Wednesday, December 17, 2014

বিসিএস নিয়ে উৎকণ্ঠায় হাজারো চাকরিপ্রার্থী:নয়াদিগন্ত

বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, সময়মতো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা না হওয়া, লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় চাকরিপ্রার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একাধিক চাকরিপ্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসির নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। কেননা দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ৩৪তম বিসিএসের বি
জ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় দফা ফল প্রকাশ শেষে লিখিত পরীক্ষা হয়েছে প্রায় ৯ মাস আগে। কিন্তু এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে প্রবেশাধিকারের বয়সসীমা হারিয়েছেন। এখন তাদের মধ্যে হতাশা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তবে পিএসসি সূত্রে জানা যায়, ৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে।  দুই হাজার ৫২টি পদের বিপরীতে ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৩৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ২৪ মে অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এক লাখ ৯৫ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেন। দুই দফায় সংশোধিত ফলাফলে ৪৬ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। চলতি বছরের ৩১ মার্চ ৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা (বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা বাদে) শেষ হয়। লিখিত পরীক্ষার পর আট মাসের বেশি সময় কেটে গেলেও কবে নাগাদ পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না পিএসসি কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে ৩৪তম বিসিএসের অংশগ্রহণকারী চাকরিপ্রার্থীদের অপোর প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত পেরিয়ে গেছে ২১ মাস।  ৩৪তম বিসিএসে অংশগ্রহণকারী এক চাকরিপ্রার্থী বাবলু বলেন, বিসিএসের মতো সরকারি সংস্থার অধীনে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হলে পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা হয়। স্বল্প সময়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ না হওয়ায় অন্য পরীক্ষায় আবেদন করার আগ্রহ থাকে না। অপোর পর ফল প্রকাশিত হলেও অনেকেই ব্যর্থ হন। এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে যায়। কিন্তু তারা আদৌ জানেন না বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগ পাবেন কি না। তাই দ্রুততর সময়ে বা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ফল প্রকাশিত হলে চাকরিপ্রার্থীরা বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। ফল প্রকাশে বিলম্ব হলে দুশ্চিন্তায় সময় পার করতে হয়। ৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল দ্রুততম সময়ে প্রকাশের দাবি জানান তিনি।  অপর শিক্ষার্থী হাসান বলেন, কে না চায় যে, বিসিএস ক্যাডার হোক। কিন্তু পিএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হওয়ায় চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পথে। এখনো ৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। বুঝে উঠতে পারছি না ঠিক কী করব? পড়ালেখা শেষ হওয়ার প্রায় চার বছর হয়েছে। কিছু একটা করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ বেড়েছে। পিএসসির নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত হলে ভালো হয় বলে তার মন্তব্য। এ দু’জনের মতো অনেক শিক্ষার্থীই এ ধরনের মন্তব্য করেন। বিসিএসে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মতে এবং বিগত কয়েকটি বিসিএসের ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা যায়, লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হয়। এর পর মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।  সর্বশেষ নিয়োগ সম্পন্ন হওয়া ৩৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর। চার মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয় ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিলে। কিন্তু ৩৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ৩৩তম বিসিএসের চেয়ে দ্বিগুণ সময় পার হলেও ফল প্রকাশিত হচ্ছে না। পিএসসির একাধিক সদস্য জানান, আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোতে ১০ থেকে ১২ হাজার প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতেন। ৩৪তম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন ৪৬ হাজারের বেশি প্রার্থী। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কাট নম্বর (পাসের জন্য নির্ধারিত ন্যূনতম নম্বর) অপোকৃত কম ধরায় এমনটি হয়েছে। আরো জানা যায়, ৩৪তম পরীক্ষার বিপুল পরিমাণ খাতা মূল্যায়নে সংশ্লিষ্ট শাখা ও কর্তাব্যক্তিরা যে চাহিদা উপস্থাপন করেন, তা পুরোপুরি মেটানো হয়নি। উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পরীকদের কাছে খাতা দেরিতে পাঠানো হয়েছে। আবার বেশ কিছু খাতা এখনো পিএসসিতে এসে পৌঁছায়নি। টেবুলেশন প্রক্রিয়া মাঝপথে আটকে রয়েছে। তৎপরতা বৃদ্ধি করা না হলে চলতি ডিসেম্বরেও ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন-পিএসসির সদস্য ছিলেন অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী। কত সময় পরে বিসিএসের ফল প্রকাশ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই ফল প্রকাশ হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি পরীক্ষায় সময় বেশি লাগছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। সময় বেশি লাগার ফলে শিক্ষার্থীদের কারো কারো চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা থাকে না। এটা একটা সমস্যা। তিনি বলেন, প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার কাট নম্বর বৃদ্ধি করে দিলেই আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তাহলে ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া আরো সহজ ও দ্রুত হবে। তবে এগুলো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয় বলে মন্তব্য করেন ড. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী। ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ সম্পর্কে পিএসসির চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদকে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়ার বিধান রেখে এক হাজার ৮০৩টি পদের জন্য ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

No comments:

Post a Comment