Sunday, January 4, 2015

কাউন্সিল না হওয়ায় নেতৃত্বে অনভিজ্ঞরা:কালের কন্ঠ

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ ৬৮ বছরে পদার্পণ করল। কিন্তু দুর্বল নেতৃত্বের কারণে ক্ষমতাসীন আও
য়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্র সংগঠনটি অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছে না। নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ায় বয়সের ফাঁদে পড়ে যোগ্য নেতারা বাদ পড়ে যাচ্ছেন। আর নেতৃত্বে আসছেন অনভিজ্ঞ ও অযোগ্যরা। তাঁদের দুর্বল নেতৃত্বের কারণে সংগঠনে দেখা দিচ্ছে নানা বিশৃঙ্খলা। ক্ষুণ্ন হচ্ছে ভাবমূর্তি। ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ পার হয়ে গেছে ২০১৩ সালে। দুই বছর মেয়াদি এই কমিটি এখন চার বছর পার করার পথে। তবুও সংগঠনটির কাউন্সিলের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে কেন্দ্রীয় অনেক ত্যাগী ও যোগ্য নেতা সংগঠন থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। কারণ সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী ২৯ বছরের বেশি বয়সী কেউ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারেন না। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রবিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় সংগঠনটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আওয়ামী লীগপ্রধানের কাছে এসব সংকটের কথা তুলে ধরতে পারেন। ছাত্রলীগের একজন সহসভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাদের সংগঠনের অভিভাবক। সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি সংগঠনের সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে অনেকেই সংকটগুলো তুলে ধরবেন। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ার পরও নেতারা পদ আঁকড়ে থাকায় বিভিন্ন পর্যায়ে সংগঠনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। এতে আমরা জনসমর্থন হারাচ্ছি, সমালোচনার শিকার হচ্ছি। এ ছাড়া নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ায় যোগ্য ও ত্যাগী অনেক নেতা নেতৃত্বে আসতে পারেন না। এতে সংগঠন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সুযোগ হলে এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাব।' জানতে চাইলে ছাত্রলীগের এক সহ-সম্পাদক বলেন, 'রবিবার (আজ) নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কথা বলার সুযোগ পেলে দ্রুত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের নির্দেশ দিতে অনুরোধ করব। বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ নেতার বয়স ২৯ পার হয়ে গেছে। বাকিদের বয়সও ২৯ পূর্ণ হওয়ার পথে। এমন অবস্থায় কমিটি না হলে পরে একেবারে আনাড়িদের নেতৃত্বে আনতে হবে।' বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত কাউন্সিল হতো। এমনকি একাত্তরের সংকটময় পরিস্থিতিতেও সংগঠনটির নিয়মিত কাউন্সিল হয়েছে। সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ১০ জুলাই। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ১-২ জন বাদে সবাই ইতিমধ্যে পরবর্তী কমিটিতে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বয়স ২৯ পার কিংবা বিয়ে করার কারণে। সাংগঠনিক সম্পাদক ও অন্যান্য সম্পাদকেরও একই অবস্থা। সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃত্বে আসার বয়সসীমা ২৯ নির্ধারণ করা হয়। বয়স নির্ধারণের কারণে সে সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা মারুফা আক্তার পপি, সাইফুজ্জামান শেখর, রফিক কোতয়াল ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদ পড়েন। আর ফাঁকে পেছনের সারির নেতা মাহমুদ হাসান রিপন সভাপতি ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী রোটন সাধারণ সম্পাদক হন। নিয়মিত কাউন্সিল না করে বয়সসীমা বহাল রাখায় ছাত্রলীগের পেছনের সারির অনেক নেতা গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। অন্যদিকে সামনের সারির অনেক নেতা সংগঠন থেকে ছিটকে পড়ছেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতেও বয়সসীমার কারণে বাদ পড়েন সে সময়ের জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা খায়রুল হাসান জুয়েল, আশরাফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানা টিপু, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। সামনের সারির নেতারা বাদ পড়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি হন বদিউজ্জামান সোহাগ, যিনি আগের কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আর আগের কমিটির সহ-সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম হন সাধারণ সম্পাদক।      

No comments:

Post a Comment