স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য প্রস্তুত খুলনার বয়রা আবাসিক প্রকল্পের সংরক্ষিত কোটার প্লট আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনা-৩ আসনের এমপি বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সুপারিশে ২৬টি প্লট আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা, এমপির ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ আস্থাভাজনদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম নিজে, তার বোন ও বোন জামাইয়ের ন
ামে বরাদ্দ নিয়েছেন ৫টি প্লট। প্লটপ্রাপ্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন (৪ কাঠার প্লট) মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক, নগর সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের মেয়ের দেবর গাজী মোস্তাফিজুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো: আশরাফুল আলম ও তার বোন জামাই মোল্লা তজিবুর রহমান, সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা খন্দকার হাসান কবীর ও ব্যবসায়ী আবদুর রব নকীব। ৩ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম সানাউল্লাহ নান্নু, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মেমোরী সুফিয়া রহমান শুনু, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী এনায়েত আলী আলো, এমপির ড্রাইভার দেলেয়ার হোসেন, ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন সাবেরা সুলতানা রঞ্জু, বড় বোন আমেনা খাতুন ও ভগ্নিপতি মো: নাজমুল হাসান। এমপি মন্নুজান সুফিয়ানের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো: জহিরুল হক, পুলিশের সহকারী কমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুরুল আমিনসহ মোট ২৬ জন প্লট পেয়েছেন। প্লট বরাদ্দের দুই নম্বর শর্ত ছিল খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে নিজ নামে, স্ত্রী-স্বামী-সন্তান ও পোষ্যদের নামে বা বেনামে বসবাসের জন্যে কোনো ঘরবাড়ি অথবা জমি-ফ্যাট থাকলে প্রকল্পে প্লট প্রাপ্তির অযোগ্য বিবেচিত হবেন। কিন্তু প্লটপ্রাপ্ত প্রায় সবারই নগরীতে জমি ও বাড়ি রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ খুলনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সাইদ রেজা জানান, সংরক্ষিত কোটার প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। সংরক্ষিত কোটার প্লটে কারো আবেদন করতে হয় না। মন্ত্রণালয় থেকে যাদের নাম অনুমোদন হয়ে আসবে তাদেরই এসব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্লটপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ভালো জানেন। তিনি বলেন, এই কোটার প্লট বিতরণের লিখিত কোনো নিয়ম নেই। কোন শ্রেণীর নাগরিক এই প্লট পাবেন তাও কোথাও উল্লেখ নেই। প্রসপেক্টাসে বলা আছে, মন্ত্রণালয় এই প্লটগুলোর ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য এ ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশকে মন্ত্রণালয় বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পূর্ব পাশে প্রায় সাড়ে ১৬ একর জমির ওপর নতুন একটি আবাসন প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রকল্পে চার কাঠার ৪০টি এবং তিন কাঠার ৯৮টি প্লট ছিল। প্রতি কাঠা জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। গত বছরের মে মাসে ১২৯টি প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। আবেদনে মোট প্লটের ২৬টি প্লট সংরক্ষিত হিসেবে উল্লেখ ছিল। তবে এই প্লটগুলো কাদের মাঝে বরাদ্দ করা হবে তার কোনো ব্যাখ্যা প্রসপেক্টাসে উল্লেখ ছিল না। গত বছরই ২৬টি প্লট সংরক্ষিত রেখে বাকি ১০৩টি প্লট লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়। সূত্রটি জানায়, সংরক্ষিত কোটার ২৬টি প্লট বরাদ্দ দেয়ার জন্য গত জুন মাসে খুলনা-৩ আসনের এমপি বেগম মন্নুজান সুফিয়ান একটি তালিকা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ২৪ আগস্ট মন্ত্রণালয় থেকে ২৬ জনের নামে প্লট বরাদ্দের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। পরে ২৭ আগস্ট এমপি মন্নুজান সুফিয়ান প্লটগুলো দ্রুত ওই ২৬ জনকে বরাদ্দ দিতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহ খন্দকারকে ডিও লেটার পাঠান। এর প্রেক্ষিতে আগামী ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করে প্লট বুঝে নেয়ার জন্য তাদের চিঠি পাঠান হয়েছে। চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মো: আশরাফুল আলম। তিনি নিজে, দুই বোন ও দুই ভগ্নিপতির নামে প্লট পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, তিনি নিজে প্লট চাননি। তার নামে বরাদ্দ দেয়া প্লটগুলো তিনি নেবেন না। তা আজ-কালের মধ্যে চিঠি দিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দেবেন। প্লট বরাদ্দের সুপারিশের ব্যাপারে সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, যাদের খুলনা শহরে কোনো প্লট নেই তাদের প্লট দেয়ার সুপারিশ করেছি। আশরাফের বোনরা খুলনার নামকরা শিক্ষক। তারা পৃথক পরিবারে থাকেন বলে তাদের প্লট দেয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতির আশ্রয় এখানে নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহ খন্দকার বলেন, এক ব্যক্তি বা পরিবারের নামে একাধিক প্লট বরাদ্দের বিষয়টি তিনি জানেন না। অভিযোগের সত্যতা পেলে এসব বরাদ্দ বাতিল করা হবে।
No comments:
Post a Comment