Thursday, January 22, 2015

খালেদার গ্রেফতার নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় সরকার:যুগান্তর

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগ ও সরকারে কট্টরপন্থী নেতা এবং মন্ত্রীরা বিএনপি নেত্রীকে সহিংস ঘটনার হুকুমের আসামি হিসেবে গ্রেফতারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে সরকার ও দলের প্রভাবশালী অংশটি জোর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। বিএনপির নাশকতা ও হত্যাকাণ্ড নিয়ে তারা নেতিবাচক প্রচারণাও চালাচ্ছেন। সভা-সমাবেশের বক্তৃতায় তারা সহিংস ঘটনার জন্য বিএনপির চেয়
ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি হিসেবে গ্রেফতারের দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে সরকার ও আওয়ামী লীগে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র মন্ত্রী এবং নেতারা মনে করছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতারের প্রয়োজন নেই। বিএনপির চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন আরও প্রলম্বিত হতে পারে। এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক উদ্যোগের সব পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মনোভাবও পরখ করা জরুরি বলে মনে করেন এই পক্ষটি। তাদের মতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে গ্রেফতারের বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখবে না অনেক দেশ ও সংস্থা। কাজেই এ পক্ষটি বিএনপিকে এক্সিট দিতে আলোচনায় যাওয়ার পক্ষে। এ পক্ষে রয়েছেন গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রভাবশালীরাও। দল ও সরকারের মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দেয়ায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি হিসেবে গ্রেফতারের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত সে ধরনের সিদ্ধান্ত বা আদেশ তাদের কাছে আসেনি। জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি ঢাকায় উপস্থিত নেতাদের নিয়ে গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চলমান অবরোধে মানুষ হত্যা ও জানমালের ক্ষতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের পর দলের বেশ কিছু নেতা ও মন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তারা প্রতিদিনই কোনো না কোনো সভা-সমাবেশে বক্তৃতায় সব নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি নেত্রীকে দায়ী করে তার গ্রেফতার দাবি জানাচ্ছেন। সর্বশেষ বুধবার ঢাকার মিরপুরে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সমাবেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যে সন্ত্রাস ও অরাজকতা চলছে তাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের জন্য অচিরেই দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি তুলবে। তিনি বলেন, জনগণ যদি দাবি তোলে তাহলে ওই খুনির (খালেদা জিয়া) গ্রেফতার কেউ ঠেকাতে পারবে না। একই দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হরতালবিরোধী সমাবেশে ত্রাণমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে খালেদার নির্দেশে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এর জন্য খালেদাকে হুকুমের আসামি করে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। অন্যদিকে বুধবার জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের বিষয়ে পুনরায় হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। দেশব্যাপী নাশকতা ও নৃশংস পেট্রলবোমা হামলায় নিরীহ মানুষের অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া হুকুম দিয়ে মানুষ খুন করছেন। হত্যার হুকুমের আসামি হিসেবে তাকে (খালেদা জিয়া) আইনের আওতায় আনাটাই হবে যুক্তিযুক্ত। সরকারি দলের সংসদ সদস্য এবি তাজুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হুশিয়ারির কারণে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে দলের কিছু নেতা কথাবার্তা বলছেন। তাদের উদ্দেশ্যটা ভিন্ন। তবে এ ব্যাপারে এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই নেতা আরও জানান, তারা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়ার পক্ষে নন। জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীকে এমনই মতামত দেবেন। ‘নেত্রী যেহেতু গ্রেফতার নিয়ে নিজেই কথা বলছেন, তাই তারা আগ বাড়িয়ে কিছু বলবেন না’ বলেও জানান। ওই নেতার মতে, সামনে এসএসসি পরীক্ষা। বিষয়টি বিএনপি নেত্রী বিবেচনায় নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ইতিবাচক কিছু ঘটতে পারে। কারণ এ নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর একটা মানসিক চাপ রয়েছে। বিএনপি নেতাদের অনেকেই টানা অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে নন। তাছাড়া প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণে দেশব্যাপী পেট্রলবোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা কমে এসেছে। আওয়ামী লীগের কট্টরপন্থী গ্র“পটি মনে করছে, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে বিএনপি নেতাকর্মী ও তাদের মিত্ররা হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে না। ঘরে ঢুকে পড়বে। তবে অন্য পক্ষের মত, এর ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার হতে পারে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই যা কিছু করতে হবে, ভেবেচিন্তেই করা উচিত।  

No comments:

Post a Comment