Friday, November 28, 2014

বিয়ে করে ভোটার হচ্ছে রোহিঙ্গারা:কালের কন্ঠ

বাংলাদেশে বিয়ে করে প্রকৃত পরিচয় গোপন করে শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা সাজিয়ে এ দেশের ভোটার হয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। সেই সঙ্গে তারা পেয়ে যাচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রও। এরপর তারা যুক্ত হচ্ছে জঙ্গি তৎপরতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচারের মতো নানা অপরাধমূলক কাজে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ২৩ অক্টোবর এ তথ্য জানানো হয় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। উদাহরণ হিসেবে বিস্তারিত প্রতিবেদনসহ এ ধরনের বেশ কিছু নাম ও তাদের জাতীয় প
রিচয়পত্রের নম্বর ইসিতে পাঠানো হয়েছে। গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৬ মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান ওই প্রতিবেদন ও রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকাটি ইসিতে পাঠান। এতে কক্সবাজারে ৩৮৯ জন এবং বান্দরবানে ৪৯ জন রোহিঙ্গা ভোটারের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হালনাগাদ করা খসড়া ভোটার তালিকা স্থানীয়দের সহযোগিতায় ব্যাপকভাবে যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইসি সচিবালয় গতকাল বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও অন্যদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। বিষয়টি জানানো হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, কয়েকটি মন্ত্রণালয়, পুলিশের মহাপরিদর্শক, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহফুজা আক্তারের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় বাস করছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পত্র অনুযায়ী তাদের অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। রোহিঙ্গারা ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা, অস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে আপত্তি বা অভিযোগ উপস্থাপনের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/মেম্বার বা পৌরসভার মেয়র/কাউন্সিলরদের সচেতন করার জন্য অনুরোধ করা হয়। মাহফুজা আক্তারের সই করা অন্য এক চিঠিতে বলা হয়, ২০০৮ সাল অথবা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব ভোটার স্থানান্তরিত হয়ে অথবা নতুন করে বিশেষ এলাকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, সেসব ভোটার বিশেষ কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই না হয়ে থাকলে ওই কমিটিকে আরো সতর্কতার সঙ্গে তা যাচাই করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন এর জন্য নিজেদের দায়ী ভাবছে না। কমিশনের পক্ষে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা বসবাসকারী এলাকাগুলোকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ফরম ও কমিটির মাধ্যমে ভোটার করা হয়। বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি ও পুলিশের প্রতিনিধি এ কমিটির সদস্য। রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার না হতে পারে সে জন্য বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ১৪টি উপজেলায় ভোটার অন্তর্ভুক্তিতে বিশেষ ফরম ব্যবহার করা হয়। এই ফরমে ভোটার হতে আবদনকারীর বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু, পূর্বপুরুষ, বসবাসের প্রমাণ হিসেবে জমির কাগজপত্রের তথ্যও সংযুক্ত থাকে। বিশেষ কমিটি অনুমোদন না করলে ওই সব এলাকায় কাউকে ভোটার করা হয় না। এর পরও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রতিবারই রোহিঙ্গাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভোটার তালিকা রোহিঙ্গামুক্ত করতে হলে ওই বিশেষ কমিটিকেই তা করতে হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো লোক ভোটার হতে আমাদের চাহিদামতো তথ্য-প্রমাণ যদি জোগাড় করতে সক্ষম হয় তাহলে কী করার আছে? আমরা যতটুকু সম্ভব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।’ কয়েক মাস আগে চট্টগ্রামে ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক কমিশনকে জানান, রোহিঙ্গারা এবার চিহ্নিত ১৪টি উপজেলার বাইরে বসতি গেড়ে ভোটার হওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছে। আবদুল মোবারকের এ পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে  রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকার আওতা আরো বাড়িয়ে সেসব এলাকায় বিশেষ ফরম ও বিশেষ কমিটি গঠনের উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদন ও তালিকা সম্পর্কে কক্সবাজারের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দীন গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি এখনো এ বিষয়ে দাপ্তরিকভাবে কিছু জানি না। তবে বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি। কমিশন সচিবালয়ের চিঠিও শিগগির পেয়ে যাব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণ সচেতন হলে রোহিঙ্গা ভোটার এড়ানো সম্ভব। এর আগে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা থেকে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছিল, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্থানীয় কিছু সুবিধাবাদী মহলের হীন স্বার্থে এবং প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থের বিনিময়ে তাদের ভোটার করেছে। এদের দ্রুত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে রাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

No comments:

Post a Comment