Friday, December 12, 2014

ভিডিও ফুটেজে ৩৩ জন চিহ্নিত:কালের কন্ঠ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসে বহুল আলোচিত গোপন বৈঠকে সরকারি কর্মচারীদের উপস্থিতির প্রমাণ হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ভিডিও ফুটেজ জমা দিয়েছে বিভিন
্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এসব ভিডিও ফুটেজ থেকে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২২ জন বর্তমানে চাকরিতে রয়েছেন, অবশিষ্ট ব্যক্তিরা চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। অবসরে গেলেও তাঁদের মামলার আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে। আর যাঁরা ক্যাডার কর্মকর্তা তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক আরো প্রায় দেড় শতাধিক কর্মকর্তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত-সংক্রান্ত অভিযোগ ওঠায় গতকাল বৃহস্পতিবার যুগ্ম সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীরকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়াজি ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলামকে ওএসডি করা হয়েছে। একই অভিযোগে সমবায় বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কাজী জহিরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া (ওএসডি) হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগে অর্ধশতাধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ধরা খাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে ধরা খাবেন শীর্ষ পর্যায়ের কিছু বিএনপি নেতাও। তদন্ত শেষে তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত ৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে একদল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈঠক করেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে। জনপ্রশাসনের প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক জানিয়েছেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কোনো কর্মচারীকে অনুকম্পা দেখানো হবে না। বিষয়টি সরকার গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাকরিরত যেসব কর্মচারী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ অনুযায়ী। এ অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কার্যে লিপ্ত হয়, যাহার কারণে অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনীহার সৃষ্টি হয় বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, এ ধরনের অপরাধ করলে কর্মচারীদের সরকার তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত, অব্যাহতি, বেতন কমানো বা পদাবনমিত করতে পারে।’  তালিকা চূড়ান্ত : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারের নীতিনির্ধারকদের নির্দেশে একাধিক প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আমলাদের তালিকা করার কাজ শুরু করে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই তারা তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলে। গত রবিবার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে তালিকা পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে তা পৌঁছে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তালিকায় বর্তমানে চাকরিরত ২২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম রয়েছে। তা ছাড়া আরো ১১ জন সাবেক আমলার নামও তালিকায় এসেছে। তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আবদুল খালেক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বখতিয়ার আহম্মেদ, ইবাদত আলী, সিনিয়র সহকারী সচিব এহসানুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (বর্তমানে প্রেষণে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত) বাদিউল কবির, প্রশাসনিক কর্মকর্তা তৌফিক আহম্মেদ, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, পল্লী উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মান্নান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়াজী ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম, উপসচিব ফজলুর রহমান, মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব এ এস এম আবদুল হালিম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, সাবেক কর্মকর্তা আফতাব আহম্মেদ, সাবেক উপসচিব আসলাম ইকবাল, সাবেক উপসচিব এস কে বশির প্রমুখ। যুগ্ম সচিব এ কে এম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এ অভিযোগের মধ্যেই গতকাল তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে সরকার। তাঁর চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তাঁকে ১৯৭৪ সালের সরকারি কর্মচারী অবসর আইনে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর উত্তরা ষড়যন্ত্রের বৈঠকে অংশ নেওয়ারও অভিযোগ ছিল। এর পর থেকেই সরকার তাঁকে ওএসডি করে রাখে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার অভিযোগে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কাজী জহিরকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া (ওএসডি) হয়েছে। তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন উপসচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁকে গতকাল লাইব্রেরিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার কালের কণ্ঠকে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুলশান বৈঠকে উপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ : বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে একাধিক স্থানে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করেছিল পুলিশ। খালেদা জিয়ার বৈঠক শেষে আমলারা বের হওয়ার সময় সিসি ক্যামেরায় ওই সব দৃশ্য ধরা পড়ে। তা ছাড়া বেসরকারি একাধিক টেলিভিশনও সাবেক ও বর্তমান আমলাদের ছবি প্রকাশ করে। বৈঠকের খবর নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে মাঠে নেমে পড়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গেটসহ কয়েকটি স্থানে স্থাপিত ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের ছবি ফুটে উঠেছে ফুটেজে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজেই বৈঠকে থাকা আমলাদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে তাঁরা বৈঠক করেছিলেন সে প্রমাণাদি আমাদের কাছে আছে। কিছুতেই তাঁরা রেহাই পাবেন না।’ দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নজরদারিতে : খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমলাদের বৈঠকের খবর ফাঁস হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। তাঁরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে হার্ডলাইনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা পেয়ে মাঠে নামেন গোয়েন্দারা। সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বিএনপি-জামায়াত সর্মথক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরদারির আওতায় আনা হয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরের কক্ষে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোথায় যাচ্ছেন ও কী করছেন, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ধরা খাচ্ছেন বিএনপির একাধিক নেতা : খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের সময় বিএনপির যেসব নেতা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র হিসেবে তাঁদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁদের তালিকা করেছেন গোয়েন্দারা। ওই তালিকায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচজন প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। তা ছাড়া খালেদা জিয়ার অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরও নাম আছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। অভিযুক্তরা বলেন... : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম মিয়াজী ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলামকে ওএসডি (দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে) করা হয়েছে। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার মো. আসাদুজ্জামানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতেন। তৌফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী হয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্যালয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ ইব্রাহিম মিয়াজী বলেছেন, ‘সরকারের কর্মচারী হয়ে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। তার পরও বলতে হচ্ছে, আমি ওই রাতে টেলিভিশনে খেলা দেখছিলাম। সকালে উঠে খবরের কাগজে আমার নাম দেখি। আমি কোনো বৈঠকে অংশ নিইনি। সরকারের কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমার নাম দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। কারণ ওই দিন আমি বগুড়ায় ছিলাম। আমার পিতা অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। আমি ছুটি নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে ছুটির দরখাস্তও রয়েছে। আর তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে আমি ঢাকায় ছিলাম, না বগুড়া ছিলাম তা প্রমাণ করা কোনো কঠিন কাজ না। আমি যে বাসে গেছি, সে টিকিটও আমার কাছে রয়েছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বগুড়ায় গিয়ে তা প্রমাণ করতে পারেন।’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (বর্তমানে প্রেষণে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কর্মরত) বাদিউল কবিরের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ছিলাম না। একজন কর্মচারীর পক্ষে এ ধরনের বৈঠকে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’ এ ছাড়া অভিযুক্ত অন্য অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী গুলশান বৈঠকে অংশ নেননি বলে জানিয়েছেন। তাঁদের ইচ্ছাকৃত ফাঁসানো হচ্ছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। এদিকে অভিযুক্ত কর্মচারীদের নামের তালিকার পরিসর বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযুক্তরা অভিযোগ করেছেন। তাঁদের মতে, ক্ষমতাসীন দলপন্থী কর্মচারী সংগঠনের নেতারা তাঁদের প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের নাম যোগ করে দিচ্ছেন। এ কারণে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের নামের তালিকা বড় হচ্ছে। এ তালিকা আরো বড় হবে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলপন্থী সংগঠন সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সচিবালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমরা কয়েকজন গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করি। সেখানে আমরা বলেছি, যাঁরা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের নামই যেন তালিকাভুক্ত করা হয়। বৈঠকে যোগ না দিয়েও যেন কোনো কর্মচারী হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে বলেছি। এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তালিকার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত হতে পারে। আপাতত আমরা অন্তত ৩৩ জনের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওই তালিকার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। আমাদের অনুসন্ধান চলছে। যাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ গোয়েন্দাদের সুপারিশ : আমলাদের ব্যাপারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নানা সুপারিশ করেছে। সম্প্রতি দাখিল হওয়া রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ বৈঠক করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শী আমলাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে আইনের আওতায় আনা যেতে পারে। এসব বিষয়ে সরকার কঠোর না হলে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকবে। ওই সব আমলা সরকার উৎখাতের জন্য ‘জনতার মঞ্চ’ বানিয়েও ফেলতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বিষয়ে মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক সচিব ও রিটায়ার্ড ব্যুরোক্রেট ফাউন্ডেশনের সদস্য ব্যারিস্টার হায়দার আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ওই দিনের বৈঠকে ছিলাম না। তবে ওই বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরাই ছিলেন বলে শুনেছি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হলে, সেটা হবে বানোয়াট। কারণ অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মচারী রাজনীতি করতেই পারেন। আর যাঁরা চাকরিতে আছেন, তাঁরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন না- এটা ঠিক। কিন্তু প্রশাসনের চিত্রটা দেখলে বাস্তব অবস্থা বোঝা যাবে। প্রায় এক হাজার কর্মচারী ওএসডি হয়ে আছেন। তাঁদের হতাশা জন্মানো বিচিত্র কিছু না। বিপরীত চিত্র দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলপন্থীদের বেলায়। তাঁরা হুটহাট করে পদোন্নতি পেয়ে যান। এ অবস্থা কী একটা সভ্য সমাজে চলতে পারে?

No comments:

Post a Comment