Sunday, December 14, 2014

দর–কষাকষি অব্যাহত, এক দিন বাড়ল সম্মেলন:প্রথম অালো

ঘোষিত সময়সূচি অনুসারে শুক্রবার ১২ ডিসেম্বরই জলবায়ু সম্মেলন, কপ-২০ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত না হওয়ায় ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে দর-কষাকষি অব্যাহত থাকায় সম্মেলনের সময় আরও এক দিন বাড়ানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে আবার বসে চূড়ান্ত আলোচনা। চুক্তির যে খসড়াটি শুক্রবার সম্মেলন সচিবালয় থেকে বিলি করা হয়, জলবায়ু আন্দোলনকর্মীদের তা হতাশ করেছে। অনেকেই আশা করেছিলেন, এই সম্মেলনে
গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সংকটাপন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়নে কার্যকর অগ্রগতি হবে। কিন্তু শেষ দিকে এসে দেখা গেল, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব থেকে যাওয়ার কারণে যে ‘সমঝোতামূলক খসড়া’ গৃহীত হতে পারে, তা খুবই দুর্বল। শুক্রবার সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরেন। ফ্রেন্ডস অব দি আর্থ-এর সভাপতি জাগদা মুনিক বলেন, ‘লিমাতে যা ঘটছে, তা বস্তুত জলবায়ু অন্যায়। অভিযোজনের জন্য অর্থ জোগাতে ধনী দেশগুলোর ব্যর্থতায় আমরা গভীরভাবে হতাশ।’ জুবিলি সাউথ এশিয়া প্যাসিফিকের পক্ষে লিডি নাকপিল বলেন, ‘আমাদের দাবি, এই সম্মেলনে অর্থায়নের একটি পথনির্দেশনা গৃহীত হোক। মনে হয় না আমাদের সে দাবি পূরণ হবে।’ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ-এর পক্ষে সামান্থা স্মিথ বলেন, ‘জলবায়ু সমস্যা সমাধানে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন, এখানে তার অভাব রয়েছে।’ বেসরকারি প্রতিনিধিদের হতাশার কারণ বোঝা কঠিন নয়। সব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে আলোচনারত দেশগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমেনি। শিল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল গোষ্ঠীর কেউই সুনির্দিষ্ট নিঃসরণ মাত্রা মেনে নিতে সম্মত নয়। অর্থায়নের জন্য নতুন প্রতিশ্রুতির যে দাবি উন্নয়নশীল দেশগুলো করেছিল, সে ব্যাপারেও উন্নত দেশগুলো সম্মত হয়নি। এই অবস্থায় সম্মেলন যাতে ভেস্তে না যায়, সে জন্য সম্মেলন সভাপতি, আয়োজক পেরুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও সমঝোতাপূর্ণ মনোভাবের আবেদন রাখেন। গ্রুপ অব ৭৭-ভুক্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিবাদের মুখে সংশোধিত খসড়া প্রত্যাহার করে তড়িঘড়ি করে যে নতুন খসড়া বিলি করা হয়, তা নিয়েও আপত্তি উঠেছে। কোনো কোনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, প্রতিটি ধারা বিবেচনার বদলে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে চেষ্টা চলছে, তাতে হিতে বিপরীত হবে। ৪০টি উন্নয়নশীল দেশ নিয়ে গঠিত ‘সমমনা উন্নয়নশীল দেশ’ নামে একটি অনানুষ্ঠানিক জোটের ফাঁস করা এক চিঠিতে এই মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনেও সমঝোতার নামে মূল সমস্যা পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। নিঃসরণ প্রশ্নে ইতিমধ্যে সম্মত সমঝোতা অনুসারে উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশগুলো তাদের পক্ষে বাস্তবসম্মত ও জাতীয় অগ্রাধিকারনির্ভর এমন মাত্রা নির্ধারণ করবে। কিন্তু কাগজে-কলমে দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দেবে, তাতে কী কী তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। আগামী বছর ডিসেম্বরে প্যারিসে যে জলবায়ু চুক্তি গৃহীত হওয়ার কথা, চীন, ভারত ও অন্যান্য উন্নয়শীল দেশ তার আগে নিজেদের নিঃসরণ মাত্রা ঘোষণা ও একে অপরের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্র উপস্থিত করার বিপক্ষে। যে ক্ষুদ্র দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সংকটের সম্মুখীন, তারা এ মনোভাবের সমালোচনা করেছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ মার্শাল আইল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টনি দে ব্রুন দুঃখ করে বলেছেন, ‘সহকর্মীদের এই মনোভাব আমাদের কাছে গভীর বেদনার। তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন।’ তবে সবচেয়ে বড় অন্তরায় অর্থায়নের প্রশ্নে। লিমা সম্মেলনের আগেই অভিযোজনের জন্য প্রায় হাজার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়ায় অনেকেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধের ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলোর অঙ্গীকারের ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছিল। অথচ জাতিসংঘ অভিযোজনের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে, এই অঙ্ক তার তুলনায় খুবই সামান্য। ২০২০ সালের মধ্যে বার্ষিক ১০ হাজার কোটি ডলারের যে অঙ্ক ইতিপূর্বে দেওয়া হয়েছিল, নতুন হিসাবে তা বেড়ে ৩০ থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতি ইঙ্গিত করে ভারতের পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভাদেকর বলেন, ‘যে অর্থের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই সামান্য, হাস্যকরভাবে সামান্য।’ ২০২০ সাল নাগাদ ১০ হাজার কোটি ডলারের আগের প্রতিশ্রুতিই রক্ষিত হবে না বলে অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের ধারণা। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান হতাশা ব্যক্ত করে মালদ্বীপের প্রতিনিধি আহমদ সারির বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমরা এই তামাশা দেখে আসছি। আরও কত কপ সম্মেলনে আমাদের আসতে হবে? যত বছর যাচ্ছে, আমাদের হতাশার মাত্রা বেড়েই চলেছে।’

No comments:

Post a Comment