Friday, December 12, 2014

সহস্র কণ্ঠে জয় বাংলা:প্রথম অালো

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। তারও নয় দিন আগে ৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় তৎকালীন মহকুমা শহর চুয়াডাঙ্গা। এর আগে ৪ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও দর্শনাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের দামাল ছেলেরা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় ৪ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যায়ক্রমে চুয়াডাঙ্গাকে হানাদারমুক্ত করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি হানাদারদের অনেকে মারা যা
য়, বাকিরা পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। রাজাকার-আলবদররা আত্মসমর্পণ করতে থাকে। শত্রুমুক্ত ঘোষণার পর জনতা রাস্তায় নেমে আসে। করতে থাকে আনন্দ মিছিল। হাজারো মানুষ কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গগনবিদারী আওয়াজ তোলে, ‘জয় বাংলা’। মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার শফিউদ্দিন মংলা জানান, ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকেই চুয়াডাঙ্গা মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। ৪ ডিসেম্বর জীবননগর ও দর্শনায় মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে পাকিস্তানি সেনারা চুয়াডাঙ্গায় শক্ত ঘাঁটি গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ৬ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার আশপাশে জড়ো হতে থাকে। দিনভর চরম উত্তেজনা চলে। পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর উপর্যুপরি আক্রমণ চালানো হয়। আক্রমণের মুখে ওই দিন রাতেই তারা চুয়াডাঙ্গা ছেড়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে যায়। যাওয়ার আগে শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে এবং মাথাভাঙ্গা সেতুর পূর্ব প্রান্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ৭ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা বীরের বেশে চুয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান বলেন, ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত ঘোষণার পর শহরে ব্যাপক মাইকিং করা হয়। মাইকিং শুনে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। ওই সময় রাস্তায় রাস্তায় খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে একটাই আওয়াজ ওঠে, ‘জয় বাংলা’। মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের বীরোচিত সম্মান জানায়। মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন জানান, চুয়াডাঙ্গা মুক্ত ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে। আনন্দের মাঝেও অনেকেই অজানা আতঙ্কে ভুগতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের মতো করে প্রশাসন গড়ে তোলেন। ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যাতে কোনোরকম লুটপাট না হয়, সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হয়। মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, ১২ আগস্ট মদনা গ্রামে সাতজন পাকিস্তানি সেনা সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রামটিতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর ভোরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা উপর্যুপরি আক্রমণ করলে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা দর্শনা ছেড়ে পালায়। যাওয়ার সময় লোকনাথপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে মেজর রানাসহ ১২ জন শত্রুসেনা মারা যায়। মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম জানান, ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ধোপখালী হয়ে জীবননগরে প্রবেশ করে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পাকিস্তানি সৈন্যরা জীবননগর ছেড়ে যশোরের দিকে চলে যায়। জীবননগরের মাটিতে পত পত করে ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা।

No comments:

Post a Comment