ভৈরবে বিএডিসি গুদাম থেকে ৬০ হাজার বস্তা (৩ হাজার মেট্রিক টন) বিভিন্ন জাতের সার গায়েব হয়ে গেছে। ওই সারের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। ধারণা করা হচ্ছে উল্লেখিত সার গুদামরক্ষক মো. খোরশেদ আহমেদ বিক্রি করে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওই ঘটনার সঙ্গে লেবার সর্দার মো. রতন, নরসিংদী সদর উপজেলার সার ডিলার প্রতিনিধি মো. হারিছুল হক, বেলাব উপজেলার সার ডিলার মো. সবুজ জড়িত রয়েছেন বলে বিএডিসি কর্মকর্তারা
সন্দেহ করছেন। ভৈরব বিএডিসির ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) মো. রেজাউল করিম গুদামে সার ঘাটতির বিষয়টি গত ১১ নভেম্বর তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিশোরগঞ্জ বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক (সার) শেখ মো. শহিদুল্লাকে একটি অফিস চিঠির মাধ্যমে অবগত করেছেন। ওই পত্রে গুদামে ২ হাজার ৯শ’ মেট্রিক টন সারের ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টিএসপি ১ হাজার ২শ’ মেট্রিক টন (২৪ হাজার বস্তা) , ডিএপি ১শ’ মেট্রিক টন (২ হাজার বস্তা) ও এমওপি ১ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন (৩২ হাজার বস্তা)। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি অনেক আগে ঘটেছে। বর্তমানে গুদামে সারের মজুদ কমে যাওয়ায় এবং ৪ জেলার ডিলারদের মাসিক বরাদ্দের সার সরবরাহ দিতে না পারায় এই ভয়াবহ সার কেলেংকারির ঘটনাটি প্রকাশিত হয়েছে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালকের (সার) চিঠি পাওয়ার পর কিশোরগঞ্জ বিএডিসির যুগ্মপরিচালক এ বিষয়ে গুদামরক্ষক মো. খোরশেদ আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক (সার) মো. রেজাউল করিমকে ১২ নভেম্বর পৃথকভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন। তারা দু’জনেই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে এ ঘটনা তদন্তে কিশোরগঞ্জ বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক (সার) শেখ মো. শহিদুল্লাহ গত শুক্রবার সকালে ভৈরব গুদামে আসেন। তদন্ত করার পর তিনি বলেন, ভৈরবের বিএডিসির গুদামে প্রায় ৬০ হাজার বস্তা বিভিন্ন জাতের সার ঘাটতি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গুদামরক্ষক মো. খোরশেদ আহমেদ এ সার আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে সার গায়েবের ওই ঘটনাটি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসককে জানানো হয়নি। শুধু বিএডিসির প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে যুগ্মপরিচালক মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। জানা গেছে, গত ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএডিসি ভৈরব সারের গুদামে টিএসপি ১ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ১ হাজার ৮শ’ মেট্রিক টন ও এমওপি ১ হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন সার মজুদ থাকার কথা। বর্তমান রবি মৌসুমে কৃষকদের নন-ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি থাকে। ফলে কৃষি অধিদফতর থেকে সারের ডিলারদের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ চাহিদা অনুযায়ী নন-ইউরিয়া সার ডিলারদের বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব বরাদ্দের সার বেসরকারি আমদানিকারক ও বিএডিসি গুদাম থেকে সরবরাহ দেয়া হয়। ভৈরব বিএডিসি গুদাম থেকে বর্তমানে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রায় ২০টি উপজেলায় ডিলারদের বরাদ্দকৃত নন-ইউরিয়া সার সরবরাহ দেয়া হয়। গুদামে এমওপি সারের মজুদ কমে যাওয়ায় কেলেংকারির এই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। কারণ অফিসের হিসাব অনুযায়ী ১ হাজার ৯১৭ মে. টন মজুদ থাকার কথা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাস্তবে গুদামে মজুদ ছিল ২২৫ মেট্রিক টন। গত সপ্তাহে অধিকসংখ্যক ডিলার এমওপি সার নিতে এসে গুদামে সার না থাকায় অনেকেই সার নিতে পারেনি। উল্লেখ্য, ভৈরব বিএডিসি সারের গুদামটির কার্যক্রম ১৯৯৫ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে ২০০৭ সালে আবার এর কার্যক্রম শুরু হলে মো. খোরশেদ আহমেদ প্রথম থেকে এখনও পর্যন্ত গুদামরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গুদামরক্ষক মো. খোরশেদ আহমেদকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি এস আলম বলেন, ‘এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের কেউ আমাকে কিছুই জানাননি। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
No comments:
Post a Comment