Wednesday, December 31, 2014

এ হাসি ছড়িয়ে গেল সবখানে:যুগান্তর

জেএসসি-জেডিসিতে পাস বেড়েছে যুগান্তর রিপোর্ট জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার
দিকে সারা দেশে একযোগে জেএসসি ও জেডিসির এ ফল প্রকাশ করা হয়। একই সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষার এ দুটি ধারায়ই এবার পাসের হার বাড়লেও আশংকাজনক হারে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষামন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ফল প্রকাশের আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা তখন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ও তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমে গেলেও সার্বিক পাসের হার এবং শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি ও শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হ্রাসের কারণে এবার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মাঝে আনন্দের ফোরায়া ছিল তুলনামূলক বেশি। ফল হাতে পাওয়ার পর স্কুলে স্কুলে কিশোর-কিশোরীরা আনন্দে মেতে ওঠে। হর্ষধ্বনি আর উল্লাসে স্কুলে স্কুলে উৎসবমুখর পরিবেশ এনে দেয়। সে সঙ্গে কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীরা ড্রাম, বাঁশি ও ঢোল বাজিয়ে সাফল্য উদ্যাপন করে। তাদের সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এবার জেএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৯ দশমিক ৮৫ ভাগ। গতবছর ছিল ৮৯ দশমিক ৭১ ভাগ। সে হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে। এ স্তরে ২০১২ সালে পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ১১ ভাগ। তার আগের বছর ছিল ৮২ দশমিক ৬৭ ভাগ। আর ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো নেয়া জেএসসিতে পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৩৪ ভাগ। আর এবার জেডিসিতে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫০ ভাগ। গতবছর ছিল ৯১ দশমিক ১১ ভাগ। ২০১২ সালে এটা ছিল ৯০ দশমিক ৮৭ ভাগ। এর আগের বছর ছিল ৮৮ দশমিক ৭১ ভাগ। তারও আগে জেডিসিতে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ০৩ ভাগ। এদিকে এবার জেএসসি ও জেডিসি মিলে গড় পাসের হার ৯০ দশমিক ৪১ ভাগ। গতবছর এটা ছিল ৮৯ দশমিক ৯৪ ভাগ। ২০১২ সালে এ হার ছিল ৮৬ দশমিক ৯৭ ভাগ। ২০১১ সালে ছিল ৮৩ দশমিক ৭১ ভাগ। সে হিসাবে এবার এ স্তরে পাসের হার বেড়েছে দশমিক ৪৭ ভাগ। এবার উভয় ধারায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ জন। এর মধ্যে স্কুলের আছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪৫ আর মাদ্রাসায় ১৯ হাজার ৯০ জন। সে হিসাবে এবার উভয় ধারায় ১৫ হাজার ৯৭৩টি জিপিএ-৫ কমেছে। গতবার উভয় ধারায় মোট জিপিএ-৫ লাভ করেছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ২০৮ জন। এর মধ্যে স্কুলে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯৯৭ আর মাদ্রাসায় ১৯ হাজার ২১১ জন। ২০১২ সালে উভয় ধারায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৬ হাজার ৯৪২ জন। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৮৫২ জন। ২০১০ সালে বছর স্কুল ও মাদ্রাসা মিলিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ৫৫৬ জন। ফলাফল প্রকাশকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের সংখ্যা, পাসের হার, ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হ্রাস, শতভাগ পাস করানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকেই উন্নতি হয়েছে। তিনি এ সময় কৃতী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা ভালোভাবে মনযোগ দিয়ে পড়বে। কেননা, আগামী দিনে দেশ ও জাতির সেবায় আÍনিয়োগ করবে তারাই। আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার ও হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন। এবার জিপিএ-৫ কম পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হয়তো গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আসলে আমাদের সম্পদ কম। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকও কম। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রয়োজনীয় শিক্ষক দেয়া যায় না। তবে এ বিষয়ে ভবিষ্যতে নজর রাখা হবে। এবারও সম্পূর্ণ ‘পেপারলেস’ (কাগজে লিখিত নয়) ফল প্রকাশ করা হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মনজুরুল কবীর যুগান্তরকে জানান, তারা তিনটি মাধ্যমে ফল প্রকাশ করেছেন। ই-মেইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলা প্রশাসনের ফল দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনে, মোবাইল ফোনে এসএমএসেও ফল পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এসএসসির আদলেই ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসি আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসি পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। জেএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৭ লাখ ২৯ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৭ জন। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪৫ জন। গত বছর ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩১৩ জন। ৮টি সাধারণ বোর্ডের মধ্যে পাসের হারের দিক থেকে বিগত তিন বছরের মতো এবারও প্রথম হয়েছে বরিশাল বোর্ড। বোর্ডটিতে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯২ ভাগ। গত বছর ছিল ৯৩ দশমিক ৮২ ভাগ। আর সবচেয়ে কম পাসের রেকর্ড এবারও ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম বোর্ড। গত বছর সেখানে পাসের হার ৮৬ দশমিক ১৩ ভাগ। এবার পাস করেছে ৮৪ দশমিক ২৯ ভাগ। এ ছাড়া এবার ঢাকা বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৬ ভাগ, গতবার ৮৭ দশমিক শূন্য ৯৩ ভাগ, রাজশাহী বোর্ডে এবার ৯৫ দশমিক ৩২ ভাগ, গতবার ৯৩ দশমিক শূন্য ৮৮, কুমিল্লা বোর্ডে এবার ৯৩ দশমিক ৭৫ ভাগ, গতবার ৯০ দশমিক ৪৫, যশোর বোর্ডে এবার ৯১ দশমিক ৯৬ ভাগ, গত বছর ৮৯ দশমিক ০৩, সিলেট বোর্ডে এবার ৯১ দশমিক ৫৭ ভাগ, গতবার ৯১ দশমিক ১৫ এবং দিনাজপুর বোর্ডে এবার ৯০ দশমিক ১০ ভাগ ও গত বছর ৮৮ দশমিক ৯১ ভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। জেডিসিতে ৯৩.৫০ শতাংশ উত্তীর্ণ : মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় ৯৩.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। মোট ৩ লাখ ১১ হাজার ৫৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ লাখ ৯১ হাজার ৩০৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। যার মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ হাজার ২৯০ জন। বোর্ডটিতে পাসের হারে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় বোর্ডটিতে জেডিসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। গত বছরে বোর্ডটি থেকে জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৮০ জন। এ বছর তা কমে ৩ লাখ ১১ হাজার ৫৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে এ বছর বোর্ডটিতে পাসের হার বেড়েছে। গত বছর মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৬ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। এ বছর উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৩০৫জন। সে হিসাবে গত বছর মোট ৯১.১১ শতাংশ শিক্ষার্থী জেডিসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এ বছর তা ২.৩৯ শতাংশ বেড়ে ৯৩.৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ বছর বোর্ডটিতে গত বছরের থেকে ৭৯ জন বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পিইসি-ইবতেদায়িতে ছন্দপতন যুগান্তর রিপোর্ট সাফল্যে উদ্ভাসিত সোনামণিদের কলকাকলিতে মুখর ছিল দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো। তাদের কচিমুখে ছিল কৃতিত্বের হাসি। জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী’ ও ‘ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী’তে অংশ নিয়েছিল তারা। সেই পরীক্ষার ফল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়। পরীক্ষার ফল জানতে পৌষের শীতের জড়তা কাটিয়ে শিশুরা সকালেই ভিড় করে স্কুল আঙিনায়। পরে সাফল্যের বার্তা নিয়ে বাড়ি ফেরে। ষষ্ঠবারের মতো প্রাথমিক আর পঞ্চমবারের মতো ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হল এবার। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ষষ্ঠ বছরে এসে প্রাথমিকের পাসের হার ৯৭ দশমিক ৯২ ভাগ। আর ইবতেদায়ির পাসের হার ৯৫ দশমিক ৯৮ ভাগ। গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৮ ভাগ, আর ইবতেদায়িতে ৯৫ দশমিক ৮০ ভাগ ছিল। এর আগের বছর প্রাথমিকে পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৩৫ ভাগ। আর ইবতেদায়িতে ছিল ৯২ দশমিক ৪৫ ভাগ। মূলত দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা এই দুটি সমাপনীতে ২৯ লাখ ৪৯ হাজার ৭৫৫ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৬ জন। প্রাথমিকে মোট পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ২৬ লাখ ৮৩ হাজার ৭৮১ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৩ জন। অপরদিকে ইবতেদায়িতে অংশগ্রহণ করেছে দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯৭৪ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ ৫৫ হাজার ২৭৩ জন। পাসের হারের সঙ্গে প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমেছে, এ সংখ্যা কমেছে ইবতেদায়িতেও। প্রাথমিক সমাপনীতে গত বছরের তুলনায় ১৬ হাজার ৫৫০ ও ইবতেদায়িতে ৮১২ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থী কমেছে। এবার দুটি সমাপনীতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার ৮৫২ জন। এর মধ্যে প্রাথমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৪১১ জন, অপরদিকে ইবতেদায়িতে পেয়েছে ছয় হাজার ৪৪১ জন। গত বছর মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ২১৪ জন। এর মধ্যে প্রাথমিকে দুই লাখ ৪০ হাজার ৯৬১ জন, অপরদিকে ইবতেদায়িতে সাত হাজার ২৫৩ জন। প্রাথমিকে নিবন্ধিত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, জিপিএ-৫ প্রাপ্তি, পাসের হার ও অনুপস্থিত ছাত্রছাত্রীর হারের ভিত্তিতে গত কয়েক বছরের মতো এবারও সারা দেশের মধ্যে ঢাকার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় শীর্ষে অবস্থান করছে। গত বছরের মতো এবারও দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে ঢাকার অপর দুই প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুল। প্রাথমিকে সর্বোচ্চ পাসের হারের দিক থেকে ৭ বিভাগের মধ্যে বরিশাল (পাসের হার ৯৮ দশমিক ৭১ শতাংশ) ও ৬৪ জেলার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ (পাসের হার ১০০ শতাংশ) শীর্ষে রয়েছে। ৫০৯ উপজেলার মধ্যে ২২ উপজেলায় শতভাগ পাস করেছে। সর্বনিু পাসের হার সিলেট বিভাগে (পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ)। চুয়াডাঙ্গা জেলায় পাসের হার (৮৯ দশমিক ৮০) সর্বনিু। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় পাসের হার সর্বনিু ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ।  

No comments:

Post a Comment