Thursday, January 22, 2015

নির্দেশনা অমান্য করে এলসি খোলায় ৬ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা:নয়াদিগন্ত

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলায় ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে আরো তিন ব্যাংকের এমডিকে শোকজ করা হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তিন ব্যাংকের এমডিকে শোকজ করা হয়।   বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে অনিয়ম শনাক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চা
লু করা হয়েছে ইলেকট্রিক ড্যাশ বোর্ড। এ ড্যাশ ডোর্ডের মাধ্যমে আমদানি-রফতানির সামগ্রিক চিত্র তাৎক্ষণিক অবহিত করা হচ্ছে।   বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো গ্রাহকের পণ্য রফতানি করে চার মাসের মধ্যে বিদেশ থেকে অর্থ ফেরত না আনলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের আর নতুন করে রফতানি করার অনুমোদন দেয়া হবে না। একইভাবে কোনো গ্রাহক পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন (এলসি) করলে চার মাসের মধ্যে পণ্য আনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য না আনলে ওই গ্রাহককে আর পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকেন। পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার পর একপর্যায়ে এলসির অর্থ পরিশোধ করা হলেও পণ্য আসে না। আবার পণ্য এলেও নির্ধারিত পণ্য না এনে অন্য পণ্য আনেন। একইভাবে অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পণ্য রফতানি করে তা সমপরিমাণ অর্থ বিদেশ থেকে আনেন না। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে দেশকে বঞ্চিত করা হয়। এটা ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এলসি খোলার ওপর এ নির্দেশনা দেয়া হয়।   সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আলোচ্য ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকজন গ্রাহকের এলসি খোলার অনুমোদন দিয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য করার দায়েই ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম প্রজন্মের দুু’টি ও চারটি নতুন প্রজন্মের ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকগুলো দায়ী ১২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেছে। এর মধ্যে কারো পদোন্নতি দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। কারো বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। একই অপরাধে গতকাল আরো তিন ব্যাংকের এমডিকে শোকজ করা হয়েছে। গতকালই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে।   এ দিকে আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু হচ্ছে। শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা অনেক সময় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে থাকেন। যেমন, এক লাখ টাকার পণ্য আমদানির জন্য কোনো গ্রাহক এলসি খুললেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলার পর নির্ধারিত সময়ে পণ্য দেশে আসে। পণ্য বন্দরে আসার পর ব্যাংকের ডকুমেন্ট জাল করে ১০ হাজার টাকার পণ্য আমদানি দেখান। ওই ভুয়া ডকুমেন্ট শুল্ক কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে পণ্য খালাস করেন। পণ্য খালাসের পর মূল ডকুমেন্ট ব্যাংকে জমা দেন। এ ক্ষেত্রে এক লাখ ডলারের পণ্য ১০ হাজার ডলার দেখিয়ে ৯০ হাজার ডলারের পণ্যের শুল্ক ফাঁকি দেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকেরও অজানা থাকে জালিয়াতি সম্পর্কে।   বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক ফাঁকি বন্ধ করার জন্যই অনলাইনে পণ্য আমদানি-রফতানির তথ্য আদান-প্রদান করা হবে। কোনো ব্যাংকে একটি নির্ধারিত পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হলেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাবে। অর্থাৎ কাগুজে পদ্ধতি সম্পূর্ণ উঠে যাবে। এ ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দেয়ারও কোনো সুযোগ থাকবে না।    

No comments:

Post a Comment