Saturday, December 20, 2014

নওয়াজকে সেনাপ্রধানের আলটিমেটাম:নয়াদিগন্ত

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিন হাজারের বেশি সন্ত্রাসীকে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সময় বেঁধে দিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ। তালেবান ইস্যুতে নিজের কঠোর অবস্থানও ইতোমধ্যে তুলে ধরেছেন সেনাপ্রধান। বুধবার এক টুইট বার্তায় সেনাপ্রধান এ আলটিমেটাম দেন। পাকিস্তানের পেশওয়ারের স্কুলে হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাহেল শরিফ টুইটে লিখেছেন,‘যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট। এখন যারাই জঙ্গিদের পে
কথা বলবে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি জানান, স্কুলে হামলার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে খাইবার প্রদেশে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে সেনারা। শেষ এক ঘণ্টায় ১০ বার বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তালেবানদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রাহেল বলেন, ‘পাক সেনারা তোমাদের দিকে এগোচ্ছে তালেবান, তোমাদের ধ্বংস করা হবে। তারা তোমাদের শিশু ও মহিলাদের মারবে না, কারণ তারা তোমাদের মতো কাপুরুষ নয়।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানবাসী সেনাদের পাশে দাঁড়ান, জারবই-ই আজব অপারেশনকে সমর্থন করুন। এ দেশের মাটিতে কোনো তালেবান থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।’ উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই উত্তর ওয়াজিরিস্তান ও খাইবার পখতুনে অপারেশন চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। পেশওয়ারে হামলার প্রতিশোধ নেয়ার কথা জানিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান বলেন, ‘পাকিস্তান তালেবানকে বলতে চাই, তোমরা আমাদের শিশুদের হত্যা করেছ। এখন এর ভয়াবহ পরিণাম তোমরা দেখতে পাবে, এর মূল্য পরিশোধের প্রস্তুত থাক। প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা  নেবে সেনাবাহিনী। এটি আমার শপথ।’ সামরিক অভিযানে ৫৯ জন নিহত  এ দিকে আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় অঞ্চলে শুক্রবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলায় ৫৯ জন নিহত হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। তালেবান একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৪৮ জন হত্যা করার কয়েকদিন পর এ অভিযান চালানো হলো। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ কথা জানিয়েছে। সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা খাইবারের তিরাহ এলাকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীদের হত্যা করে। ওই অঞ্চলে তালেবানসহ অন্য সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিয়েছে।  বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসীরা তিরাহ থেকে পাক-আফগান সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমন খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উরমাগাই ও স্পুর্তোক এলাকায় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ে ৩২ জঙ্গি নিহত হয়।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্য আহত হয়েছে। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী পেশোয়ারে স্কুলে তালেবানের হত্যাযজ্ঞের পর সরকার ও সামরিক বাহিনী আবার তালেবান সন্ত্রাসীদের পরাজিত করার সংকল্প ব্যক্ত করে। পাকিস্তানি তালেবান বন্দুকধারীরা মঙ্গলবার পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩২ শিশুসহ ১৪৮ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এটি দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। গোষ্ঠীটি জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে চলমান সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। এই সেনা সদস্যরা সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করে। আরো হামলা চালানো হবে বলে তারা হুমকি দিয়েছে। ৬ জনের মৃত্যু পরোয়ানায় পাক সেনাপ্রধানের স্বার পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ বৃহস্পতিবার ছয় সন্ত্রাসীর মৃত্যু পরোয়ানায় স্বার করেছেন। এর আগে দেশের এক সামরিক আদালত সন্ত্রাসী মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন। তাদের ফাঁসির আদেশটি দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকার পর জেনারেল রাহেল তাতে সই করলেন। এ সম্পর্কে সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিম বাজওয়া এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, ‘বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধান চরমপন্থী ছয় সন্ত্রাসীর মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেছেন।’ তবে তাদের মৃত্যুদণ্ড কবে নাগাদ কার্যকর করা হচ্ছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে তিনি কিছু বলেননি। এক গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে স্থানীয় ডন পত্রিকা জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ মৃত্যুদণ্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মাত্র এক দিন পর ওই ছয়জনের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বার করলেন জেনারেল রাহেল। পেশোয়ার স্কুলে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতেই বুধবার ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল পাক সরকার।  এ দিকে মৃত্যুদণ্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সম্ভাব্য জেল পলায়নের বিরুদ্ধে কারা কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছে সরকার।

No comments:

Post a Comment