পাঠানো তারবার্তায় বোস্টার লিখেছেন, ‘তিনি (চাষী) বলেছেন, অতীতে প্রেসিডেন্ট (যুক্তরাষ্ট্রের) ও তাঁর সরকারের কাছে সহমর্মিতা পাওয়ার কথা মনে রেখেই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন। আমি তাঁকে (চাষী) সতর্ক করে বলেছি, এ ধরনের অনুরোধ বিবেচনা করার জন্য এটি খুব অল্প সময়। এর পরও আমি যত দ্রুত সম্ভব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করব।’ বোস্টার যখন কিসিঞ্জারের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন তখন রাত ৮টা ২০ মিনিটে খুনি মেজররা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন। বোস্টার মুখ্য সচিব চাষীকে ফোন করে জানতে চান, ওই মেজরদের দেশ ছাড়ার পর আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধটি কি এখনো আছে? চাষী উত্তর দেন, ওই অনুরোধের অংশ হিসেবেই মেজররা দেশ ছেড়েছেন। রাষ্ট্রপতি মোশতাকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধটি এখনো বহাল আছে কি না তাও বড় প্রশ্ন। চাষী বলেন, ভবিষ্যতে যে দেশ চালাবেন তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করেই রাষ্ট্রপতি মোশতাক এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তা না হলে মোশতাককে সুরক্ষা দেওয়া নিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বিরোধ দেখা দিতে পারে। ‘আগামীতে যে দেশ চালাবেন’ এমন শব্দগুচ্ছের বিষয়ে বোস্টার জানতে চাইলে মাহবুবুল আলম চাষী বলেন, এ পর্যায়ে এর বেশি ব্যাখ্যা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিনি আশ্বাস দেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় এমন ব্যবস্থাই করা হবে। এরপর কিসিঞ্জারকে পাঠানো তারবার্তায় বোস্টার রাষ্ট্রপতি মোশতাকের আশ্রয়ের অনুরোধের বিষয়ে দ্রুত নির্দেশনা চান। কিসিঞ্জার বোস্টারের কাছে নির্দেশনা পাঠান। এতে বলা হয়, ‘আপনি (বোস্টার) রাষ্ট্রপতি মোশতাককে আশ্বাস দিতে পারেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাঁর ব্যক্তিগত কল্যাণের বিষয়ে সজাগ। রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আপনি মোশতাককে বলতে পারেন, তিনি চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে পারেন। আপনি আপনার বিচার বিবেচনা অনুযায়ী তাঁকে এ-ও জানাতে পারেন যে, জীবন বিপন্ন হলে আমরা তাঁকে দূতাবাসেও সাময়িক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত।’ বাংলাদেশ ছাড়ার আগে মোশতাক ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতেও বোস্টারকে নির্দেশনা দেন কিসিঞ্জার। তবে বাংলাদেশ ছাড়তে মোশতাক যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিমান পাঠানোর অনুরোধে করেছিলেন তাতে বিচলিত হয়েছিলেন তিনি। বোস্টারকে কিসিঞ্জার বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এর (বিমান পাঠানো) প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতায় যাঁরা আসবেন তাঁরা যদি মোশতাককে দেশের বাইরে পাঠাতে চান তাহলে সামরিক ও বেসামরিক বিমান আছে। মোশতাকের নির্বাসন বিষয়ে সমঝোতা না হলে কর্তৃপক্ষের সম্মতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিমান পাঠাতে পারবে না। মেজরদের দেশ ছাড়ার ফলে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছিল। খন্দকার মোশতাক ও খালেদ মোশাররফ ৪ ও ৫ নভেম্বর আলোচনা চালিয়ে যান। ওই আলোচনার ফলে ৪ নভেম্বর রাতে মোশাররফ সেনাপ্রধান হন এবং ৬ নভেম্বর ভোরে ক্ষমতা ছাড়েন মোশতাক। পাশাপাশি নির্দলীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সায়েম রাষ্ট্রপতি হন এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। জেল হত্যার প্রতিবাদে মন্ত্রিসভার সদস্যরা আগেই পদত্যাগ করেছেন। ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর মোশাররফ নিজেকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেন। মেজরদের দেশ ত্যাগ ও জিয়াকে বরখাস্ত করার পর তিনি সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিলেন। তবে তা স্থায়ী হয়নি। ৪ নভেম্বর অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর আসতে থাকে যে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও যশোর থেকে জিয়ার অনুগত সেনারা রাজধানী ঢাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মোশাররফের এই ক্ষমতা গ্রহণ যে সেনাবাহিনীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি তা খুব শিগগিরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মোশাররফের চেয়ে অনেক বেশি সমর্থন পান জিয়াউর রহমান। মোশাররফ ভারতঘেঁষা বলেই ব্যাপকভাবে ধারণা ছিল। ৪ নভেম্বর শেখ মুজিবের পক্ষে মিছিল সমাবেশ হয়। জেল হত্যার প্রতিবাদে ৫ নভেম্বর সাধারণ ধর্মঘট মোশাররফকে নিয়ে ওই ধারণাকে আরো পোক্ত করে। ৬ নভেম্বর ভোরে সেনাবাহিনীর নিম্নপদস্থরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এরপর মোশাররফ দ্রুত ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার শিকার হন। ৬ নভেম্বর সারা রাত ও ৭ নভেম্বর সারা দিন রাজধানীজুড়ে গুলির শব্দ শোনা যায়। এর বেশির ভাগই ছিল মোশাররফকে উৎখাতের ঘটনা উদ্যাপন।
No comments:
Post a Comment