রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল ইসলাম লিলনকে (৫৩) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নগরীর চৌদ্দপায়া এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের আবাসিক এলাকা বিহাসে নিজ বাসার সামনে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে লোকজন উদ্ধার করে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) নিয়ে গেলে কর্তব্যরত
চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অধ্যাপক ড. শফিউলকে হত্যার প্রতিবাদ, জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোট এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভও করে তারা। রাত আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এর আগে রামেক হাসপাতালেও বিক্ষোভ করে বিভাগের শিক্ষার্থী ও ড. শফিউলের স্বজনরা। একই দাবিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মজুমদার যুগান্তরকে জানিয়েছেন, কালকের মধ্যে (আজ রোববার) দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন তারা। রামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার (সিএ) ডা. মমতাজ যুগান্তরকে জানান, ‘শফিউল ইসলামের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর জখম ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’ নিহতের স্বজনরা দাবি করেছেন জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরাই অধ্যাপক শফিউল আলমকে হত্যা করেছে। নিহত শিক্ষকের ভগ্নিপতি রফিকুল বারী মুকুল যুগান্তরকে বলেন, তার ওপর জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কার কথা তিনি মাঝে মাঝেই তাদের বলতেন। মুকুল জানান, ড. শফিউল আগামী ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নগরীর মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে অধ্যাপক শফিউলের বাসার দূরত্ব একশ’ গজ বা একটু বেশি। বাইরে থেকে সেখানে ফেরার পথে বাড়ির সামনে নির্জন জায়গায় কে বা কারা তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি চাপাতি ও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেছে।’ ওসি বলেন, ‘তিনি লালনভক্ত মানুষ ছিলেন। লালনকে নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন তিনি। পারিবারিক কিছু ঝামেলাও তার ছিল বলে প্রাথমিক খোঁজখবরে জানা গেছে। তবে কারা কেন তার ওপর হামলা চালিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তদন্ত না করে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।’ শফিউল ইসলামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হিয়াতপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আক্তারুজ্জামান সরকার। তার একমাত্র ছেলে জেভিন হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান জানান, ‘বিহাসের সামনের রাস্তা দিয়ে ড. শফিউল ইসলাম মোটরসাইকেলে করে বাসায় যাচ্ছিলেন। এ সময় কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার গতিরোধ করে অতর্কিত তার ওপর হামলা চালায়।’ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রামেক হাসপাতাল থেকে ড. শফিউলের লাশ গ্রহণ করেন অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান। এ প্রতিবেদন লেখার সময় তিনি লাশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছিলেন। এখানেই স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জেভিন হোসেন জানান, আজ সকালে বগুড়ার হিয়াতপুর গ্রামে তাকে (ড. শফিউল) দাফন করা হবে। এর আগে ২০০৬ সালের ১ ফেব্র“য়ারি ক্যাম্পাসের বাসায় খুন হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহের। তারও আগে ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে নৃশংসভাবে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ইউনূস।
No comments:
Post a Comment