Wednesday, December 3, 2014

জঙ্গি ঠেকাতে কড়াকড়ি বিদেশিদের ওপর:কালের কন্ঠ

ইজতেমায় যোগদানের সুযোগে যাতে দেশে জঙ্গি অনুপ্রবেশ না ঘটে সে লক্ষ্যে চারটি দেশের নাগরিকদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দেশগুলো হলো পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়া। বিমানবন্দরে এসে নামার পর ভালো করে খোঁজ নিয়ে তবেই ভিসা দেওয়া হবে ওই চার দেশের নাগরিকদের। এ ছাড়া লাইবেরিয়া, গিনি, নাইজেরিয়া, মালি ও সিয়েরা লিওনে এবোলা ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ায় এসব দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান নিরুৎসাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তারা ইজতেমায় যোগ দিতে আসতে চাইলে 'এবোলা ফ্রি' সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। আগেরবারের মতো এবারও দুই দফায় টঙ্গীতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম দফায় ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় দফায় ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুত, অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রদানসংক্রান্ত বিষয় দেখা এবং ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে গত ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এসব কমিটি গঠন করা হয়। ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপসহ অন্যান্য সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায়। আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ, র‌্যাব মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও তাবলিগ জামাতের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আসা চারটি দেশের মুসল্লিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই সব দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশিদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার জন্য 'ভিসা সেল' গঠন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, ওই দিনের সভায় ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে শিথিলতা রয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এত সহজে এই ভিসা পাওয়া যায় না।' তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইএস এবং আল-কায়েদার তৎপরতার প্রেক্ষাপটে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা দরকার। এ ছাড়া আফ্রিকার পাঁচটি দেশে এবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ায় ওই সব দেশের যেসব মেহমান আসবেন তাঁদের 'এবোলা ফ্রি' সার্টিফিকেট নিয়ে না এলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া সমীচীন হবে না। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই সেসব দেশ থেকে আগত মেহমানদের তাবলিগ জামাতের বা মারকাজের সুপারিশ অনুযায়ী অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের আবেদনে ভিসা শ্রেণি 'টিআই' লেখা থাকতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী ৩০ দিনের জন্য ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে যারা চিল্লায় যেতে ইচ্ছুক তাদের আবেদনে তাবলিগ জামাত বা মারকাজের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসার মেয়াদ ৪৫ দিন করা যেতে পারে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বিদেশি মেহমানরা যাতে নিজ দেশ থেকে নিয়মিত ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন সেজন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে ফ্যাঙ্যোগে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। গত বছর ১৭ হাজার বিদেশি এসেছিলেন : সভায় আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, গত বছর প্রায় ১৭ হাজার বিদেশি মেহমান অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে এদেশে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুই হাজার মেহমান চিল্লা দেওয়ার কারণ দেখিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিদেশ থেকে আগত মেহমানদের ডাটাবেজ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে তাঁদের ভিসাসংক্রান্ত সেবা দেওয়া সহজ হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ওই সভায় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশিদের ভিসা দেওয়া, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা, মশা নিধন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ ২১টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইজতেমাস্থলের আশপাশে সিনেমার 'অশ্লীল' পোস্টার ও অবৈধ অপ্রয়োজনীয় ব্যানার, ফেস্টুন ইত্যাদি অপসারণ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। টঙ্গী এলাকার সিনেমা হলের মালিকদের ইজতেমা শুরুর দুই দিন আগে থেকে সিনেমা হল বন্ধ রাখার জন্য গাজীপুরের জেলা প্রশাসক চিঠি দিয়ে জানাবেন। কোনো বিল বোর্ডে যাতে আপত্তিকর পোস্টার না থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।      

No comments:

Post a Comment