Monday, December 22, 2014

পাকিস্তানে ৪ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, ৩০০ আটক:প্রথম অালো

পেশোয়ারের আর্মি স্কুলে তালেবানের ভয়াবহ হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রেখেছে পাকিস্তান। চালানো হচ্ছে সন্ত্রাসীদের ধরতে জোরদার অভিযান। শুধু এক দিনেই গত শনিবার ইসলামাবাদ থেকে আটক করা হয়েছে তিন শতাধিক ব্যক্তিকে। খবর আল-জাজিরা ও ডনের। পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের একটি কারাগারে শনিবার রাতে কার্যকর করা হয় চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড। সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফের ওপর হামলার ঘটনায়
জড়িত থাকার দায়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই চার ব্যক্তি হলেন জুবায়ের আহমেদ, রশিদ কোরেশি, গোলাম সারওয়ার ভাট্টি ও আখলাক আহমেদ। তাঁদের মধ্যে শেষের জন রাশিয়ার নাগরিক। কঠোর নিরাপত্তায় ফয়সালাবাদের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অপর একটি কারাগারে নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়। যেকোনো ধরনের হামলা ঠেকাতে নগরজুড়ে নেওয়া হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা সতর্কতা। মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। তবে কিছু সূত্র দাবি করেছে, দুজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। দুজনের ফাঁসি গতকাল রোববার পর্যন্ত স্থগিত ছিল। অবশ্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ দাবির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কর্মকর্তারা গতকাল জানান, লাহোরের কোট লাখপাত কেন্দ্রীয় কারাগারেও আরও চারজনের ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে। ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে। ইতিমধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন লস্কর-ই-জাংভির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গির সঙ্গে শেষ দেখা করতে আজ সোমবার তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ডেকেছে সিন্ধুর সুক্কুর জেল কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার সন্ত্রাস দমনবিষয়ক একটি আদালত আতাউল্লাহ ওরফে কাসেম ও মোহাম্মদ আজম ওরফে শরিফ নামের এ দুই জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। ১০ বছর আগে তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয়েছিল। কাল মঙ্গলবার ভোরে তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা রয়েছে। শনিবার চারজনের ফাঁসি কার্যকর করার আগে শুক্রবার ফয়সালাবাদের জেলা কারাগারে সাবেক দুই সেনাসদস্যের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। গত মঙ্গলবার পেশোয়ারের স্কুলে তালেবানের নৃশংস হামলার পর গত বুধবার পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। সরকারের ওই পদক্ষেপের পর গত ছয় বছরের মধ্যে প্রথম শুক্রবার ডা. উসমান ও আরশাদ মেহমুদ নামের ওই দুই সেনাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ৩০০ জন আটক: পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে শনিবার এক যৌথ অভিযানে কিছু বিদেশিসহ তিন শতাধিক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। সশস্ত্র সামরিক যান, ডগ স্কোয়াড, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও কমান্ডোসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অন্য সদস্যরা অংশ নেন এ অভিযানে। অভিযানে অংশ নেন পুলিশ, রেঞ্জার্স, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও। অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারও ছিল এ অভিযানের লক্ষ্য। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অভিযান অব্যাহত থাকবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা: প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ গত শনিবার তাঁর দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূলের অঙ্গীকার করে এক বিবৃতি দিয়েছেন। এর পরপরই সন্ত্রাস দমনবিষয়ক করাচির এক আদালত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) প্রধান মোল্লা ফজলুল্লাহসহ আট ব্যক্তির বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গত জুনে করাচি বিমানবন্দরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, শনিবার জঙ্গিদের লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মোল্লা ফজলুল্লাহও থাকতে পারেন। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। শান্তি সম্মেলন: পেশোয়ারে একটি শান্তি সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি যৌথ কৌশল নিরূপণে আলেম-ওলামা ও মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আয়োজিত হবে এ সম্মেলন। শনিবার পেশোয়ারে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাত্তাকের সঙ্গে এক বৈঠককালে ওআইসির মহাসচিব আইয়াদ আমিন মাদানি এ কথা জানান। কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে: আল-কায়েদার দক্ষিণ এশিয়া শাখার প্রধান ওসামা মেহমুদ গতকাল বলেছেন, পেশোয়ারে স্কুলে তালেবানের হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ‘কষ্টে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছে। ঘটনাটিতে আমরা খুবই দুঃখিত।’ ই-মেইলে পাঠানো চার পৃষ্ঠার বিবৃতিতে বলা হয়, আল্লাহর শত্রু যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পোষা শাসক ও দাস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা অস্ত্র তুলে নিয়েছি। নিরীহ নারী, শিশু ও আমাদের মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে নয়। গত সেপ্টেম্বর আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরি সংগঠনের দক্ষিণ এশিয়া শাখা সৃষ্টির ঘোষণা দেন।

No comments:

Post a Comment