Tuesday, November 25, 2014

লতিফ সিদ্দিকী যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার:প্রথম অালো

মন্ত্রিসভা ও ক্ষমতাসীন দল থেকে অপসারিত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী হঠাৎ করে দেশে ফেরায় নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাঁকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শককে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম
আলোকে জানান, লতিফকে গ্রেপ্তারের জন্য খোঁজা হচ্ছে। এর আগে গতকাল সোমবার হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেয়। কাল বুধবারের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হবে বলেও তারা ঘোষণা দেয়। সংসদের অনির্ধারিত আলোচনাতেও তাঁর সদস্যপদ বাতিল ও গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে। ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় মন্ত্রিসভা ও দল থেকে অপসারিত হন লতিফ সিদ্দিকী। একই সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা ও দেশের ১৮টি জেলায় ২২টি মামলা হয়। নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিটি মামলায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর গত রোববার রাতে তিনি ঢাকায় ফিরে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। গতকাল সকাল থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করা না-করা নিয়ে সরকারের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি দেখা দেয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, স্পিকারের অনুমতি ছাড়া লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখন সংসদ অধিবেশন চলছে। তিনি সংসদ সদস্যপদে বহাল আছেন। যে কারণে তাঁকে গ্রেপ্তারে স্পিকারের অনুমতি লাগবে। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যর্থতা নেই। তাঁকে গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশ যেমন সত্য, তেমনি তিনি সংসদ সদস্য, সেটিও সত্য। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের পর বিকেলে স্পিকার সংসদ থেকে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। পরে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ চত্বরের বাইরে থেকে কোনো সাংসদকে গ্রেপ্তারের জন্য স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে বলা আছে, স্পিকারের অনুমতি ছাড়া সংসদের সীমানার মধ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। কোনো সদস্য ফৌজদারি অভিযোগে বা অপরাধে গ্রেপ্তার হলে কিংবা কোনো নির্বাহী আদেশে আটক হলে গ্রেপ্তারকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে বিষয়টি স্পিকারকে জানাবেন। রোববার রাতে লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরে আসার পর থেকে আত্মগোপনে আছেন। কিছু সময় তাঁর মুঠোফোন চালু থাকলেও পরে তা বন্ধ রাখা হয়। তাঁর আত্মীয়স্বজন বলছেন, তাঁদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি আইনি পথে অগ্রসর হবেন। ভারতে অবস্থানকালেই আইনজীবীদের সঙ্গে তিনি পরামর্শ করেছেন। লতিফ সিদ্দিকী আদালতে হাজির হতে পারেন বলে গতকাল দিনভর গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সেখানে যাননি। তবে আজ তিনি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করতে পারেন বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লতিফ সিদ্দিকী ভারতে অবস্থানকালে নানা মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নাগরিক হিসেবে তিনি আইনি মোকাবিলার আগ্রহের কথা জানান। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরে পুরোনো বিতর্ক নতুন করে সামনে নিয়ে আসার বিষয়টি সরকার ভালোভাবে নেয়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে দুজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লতিফ সিদ্দিকীর দেশে ফেরার বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের জানান, দেশে আসার পর লতিফ সিদ্দিকী তাঁর সঙ্গে বা তাঁর কার্যালয়ের কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। হঠাৎ করে দেশে ফিরে আসার বিষয়টিকে তিনি নাটক বলে মন্তব্য করেন।

No comments:

Post a Comment