Wednesday, December 3, 2014

আইনের লোকের বেআইনি গাড়ি:কালের কন্ঠ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শাহবাগমুখী রাস্তায় গাড়ির জটলা ঠেলে শাহবাগ থানার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল জিপগাড়িটি। গত ৩০ নভেম্বর দুপুর ২টা ২৬ মিনিটের ঘটনা। গাড়ির নম্
বর ঢাকা মেট্রো-ঠ-১১-৫০৯১; থানার কর্মকর্তাদের নিয়ে চলাচল করে এটি। স্টার্ট বন্ধ করে চালকের আসন থেকে বের হয়ে এলেন কনস্টেবল মো. সারওয়ার আলম। গাড়ির সামনের বাঁ পাশের একটি অংশ চ্যাপ্টা হয়ে আছে। গাড়ির বনেট (ইঞ্জিনের ঢাকনা) খুলতে খুলতে সারওয়ার বললেন, পুলিশের গাড়ি তো, তাই অবস্থা ভালো না। ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। চলতে চলতে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আজ কি বন্ধ হয়েছিল? জবাবে তিনি বলেন, প্রায় দিনই বন্ধ হয়ে যায় স্টার্ট। ১৮ বছরের পুরনো এই গাড়ি নিয়েই ডিউটি করতে হয়। জানা গেল, গাড়িটির ফিটনেস নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় না। কারণ পুলিশের গাড়ির নাকি ফিটনেস লাগে না। সারওয়ার বললেন, রাস্তায় স্টার্ট বন্ধ হলে রেকার দিয়ে আনা হয়। থানার পাঁচটি গাড়ির মধ্যে চারটির অবস্থাই খারাপ। অন্য একদিনের ঘটনা : ১৪ নভেম্বর দুপুর আড়াইটা। রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে টহল দিতে বের হন উত্তরা পূর্ব থানার পাঁচ-ছয়জন পুলিশ সদস্য। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি পিকআপ ভ্যান। রংচটা গাড়িটির চেহারা বলতে কিছু ছিল না। ভাঙাচোরা ওই গাড়ি দিয়েই পুলিশ কর্তব্য পালন করছিল। ভেতরে তাকিয়ে দেখা গেল, চালকের আসনটা জোড়াতালি দেওয়া। অপারেশনে যেতে চালক দ্রুত স্টার্ট করার চেষ্টা করলেন; কিন্তু হচ্ছিল না। পরে আরেকটি গাড়িতে করে অপারেশনে যান তাঁরা। ঢাকা মহানগরীর সবখানে দিনেরাতে চোখে পড়ে ফিটনেসহীন গাড়িতে পুলিশের চলাচল। নিজেদের থানার গাড়ির যেমন ফিটনেস নেই, তেমনি বাইরে থেকে নেওয়া গাড়িগুলোও আনফিট। অভিযানের জন্য রাস্তায় বের হলে এভাবে প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির স্টার্ট। মহানগর পুলিশের প্রবীণ সদস্যরা কৌতুক করে কালের কণ্ঠকে বলেছেন, পুলিশের গাড়ির চেয়েও জোরে চলে রিকশা। রাজধানীতে পুলিশের ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল করছে নির্বিঘ্নে। অথচ নিরাপদ সড়কের ব্যবস্থা করতে পুলিশেরই আইন প্রয়োগ করে আনফিট গাড়ি আটক করার কথা। পুলিশের এসব গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা ঠিকমতো হয় কি না বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) তা জানে না। বিভাগীয় শহরে অবস্থা আরো খারাপ; মফস্বল এলাকার পুলিশের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ। অন্যান্য স্থানের মতো দুর্গম জনপদ খাগড়াছড়িতেও পুলিশ চলাচল করে ভাড়া গাড়িতে। চলতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। গত ৮ নভেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির আলুটিলায় পুলিশবাহী একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেলে কনস্টেবল আবু বকর নিহত হন। আহত হন ২৫ জন। কর্তব্য পালন শেষে ভাড়া করা গাড়িতে পুলিশ সদস্যরা আলুটিলা থেকে জেলা সদরে ফিরছিলেন। খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, সদর থানায় একটি মাত্র পিকআপ আছে। ৫০ কিলোমিটার এলাকায় এই গাড়ি দিয়েই কর্তব্য পালন করতে হয়। পুলিশ লাইনের ব্র্যাডফোর্ড গাড়িটি অনেক পুরনো। এ জন্য ফিটনেস নেই এমন গাড়িও রিকুইজিশন করতে হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ নভেম্বরের দুর্ঘটনার পর ভাড়া করা ওই গাড়িটির চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গাড়িটির ব্রেক ফেল করেছিল। আর এটি ছিল চলাচলের অনুপযুক্ত। কুমিল্লা থেকে ভাড়া করা হয়েছিল গাড়িটি। সূত্র জানায়, অভিযানে ব্যবহারের জন্য পুলিশের কাছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আছে ৯ হাজার ৪১৬টি। এসবের মধ্যে দুই হাজার ৮১৪টি গাড়ি নতুন। দাঙ্গা-হাঙ্গামার কাজে এসব গাড়ি ব্যবহার করার কথা। বাকি ছয় হাজার ৬০২টি গাড়ি অভিযানে ব্যবহার করার জন্য। এগুলোর মধ্যে ২০ বছর বা এরও বেশি পুরনো গাড়িই বেশি; তিন হাজার ৩০০ গাড়ি ত্রুটিপূর্ণ। দুই হাজার ৬৪৭টি মোটরসাইকেল। এসবের বেশির ভাগের নম্বর প্লেট নেই। পিকআপ ভ্যান আছে দুই হাজার; ৭৫০টি পিকআপ চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে বেশ আগে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য ৫৬০টি জিপ, ৯২টি প্যাট্রল জিপ ও ৬০টি মাইক্রোবাস রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের আনা-নেওয়ার জন্য ৩৩টি বাস ও ১৯টি মিনিবাস রয়েছে। ৭২টি হাইওয়ে প্যাট্রল কার, ৯২টি প্রিজন ভ্যান, ২২টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ৩৫০টি ট্রাক আছে। এগুলোর বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক হাজার ৪১২টি গাড়ির মধ্যে মোটরসাইকেল ৯৫২টি, পিকআপ ভ্যান ২৬০টি, জিপ ৯২টি, প্যাট্রল জিপ ২১টি, মাইক্রোবাস ২৬টি, বাস ১৬টি, রায়ট কার আটটি, অ্যাম্বুল্যান্স পাঁচটি ও প্রিজন ভ্যান ২২টি। দেশের চার শতাধিক থানার গাড়ির প্রায় অর্ধেক অচল হয়ে থাকায় পুলিশ অভিযানে বের হতে গিয়ে ভাড়া করছে বেসরকারি বাস, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। কিন্তু এগুলোর বেশির ভাগ চলাচলের অনুপযোগী। পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিটি থানায় অন্তত তিনটি করে সরকারি পিকআপ ভ্যান থাকার কথা। সব থানায় পুলিশ সদস্যরা গাড়ি পাচ্ছেন না। গাড়ি না থাকা বা পুরনো গাড়ির কারণে দ্রুত অভিযান চালানো যাচ্ছে না; আসামি ধরাও সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, পিকআপ ভ্যান, জিপ, প্যাট্রল জিপ, মাইক্রোবাসের কোনোটির হেডলাইট জ্বলে না, কোনোটির সামনের অংশ চ্যাপ্টা হয়ে গেছে, কোনোটি রংচটা, কোনোটির ব্রেক নেই। সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যমান অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁদের ফিটনেসহীন গাড়ি পথচারী বা অন্য গাড়িচালকদের ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 'পুলিশ' স্টিকার লাগিয়ে গত ৩০ অক্টোবর একটি প্রাইভেট কার রাজধানীর বনানীতে সঞ্জয় নামে এক পথচারীর জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উদ্যোগে গত ১০ নভেম্বর অবৈধ গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু অভিযানে পুলিশের ফিটনেসহীন গাড়ি ধরা হচ্ছে না। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অবৈধ গাড়ি চেকিংয়ের ক্ষমতা পুলিশেরও আছে। আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।' বুয়েটের অধ্যাপক ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশ সদস্যরা অনুপযুক্ত গাড়িতে চড়তে বাধ্য হচ্ছেন বা চড়ছেন। অনুপযুক্ত গাড়ি ভাড়া করে বা লাইসেন্সহীন চালকের হাতে জীবন সঁপে দিয়ে তাঁদের অভিযানে বের হতে হয়। এটা খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি। ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী বেশির ভাগ গাড়ির অবস্থা করুণ উল্লেখ করে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তা থেকে রেকার দিয়ে টেনে নিয়ে রাখতে হয় নিরাপদ জায়গায়। স্টার্ট বন্ধ হলে চালক ও পুলিশ উভয়ে বিব্রত হয়। পুলিশ সদস্যদেরই বিকল গাড়ি ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। মফস্বলে গাড়ির অভাবে পুলিশ সদস্যরা হেঁটেও আসামি ধরতে যান। রাজধানীর সবুজবাগ থানার কনস্টেবল জুলহাস কালের কণ্ঠকে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, রাতের বেলায় টহল দিতে গেলে হঠাৎ গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। তখন টর্চ লাইট জ্বালিয়ে পথ চলতে হয়। বর্ষার দিনে সামান্য বৃষ্টি হলেই গাড়ি স্টার্ট নেয় না। রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে বহুবার অন্য গাড়িতে উঠতে হয়েছে। রাজধানীর শ্যামপুর থানার ওসি নূরে আলম মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার থানায় চারটি গাড়ি আছে। একটির অবস্থা মোটামুটি ভালো। বাকিগুলোর দশা খারাপ। একটি পিকআপের অবস্থা শোচনীয়। এসব গাড়ির চেয়ে রিকশা আগে চলে। অপারেশন চালাতে গেলে মাঝ রাস্তায় গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। অভিযান আর চলে না। থানায় সত্বর উন্নত মানের গাড়ি দিলে আমাদের দুঃখ কমবে।' কিছুদিন আগে রাজধানীর জুরাইন রেলগেটের সামনে পুলিশের একটি পিকআপ বিকল হয়ে পড়লে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন গাড়ির চালক কনস্টেবল। তিনি কয়েকজন পথচারীর সহায়তায় গাড়িটি রাস্তার পাশে নেন। তাঁর ভাষায়, পুলিশের বেশির ভাগ গাড়িই অকেজো। মেরামত করলেও এগুলো নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষ জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জিপগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। এসব গাড়ির গতিবেগ ঘণ্টায় ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটারের বেশি উঠানো যায় না। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে গাড়ি চালাতে হয়। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি পড়লে স্টার্ট নিতে চায় না। রিকুইজিশন করা গাড়িগুলোও প্রায় অকেজো। এসব গাড়ির ফিটনেস নেই। পুলিশ সদস্যদের পরিবহনের জন্য রাজধানীতে চলাচলকারী বাসগুলোর অবস্থা শোচনীয়। আসন ছিঁড়ে গেছে, কোনোটির গ্লাস নেই, কোনোটির রং উঠে গেছে। বসার আসনের রেঙ্নি ছিঁড়ে ভেতরের ফোম বেরিয়ে পড়েছে। ফোমের ভেতর অসংখ্য ছারপোকা আর তেলাপোকা কিলবিল করে। ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য আনোয়ার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সিটে বসলেই পোকার কামড় খেতে হয়। বসে আবার উঠে দাঁড়াতে হয়। অনেকে গাড়িতে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যায়। কয়েক দিন আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের গ্যারেজে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০০-৬০০ গাড়ি রাখা হয়েছে মেরামতের জন্য। মোটরসাইকেল, জিপ ও অন্যান্য গাড়ির লাইন দেখে পুলিশ সদস্যরা জানান, 'রেগুলার ঠিক করা হয়। কিন্তু ফিটনেসহীন গাড়ি যতবার ঠিক করবেন ততবার নষ্ট হবে।' রাজধানীর তেজগাঁও থানার পাঁচটি গাড়ির চারটিই ফিটনেসহীন। থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, চারটি লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি আছে। এগুলো নিয়ে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখা যায়, অপরাধীদের গাড়ি অত্যাধুনিক। নানা কৌশল প্রয়োগ করে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতায় জিতে আসামি ধরতে হয় পুলিশকে। গেণ্ডারিয়া থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম বলেন, "থানায় মাত্র পাঁচটি গাড়ি আছে। তিনটি দিয়ে 'ঠেকা কাজ' চালিয়ে যাচ্ছি। চলন্ত অবস্থায় রাস্তার ওপর বন্ধ হয়ে যায় এসব গাড়ি।" রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, 'থানার সব কটি গাড়ি নড়বড়ে। এসব গাড়ি দিয়ে নিজেই চলা যায় না। তার পরও আমরা দায়িত্ব পালন করে আসছি।' গাড়ি উল্টে যায় : পুলিশ বহনকারী গাড়ি টায়ার ফেটে উল্টে যায় কিংবা নিয়ন্ত্রণ হারায় বেশির ভাগ সময়। গত ২০ মার্চ সকালে সাভারের তেঁতুলঝরা এলাকায় বাংলাদেশ সফরকারী দলের খেলোয়াড়দের গাড়ি বহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গাড়ি উল্টে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঢাকার একটি হোটেল থেকে বিকেএসপিতে অনুশীলনের জন্য ওই দলকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। খেলোয়াড়দের বাসের সামনে থাকা পুলিশের গাড়ির একটি টায়ার প্রচণ্ড শব্দে ফেটে গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কে উল্টে যায়। গত ১৭ মার্চ সিলেটের বিশ্বনাথে সড়ক দুর্ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হয়। উপজেলার বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়কের চানসির কাপনে ঘটনাটি ঘটে। ভোরে দায়িত্ব পালন করতে একটি প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে থানার এসআই ছায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ চানসির কাপনে গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি দেয়ালে ধাক্কা খায়। গত বছর ১৩ আগস্ট হরতাল চলাকালে চট্টগ্রাম মহানগরে সড়ক দুর্ঘটনায় চার পুলিশ ও তিন আনসার সদস্য আহত হন। তাঁদের বহনকারী গাড়ির চাকা ফেটে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, 'আমাদের গাড়ির সংকট রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গাড়িগুলো অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে, এটাও সত্য। জনস্বার্থে এসব গাড়ি চালাতে হচ্ছে। কোনো কোনো গাড়ি ২৪ ঘণ্টাও চালাতে হচ্ছে। আমাদের চাহিদা ও প্রাপ্তির মধ্যে অনেক ফারাক। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে জনস্বার্থেই। গাড়িগুলো নিয়মকানুন রক্ষা করেই চালিয়ে থাকি।' পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম বলেন, 'থানার কর্মপরিধি বিবেচনায় যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। তার পরও পুলিশ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অনুমোদিত যেসব যানবাহন আছে তা দিয়ে কোনো রকমে কাজ চলছে। আমাদের বহু বছরের পুরনো গাড়িও আছে, এগুলো চালানো উচিত নয়। এগুলো অনুপযোগী। বিকল্প না থাকায় এসব গাড়িতেই চড়তে হচ্ছে।' রংপুর রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হুমায়ুন কবির জানান, মফস্বলের থানাগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। যেগুলো আছে সেগুলোর বেশির ভাগ পুরনো। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে ওই সব যানবাহন ব্যবহার করতে হচ্ছে। পুলিশের দক্ষতা ও জনগণের জন্য সেবা বাড়াতে হলে পুলিশের পরিবহন সুবিধা আরো বাড়াতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (পরিবহন) একরামুল হাবিব বলেন, চাহিদার তুলনায় পুলিশের যানবাহন অনেক কম। অনেক সময় গাড়ির অভাবে থানা-পুলিশ অভিযান চালাতে সমস্যায় পড়ে। ঢাকার থানাগুলোতে যেসব পুরনো গাড়ি আছে সেগুলো মেরামত করে কোনো রকমে চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশের গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা নিয়মিত করা হয় কি না আমি জানি না। না হয়ে থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত। পুলিশের যদি ফান্ডের সমস্যা না থাকে তাহলে তাদের গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করারই তো কথা।'            

No comments:

Post a Comment