Saturday, December 6, 2014

ওই কর্মকর্তারা আইন ভেঙে থাকলে ব্যবস্থা:কালের কন্ঠ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের বাসায় বৃহস্পতিবার রাতে যে সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্
রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আইন তার আপন গতিতে চলবে। তাঁরা (সরকারি কর্মকর্তারা) আইনের বরখেলাপ করে থাকলে আইন তার বিচার করবে।’ গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। সম্প্রতি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) শীর্ষ সম্মেলন ও মালয়েশিয়া সফরের নানা বিষয়ে তথ্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনটি সরকারি গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। খালেদাকে গভীর রাতের অভিসার বাদ দেওয়ার আহ্বান :  বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বাসায় সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠক প্রসঙ্গে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইন তার আপন গতিতে চলবে। তাঁরা আইনের বরখেলাপ করে থাকলে আইন তার বিচার করবে।’ এ সময় উত্তরা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমন ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে। যাঁরা খালেদার বাসায় বৈঠক করেছেন তাঁদের বেতন তো আমিই বাড়িয়েছি। সেখানে যাতায়াতের কারণটা কী?’ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের উত্তরার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে এক দল সরকারি কর্মকর্তার গোপন বৈঠক হয়। সেটা প্রকাশ হয়ে পড়লে ঘটনাটি ‘উত্তরা ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা পায়। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে মধ্যরাতে বৈঠক না করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গভীর রাতে চুপকে চুপকে কেন দেখা করেন? এটা করা মানেই তো সন্দেহ আছে? বিএনপি চেয়ারপারসনকে বলব- রাতের অভিসার বাদ দিয়ে যা করবেন দিনের আলোয় করুন। এতে মানুষের ভালো হবে।’ সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হবে- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনাদের তো ধাক্কার শেষ নাই। একজন ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে। আরেকজন তো এর আগে আমার চুল উড়িয়ে দিয়েছে। আসলে এখানে খালেদা জিয়ার একটা মানসিক বিষয় আছে। মানুষজন শান্তিতে থাকলে ওনার শান্তি থাকে না।’ কেউ পাশে থাকলে বাঁচব, না থাকলে মরে যাব, এটা ঠিক নয় : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাশে না থাকলে বাংলাদেশ চলতে পারবে না- এমন ধারণা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর এবং এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে তাঁর মনোভাবের কথা ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে ছিল না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধে তারা যা যা চেষ্টা করার করেছে, কিন্তু পারেনি। কারণ সেখানেও তো সবাই এক মতের নয়। সেখানেও ভিন্নমতের লোক আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে যে ভিন্নমত নেই তা নয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাউকে ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না- এই চিন্তা না থাকাই ভালো।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক আমাদের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে। কিন্তু পদ্মা সেতু আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য এটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। এ কারণে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পাওয়া যায় নাই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পাশে কেউ থাকলে বেঁচে যাব, না থাকলে মরে যাব, এটা ঠিক নয়। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যদি বিজয় লাভ করতে পারি, এখনো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। কারণ আমরা বিজয়ী জাতি।’ বাংলাদেশের বন্ধুর অভাব নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেরা ভালো থাকলে বন্ধুর অভাব হয় না। কেউ একজন পাশে না থাকলে চলবে না- এ ধারণা পরিহার করতে হবে। একজনের সাহায্য ছাড়া চলতে পারব না, এটা ভাবা ঠিক নয়।’ সম্প্রতি সরকার চীনমুখী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করে গেছেন। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’- আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম নীতি বলে কিছু নেই।” এ সময় কৌতুকছলে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘পৃথিবীটা তো গোল। একদিকে পূর্ব তো আরেকদিকে পশ্চিম। এ ছাড়া পৃথিবী তো ঘূর্ণায়মান।’ মিলিটারি ডিকটেটররা দুর্নীতির বীজ বপন করেছে : সম্প্রতি টিআইবির দুর্নীতির প্রতিবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলে। দুর্নীতি করে যারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে কখনো কি তাদের বিরুদ্ধে টিআইবি কিছু বলেছে? তারা কখন কী কারণে সরব হয়, এটারও কারণ আছে। তাদের উদ্দেশ্য কী, এটা একটা ভাবার বিষয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশ আছে যেখানে মিলিটারি ডিকটেটররা ক্ষমতায় ছিল, আর দুর্নীতি বাসা বাঁধেনি? আমাদের এখানেও এটা হয়েছে। ফলে এ দুর্নীতির ধারা থেকে বের হয়ে আসতে সময় লাগবে। মিলিটারি ডিকটেটররা দুর্নীতির যে বীজ বপন করে দিয়ে গেছে, সেখান থেকে রাতারাতি বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।’ খুচরা কিছু দুর্নীতি হচ্ছে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের একটা দেশ; সেখানে ছোটখাটো দুর্নীতির ঘটনা ঘটেই। খুচরা দুর্নীতি- দুই টাকার ঘুষ নিয়ে যাঁরা কথা বলছেন তাঁদের সোর্স অব ইনকামটা (আয়ের উৎস) কী? টাকাটা কোথা থেকে আসছে, সে জবাবদিহিতাও নেব।’ অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখি, দল হিসেবে নয় : সম্প্রতি ছাত্রলীগের বিভিন্ন সহিংস ঘটনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কোনো ধরনের অনিয়ম বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিছু লোক আছে যারা অলটাইম পারমানেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি (সব সময় স্থায়ী সরকারি দল) করে, তারা যে সরকারই ক্ষমতায় থাকে, সরকারি দল হয়ে যায়। ছাত্রদের মধ্যেও এটি আছে। কোনো অন্যায়ে জড়িত থাকলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কে ছাত্রলীগ করে তা দেখি না।’ এ সময় নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘সেখানে কে কার জামাই বা ভাগিনা আমরা তা দেখিনি। যারাই জড়িত থাকুক, ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা সব সময় অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখি, কোনো দল হিসেবে নয়।’ স্বাধীনতা ভোগ করার সময় দায়িত্বশীল হতে হয় : বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিতর্কিত বক্তব্য সরকারকে বিব্রত করছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় অনেকে অনেক কথা বলেন, সেটা বলতেই পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ নেতাদের কথা বলার স্বাধীনতা আছে। আমাদের সরকারের আমলে সবাই কথা বলার স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে স্বাধীনতা ভোগ করার সময় দায়িত্বশীল হতে হয়।’ সম্প্রতি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ওনাকে এমন কিছু বলতে বলিনি। উনি যেটা বলেছেন, ওনার ব্যক্তিগত মতামত। এ বিষয়ে উনি ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশে কী হতো? থাইল্যান্ডে মার্শাল ল হয়েছে, সেটা হতো। এক-এগারোর মতো আরেকটি সরকার ক্ষমতায় আসত। সেটা কি ভালো হতো?’ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রমুখ। সোনা চোরাচালানে বিমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কিছু পাওয়া যায়নি : সম্প্রতি বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে তো বিমান এত সোনার ডিম পারত না। কারণ তখন সোনা চোরাচালানে বিএনপির মন্ত্রীরা জড়িত ছিলেন। ফলে তখন সোনা চোরাচালান ধরা পড়ত না। কিন্তু এখন পড়ছে। এ কারণে সাংবাদিকরা এ বিষয়টি জানতে পারছেন। আর সম্প্রতি তো সাংবাদিকরা অনেক বেশি লিখেছেন। বিমানের চেয়ারম্যানের পালিত পুত্র বানিয়ে সংবাদ লিখেছেন। কিন্তু পরে তো খোঁজ নিয়ে দেখা গেল এসব কিছুই নেই।’ সঠিক প্রক্রিয়ায় বিদেশে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে : মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো কমে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান সরকার জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাচ্ছে। অনেক যাচাই-বাছাই করে আমরা শ্রমিক পাঠাচ্ছি। কারণ এর আগে বিএনপি সরকারের আমলে দুই লাখ ৬৭ হাজার শ্রমিক মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে গিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা তাদের বৈধ করি। এরপরে ২০০১ সালে চারদলীয় সরকারের আমলে এক লাখ ৫৭ হাজার শ্রমিক অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যায়। ফলে সেখানে শ্রমিক পাঠানোর দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে বন্ধ দুয়ার খুলেছি। এখন শ্রমিকদের ডাটাবেইস তৈরি করে বিদেশে পাঠাচ্ছি। শ্রমিকদের আঙুলের ছাপ নিয়ে, যে দেশে যাবে সেখানকার আইনকানুন শিখিয়ে পাঠাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘চাইলে ঝাঁকা ভরে ভরে আমরাও শ্রমিক পাঠাতে পারি। কিন্তু তাতে ভবিষ্যতে শ্রমিক পাঠানোর দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে আমরা সঠিক প্রক্রিয়ায় শ্রমিক পাঠাচ্ছি। দেশের মানুষ যাতে দালালদের খপ্পরে না পড়ে, শ্রমিকরা যেন বিপদে না পড়ে সে জন্যই এ আয়োজন।’ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো বাড়বে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মালয়েশিয়া সফরকালে সে দেশের সরকারের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ে আমরা একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছি। এর আওতায় মালয়েশিয়ার সারাওয়াক প্রদেশে ১২ হাজার শ্রমিক পাঠানো যাবে, যা একসময় ৬০ হাজারে পৌঁছাবে।’

No comments:

Post a Comment