Sunday, December 14, 2014

ভাসমান তেল তুলতে ২১ খালে ১০০ নৌকা:নয়াদিগন্ত

সুন্দরবনের শ্যালা নদীসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা কালো তেলে ছেয়ে গেছে। নদীতীরে সুন্দরবনের গাছগুলোর নিচের অংশে তেলের কালো আবরণ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দুপুরে সুন্দরবন বিভাগের উদ্যোগে স্থানীয় এলাকাবাসী ১০০টি নৌকায় করে সুন্দরবনের ২১টি খাল থেকে তেল সংগ্রহ করছেন। তেলের কারণে সুন্দরবনের নদীতে কোনো মাছের দেখা মিলছে না। এমনকি স্থানীয় জেলেরা পর্যন্ত মাছ ধরতে নদীতে নামতে সাহস পাচ্ছেন না। এ দিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শা
জাহান খান গতকাল দুপুরে শ্যালা নদীর চ্যালেনটি পরিদর্শন করেছেন। এ সময় মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আজ রোববার মন্ত্রণালয়ের সভা থেকে বিকল্প রুট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ দিকে তেল অপসারণের জন্য মন্ত্রী স্থানীয় এলাকাবাসীসহ আশপাশের লোকজনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন। তেল এখন শ্যালা, পশুর, বলেশ্বর ও শিবসা নদী ছাড়িয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনেকে সুন্দরবনের জমতলা টাইগার পয়েন্টে তেলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।   সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকার লোকেরা বেকার হয়ে পড়ায় তারা এখন পাল্লা দিয়ে নদীর ভাসমান তেল তুলতে শুরু করেছেন। তবে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় মাছ না পাওয়ায় এ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। যতদূর তেল গড়িয়েছে ততদূরের নদী ও খালে মাছের কোনো দেখা নেই। মংলার জয়মনিসহ আশপাশ উপকূলের মানুষের প্রধান পেশা মাছ ধরা। তেলের কারণে অনেকের জাল নষ্ট হয়ে গেছে। খেটে খাওয়া এ মানুষ এখন অসহায় হয়েই টাকার লোভে নদী থেকে তেল সংগ্রহ করছেন। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ভোর থেকে নদীতে না দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তেল সংগ্রহ করতে দেখা গেছে অনেককে। এখানকার অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু জাল এবং ফোম দিয়ে তেল সংগ্রহ করছে। আর এ তেল কেনার জন্য পদ্মা অয়েল ডিপো কয়েকটি কেন্দ্র খুলেছে। কেন্দ্রগুলো ৩০ টাকা লিটারে এ তেল কিনে নিচ্ছে।   সুন্দরবনের আশপাশ এলাকায় চলছে স্থানীয় লোকজনকে তেল আহরণে উদ্বুদ্ধ করতে মাইকিং। এ দিকে শ্যালা নৌরুট দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে মংলা বন্দরে। কার্গো, কোস্টার সঙ্কটে বন্দরের পণ্য বোঝাই-খালাসকাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। মংলার সাথে সারা দেশের নৌযোগাযোগ প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। শ্যালা নদীর শরণখোলা এলাকায় আটকে পড়েছে পণ্যবাহী নৌযান। এতে ক্ষতির মুখে বন্দর ব্যবহারকারীরা।   মংলা বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি দ্রুত এ নৌরুটটি চালু করা হোক। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি প্রধান বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মো: নুরুল করিম বলেছেন, গবেষণা করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং ১৮ ডিসেম্বর তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। তিনি জানান, তেল নষ্ট করতে আসা জাহাজ কাণ্ডারি থেকে যে তরল রাসায়নিক পদার্থ ছিটানো হবে তাতে পরিবেশের ক্ষতি হবে কি না যাচাইয়ে বুয়েটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার পর পজেটিভ হলে কাণ্ডারি থেকে ওই তরল পদার্থ ছিটানো শুরু করা হবে।   পদ্মা অয়েল ডিপোর স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, গত দুই দিনে সনাতন পদ্ধতিতে তেল সংগ্রহের ফলে এখন পর্যন্ত মাত্র আট হাজার লিটার তেল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। যে গতিতে তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার লিটার তেল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। কিন্তু ‘ওটি সাউদার্ন স্টার-৭’ ৩৫৭ টন তেল নিয়ে শ্যালা নদীতে নিমজ্জিত হয়েছিল। ফলে তেলের বেশির ভাগই উদ্ধার হবে না।   এ দিকে সুন্দরবন বন সংরক্ষক (খুলনা অঞ্চল) কার্তিক চন্দ্র সরকার জানান, হরিণটানা পর্যন্ত তেল বিস্তৃতি লাভ করছে। তবে অন্য কোন কোন নদীতে তেল গেছে তা তিনি অবগত নন। এই তেলের কারণে সুন্দরবন অঞ্চলে সব ধরনের প্রজনন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি।   এ দিকে সুন্দরবনের মধ্য থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ ও ছড়িয়ে পড়া তেল দ্রুত অপসারণের দাবিতে বাগেরহাটের শরণখোলায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। গতকাল দুপুরে শরণখোলা প্রেস কাবের সামনে মানববন্ধনে পরিবেশবাদীরা সুন্দরবনের জীববৈচিত্রে দীর্ঘমেয়াদি হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।   আসছে লন্ডনের বিশেষজ্ঞ দল   খুলনা ব্যুরো জানায়,  সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে লন্ডনভিত্তিক একটি বিশেষজ্ঞ দল সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।   তিনি জানান, রোববারের মধ্যে এই দল ঢাকায় এসে পৌঁছবে। এরপর সরকারের সাথে তাদের বৈঠক হবে। সেখানে সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়া তেলের আস্তরণ কিভাবে সরানো যায়, তারা সে বিষয়ে পরামর্শ ও প্রস্তাব দেবে।

No comments:

Post a Comment