Tuesday, December 2, 2014

মুক্তিযুদ্ধের তিন নীতিতে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে:নয়াদিগন্ত

বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু বাংলার মানুষ এই তিন নীতির সুফল পায়নি। আমাদের এই তিন নীতির ভিত্তিতে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেন প্রবাসীরা পথ দেখাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।   গত রোববার রাতে ইস্ট লন্ডনের ওয়াটার লিলি অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক সেমিনারে ত
িনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। সহস্রাধিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী এবং ব্রিটেনের নাগরিকদের এ সম্মেলন থেকে পাঁচ দফা লন্ডন ঘোষণা করা হয়।   ঘোষণায় গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রহসন উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা। এ ছাড়া বিরোধী দল-মত দমন, গুম-খুন এবং গণমাধ্যম দলনে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করা হয়। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত ও ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ সব গণমাধ্যম খুলে দেয়া এবং সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন তারা। এসব দাবি জানিয়ে সিটিজেন মুভমেন্টের নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারকে তিন মাসের আলটিমেটাম দেন।   সেমিনারে ফরহাদ মজহার বলেন, যে তিন নীতির আলোকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আগামী লড়াইকে এই তিন দফার ভিত্তিতে পরিচালিত করতে পারলেই কেবল আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে হটানো সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন কেবল একটি নির্বাচনের সমস্যায় নেই। ফ্যাসিবাদীকে হটানোই হলো এখন প্রধান কাজ।   ইউরোপভিত্তিক নাগরিক সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এম এ মালিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের চিত্র তুলে ধরে বক্তৃতা করেন দার্শনিক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার এবং টকশো ব্যক্তিত্ব ড. তুহিন মালিক। আরো বক্তৃতা করেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, ইসলামি ব্যক্তিত্ব মুফতি শাহ সদরুদ্দীন, আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দীন, টাওয়ার হ্যামলেট বারার ডেপুটি মেয়র ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।   সমবেত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষে পাঁচ দফা লন্ডন ঘোষণা পাঠ করেন সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের আহ্বায়ক এম এ মালেক। ঘোষণায় বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার নেই।   রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুম বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকে এই সরকার যেভাবে দমন-পীড়ন করছে, বিদ্বেষ ও আতঙ্কের বশবর্তী হয়ে যেভাবে ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের ওপর সরকার অত্যাচার নির্যাতন করছে, তা একদলীয় শাসনব্যবস্থারই নামান্তর। তারা বাংলাদেশের জনগণের নাগরিক ও মানবিক অধিকার অর্জনে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতার আহ্বান জানান। সরকার গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে উল্লেখ করে অবিলম্বে দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভিসহ যেসব গণমাধ্যম এই সরকার বন্ধ করে দিয়েছে, তা খুলে দেয়া এবং আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা অনুযায়ী সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারের জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই আদর্শকে নস্যাৎ করে যে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য সাম্য মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করার নীতি ও কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে হবে। সেমিনারে বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা আতিকুর রহমান জিলু।   ফরহাদ মজহার আরো বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে ৫ মে ফ্যাসিবাদের বিদায় হয়নি। এই অপশক্তিকে হটাতে হলে এবার মুক্তিযুদ্ধের তিন নীতিতে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইসলাম একটি সভ্যতার নাম। এই সভ্যতাকে কেবল ধর্ম নয়, দর্শন হিসেবে নিতে হবে। তাহলেই সব অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।   টকশো ব্যক্তিত্ব ড. তুহিন মালিক বর্তমান সরকারকে ‘মিথ্যাবাদী’ অভিহিত করে বলেন, সত্য বললেই এখন রাজাকার বলা হয়। আর মিথ্যা বলে পুরস্কার পাওয়া যায়। দেশ এখন দখলদার ও লুটেরাদের কবলে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য। কেবল আন্দোলনের হুমকি আর জনস্রোত দেখালে চলবে না।   ড. তুহিন মালিক আরো বলেন, নাস্তিকদের সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা পুরো রাজনীতিটাকে কলুষিত করেছে। যে নাস্তিকরা তার বাবাকে হত্যা করতে চেয়েছে, যে নাস্তিকরা তার বাবা মারা যাওয়ার পর ট্যাংকের ওপরে দাঁড়িয়ে উলঙ্গ নৃত্য করেছে, যে নাস্তিকরা তার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানাতে চেয়েছে; শুধু ইসলামকে আঘাত করার জন্য এই নাস্তিকদের শেখ হাসিনা সাথে রেখেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বাম পচলে হয় আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ যখন পচে যায় তখন তার নাম হয় নাস্তিক।   তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে মিথ্যা, প্রপাগান্ডা ও হয়রানি করে ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশে দিল্লির শাসন ও নাস্তিকবাদীদের মন্দির বানাতে চায়। সারা পৃথিবীতে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়; কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে সংখ্যাগুরু নির্যাতন হয়। আশ্চর্য দেশ যেখানে সংখ্যাগুরু মানুষের মূল্যবোধ, তার লেবাস, তার দাড়ি, টুপি এমনকি তার কিতাব রাখা অপরাধ; কিন্তু ঘুষ ও হারাম খাওয়া অপরাধ নয়।

No comments:

Post a Comment