প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) সহায়তা নিয়ে স্ব-উদ্যোক্তা হওয়ার এবং অন্যদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য দেশের যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা সমাপনের পর চাকরির জন্য এখানে সেখানে লোকজনকে ধরাধরি করা শিক্ষিত লোকজনের জন্য অবমাননাকর। আমরা চাই না আমাদের যুবসমাজ তাদের চাকরির জন্য এখানে সেখানে ঘোরাফেরা করুক। অন্যের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে আমাদের
যুবসমাজ স্ব-উদ্যোক্তায় পরিণত হোক, নিজের পায়ে দাঁড়াক এবং অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুক।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তাদের সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন। ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি) হিসেবে পরিচিত চার হাজার ৫০০ ডিজিটাল সেন্টারের প্রায় ১১ হাজার উদ্যোক্তা এ সম্মেলনে যোগ দেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এম মঞ্জুর হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিশিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পাওলিন তামেসিস বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান শিকদারও বক্তৃতা করেন। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো: আবুল কালাম আজাদ এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার। এ ছাড়া রাঙামাটি সদরের পক্ষে বিকাশ চাকমা ও রংপুর সদরের আরিফুজ্জামান তাদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের তরুণরা কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে এখন জামানতবিহীন এক লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ এবং তাদের নিজস্ব ব্যবসায় শুরু করতে পারে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল সেন্টারের এসব উদ্যোক্তাকে উচ্ছেদ করার কিছু হীন চক্রান্ত চলছে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, এসব ডিজিটাল উদ্যোক্তাকে সরানো হবে না। তারা তাদের নিজ নিজ স্থানে বহাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে পৌরসভা মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, এসব ডিজিটাল সেন্টারে কেউ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবেন না। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, রাজধানীতে প্রধান হাইটেক পার্কের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলায় হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে তার সরকারের। তিনি বলেন, ‘প্রধান হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে ঢাকায় এবং প্রতিটি জেলায় আমরা এ ধরনের একটি পার্ক নির্মাণ করব।’ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ কোটি সেবা প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনলাইনে প্রায় সাত কোটি জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে ২০ লাখ নারী ও পুরুষ বিদেশে যাওয়ার জন্য তাদের নাম নিবন্ধন করেছে। ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে বিভ্রান্তি দূরীকরণে শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমেই করা হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জন্মনিবন্ধনের পাশাপাশি মানুষের মৃত্যুও নিবন্ধন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। গ্রামীণ জনগণের জন্য প্রায় ২০০ ই-সার্ভিসসহ ডিজিটাল সেন্টার থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ৪০ লাখের মতো ছাত্রছাত্রী ২৩ হাজার ৫০০ মাল্টিমিডিয়া কাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণে অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া কাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল সেন্টারগুলো যুবকদের আউট সোর্সিং ও প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে যাতে তারা আরো দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং তাদের আয় বাড়াতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের আগে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র বলেন, সম্প্রতি তিনি রংপুর সফর করেছেন এবং ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলেছেন, তারা তাকে জানান, এখানে জনগণকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে মাসে তারা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন।
No comments:
Post a Comment