Wednesday, December 17, 2014

সুন্দরবনে কাদামাটিতে আটকে গেছে ফার্নেস অয়েল:নয়াদিগন্ত

সুন্দরবনের ভেতরে ছোট-বড় নদী, খালের পাড়ের কাদামাটিতে থোক থোক অবস্থায় আটকে গেছে ফার্নেস অয়েল। নদী-খালের পাড়ে আটকে থাকা এসব ফার্নেস অয়েল কাদামাটি ভেদ করে আরো গভীরে ঢুকে যাচ্ছে। এ ছাড়া জোয়ার-ভাটার মাঝামাঝি সময়ে নদীর তলে জমছে ফার্নেস অয়েল।  গতকাল পুরো এলাকা ঘুরে আসা একটি পরিবেশবাদী দলের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঘটনাস্থল পূর্ব সুন্দরবনের মৃগমারীর এলাকার শ্যালা নদ
ীর বিভিন্ন পয়েন্টে দিনব্যাপী সরেজমিন পরিদর্শন করেন তারা।  নয়া দিগন্তের সাথে মোবাইলে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, ৯ ডিসেম্বর দুর্ঘটনার শিকার ওই কার্গো ট্যাংকারে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েল ছিল। বিভিন্ন হিসাবে বলা হয়েছে, এলাকাবাসীর সাহায্য-সহযোগিতায় দেশী পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রায় ৪০ হাজার লিটার তেল নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন বাকি তেল কই? এলাকাবাসী জানান, জোয়ার-ভাটার টানে অনেক দূর ভেসে গেছে নদীর পানির জন্য বিষাক্ত ফার্নেস অয়েল। কিন্তু এখন ফার্নেস অয়েল নদীর পাড় ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকার কাদামাটিতে ঢুকে গেছে। কারণ জোয়ার-ভাটার টানে নদী, সংলগ্ন খাল ও বনের গাছগাছালির গায়ে ইতোমধ্যে তেলের মোটা আস্তর জমা হতে শুরু করেছে। ফলে এমন অবস্থায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়াই স্বাভাবিক। ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বিপুল তেল নদী-খালের পাড় দিয়ে মাটির অনেক গভীরেও চলে যাবে, যা সুন্দরবনের নদীগুলোর পাড়ে গভীর মাটিতে ঢুকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করবে এই বনকে।  এ দিকে এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী নয়া দিগন্তের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিপুল তেল রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন প্রাণীর কী কী ক্ষতি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিংয়ে যেতে হবে। কারণ তেলমিশ্রিত পানি এসব অবুঝ প্রাণী সুন্দরবনের কোনো না কোনো নদী থেকে পান করবে। আর ফার্নেস অয়েলের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত প্রাণীদের অন্যরা খেয়ে ফেললে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে পুরো বনে। তাই আসলে বনের কী হবে তা নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিং দরকার।  এ দিকে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যাওয়া ওই টিমের একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন বাচ্চু জানান, বনের ভেতরে অনেক দূর ঢুকে গেছে তেল। জোয়ার-ভাটার কারণে পাড়ে থাকা অনেক গাছের অগ্রভাগে তেল জমে কুচকুচে হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বনের পাখপাখালি ওই সব ডালে বসলে তাদের গায়ে এগুলো লেগে যাবে। তিনি জানান, বনের ভেতরে অনেক পশুপাখির গায়ে তেল লেগে থাকা অবস্থায় স্থির হয়ে ঝিমুতে দেখেছেন। তিনি বলেন, আসলে বনে কী হয়েছে তা স্বচক্ষে না দেখলে কারো পক্ষেই বোঝা কঠিন। এ দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গতকাল বাগেরহাট মংলা প্রেস কাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পুরো পরিদর্শন টিমের সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে সুন্দরবনের প্রতি চরম অনীহা ও উদাসীনতার অভিযোগ আনেন। তারা বলেন, সরকারের চরম উদাসীনতার কারণে দেশের একমাত্র ম্যানগ্রাভ ফরেস্ট সুন্দরবন আমরা হারাতে বসেছি। সংবাদ সম্মেলনে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ছাড়াও অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস মুভমেন্টের (সিএইআরএম) চেয়ারম্যান ড. মো: জিয়াউর রহমান, বাগেরহাট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শেখ মো: জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট মেহেদী হাসান মেহেদী প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment