যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গত শনিবার এক যুবকের অতর্কিত হামলায় দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। পরে আত্মহত্যা করেছেন হামলাকারী। নিউইয়র্কে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার হাতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ এরিক গার্নার হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এ হত্যাকাণ্ড বলে ইঙ্গিত মিলেছে। মাত্র কয়েক দিন পরই বড়দিন। এই ব্যস্ত সময়ে জোড়া পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিউইয়র্কজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। লোকজন এখন বাইরে বেরোতেও ভয় পাচ্ছ
ে। নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকারীর নাম ইসমাইল ব্রিনসলে (২৮)। বাল্টিমোরের বাসিন্দা ইসমাইল অতীতে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অপরাধের ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পুলিশ হত্যার ঘোষণা দিয়েই তিনি শনিবার বাল্টিমোর থেকে নিউইয়র্কে আসেন। এমনকি নিউইয়র্কে আসার আগ মুহূর্তে ইসমাইল তাঁর সাবেক প্রেমিকাকে গুলি করে আহত করেন। নিউইয়র্ক পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ড ঘটাতে ইসমাইল শনিবার বিকেলে ব্রুকলিনের একটি গৃহায়ণ প্রকল্পের কাছে ওত পেতে ছিলেন। একপর্যায়ে পুলিশের একটি টহলদল ঘটনাস্থলে আসে। দলটির সদস্য উয়েনজিয়ান লু এবং রাফায়েল রামোস টহল থামিয়ে গাড়িতে বসে ছিলেন। এ সুযোগে ইসমাইল গাড়ির খোলা জানালার পাশে এসে গুলি শুরু করেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির ভেতরে ঢলে পড়েন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি তাঁরা নিজেদের অস্ত্র বের করারও সময় পাননি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর ইসমাইল দ্রুত দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় আরেকটি পুলিশ টহলদল তাঁকে ধাওয়া করে। তবে তারা কাছাকাছি আসার আগেই নিজের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন ইসমাইল। পুলিশ জানিয়েছে, ইসমাইল যে পুলিশ হত্যার শপথ নিয়ে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন, তা আগেই জানতে পারে বাল্টিমোর পুলিশ। তারা হত্যাকাণ্ডের আধঘণ্টা আগে ফোন করে নিউইয়র্ক পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়। এরপর ইসমাইলের ছবিসহ একটি ফ্যাক্সবার্তাও পাঠানো হয়। তবে ফ্যাক্সবার্তাটি নিউইয়র্কে পৌঁছানোর অগেই তিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন। সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক পুলিশের কমিশনার উইলিয়াম ব্রাটন বলেন, হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে ইসমাইলের বলে ধরে নেওয়া একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ‘পুলিশবিরোধী’ বক্তব্য দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘তারা আমাদের একজনকে কেড়ে নিয়েছে...চলুন আমরা তাদের দুজনকে কেড়ে নিই।’ ‘আমাদের একজন’ বলতে তিনি সম্ভবত এরিক গার্নারকে বুঝিয়েছেন। এরিক গার্নারের হত্যাকারী শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে সম্প্রতি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় জুরিবোর্ড। এ ঘটনায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পুলিশবিরোধী টানা নাগরিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। এসব বিক্ষোভে ইসমাইল অংশ নিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে শান্তিপূর্ণ এসব নাগরিক বিক্ষোভের সঙ্গে জোড়া পুলিশ হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা আল শার্পটন বলেছেন, ওই পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চলমান বিক্ষোভকে সংযুক্ত করার চেষ্টা হবে একেবারে দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। ফ্রান্সে ছুরি নিয়ে পুলিশকে হামলা: বিবিসির খবরে বলা হয়, ফ্রান্সের মধ্যাঞ্চলীয় জু-লে-তুর এলাকার একটি থানার কাছে শনিবার এক ব্যক্তি ছুরি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার পর পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়। হামলাকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি বুরুন্ডিতে জন্ম নেওয়া ফরাসি নাগরিক এবং হামলার সময় ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার দিয়েছিলেন বলে পুলিশের বরাত দিয়ে খবরে জানানো হয়েছে।
No comments:
Post a Comment