Sunday, January 18, 2015

টিপাইমুখ নিয়ে যৌথ সমীায় তথ্য দিচ্ছে না ভারত:নয়াদিগন্ত

প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্পে যৌথসমীার জন্য বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত তথ্য দিচ্ছে না ভারত। টিপাইমুখ বাঁধ হলে ভাটিতে বাংলাদেশের কী কী ক্ষতি হবে সে বিষয়ে সমীক্ষা করতে প্রচুর তথ্যউপাত্ত দরকার। ভারত থেকে তথ্যউপাত্ত চেয়ে বাংলাদেশ বিভিন্নভাবে তাগিদ দিলেও গত দুই বছরে দেশটি সাড়া দেয়নি। এমনই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।   পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের অধীনে টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল
্পসংক্রান্ত সাবগ্রুপের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তথ্যউপাত্ত চাওয়া হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে কিন্তু গত দেড় বছরে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কেনো সহযোগিতা পায়নি। বাংলাদেশের প্রবল আপত্তিতে দেশটি তথ্যউপাত্ত দিতে সম্মত হয়েছিল।   সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনায় ওই দেশটির (ভারতের) অসহযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরেন। এতে তিনি প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্পে যৌথসমীার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাওয়া তথ্যউপাত্ত না পাওয়ার ব্যাপরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে নয়া দিগন্তের প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা টিপাইমুখ বাঁধের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যউপাত্ত চাই। আশা করি ভারত এসব তথ্য দেবে।’   খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে স্থানে বাঁধটি (ড্যাম সাইট ) নির্মিত হবে সেখান থেকে সীমান্ত বরাবর যেসব জায়গায় পানি জমে তার হিসাব চেয়েছে বাংলাদেশ। এসব স্থানে দৈনিক পানিপ্রবাহ ও সমতলের হিসাব দৈনিক ভিত্তিতে তথ্যউপাত্ত চেয়েছে বাংলাদেশ। বদরপুর থেকে অমলসিদ পর্যন্ত এ হিসাবটি দরকার বাংলাদেশের জন্য। এ ছাড়া ক্রস সেকশনসংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ। ভূমিকম্প হলে বা কোনো বিপর্যয় দেখা দিলে কী কী হতে পারে সে তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য বাঁধটি নির্মাণে প্রতিটি স্থানে তারা কী ধরণের ডিজাইন করেছে তার প্লান চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাঁধ নির্মাণের স্থান ও এ সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে কী ধরণের কম্পন হচ্ছে এবং অতীতে হয়েছে তার হিসাব চেয়েছে বাংলাদেশ সাবগ্রুপের বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত বছরের (২০১৩) ফেব্রুয়ারিতে সাবগ্রুপের বিভিন্ন বৈঠকে এসব তথ্য চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। ২০১২’র ২৪ জুলাই নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্র দফতর পর্যায়ের আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গঠন করা হয় সাবগ্রুপ। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট নয়াদিল্লিতে দুই দিনব্যাপী সাবগ্রুপের প্রথম বৈঠকে বাংলাদেশ তথ্য চেয়েছিল। অবশ্য এ বৈঠকে বাংলাদেশকে এই বাঁধ নির্মাণসক্রান্ত কিছু তথ্য দেয় ভারত কিন্তু এসব তথ্যে বাংলাদেশ ভালোভাবে স্টাডি করতে পারেনি। ফলে এর পরের বছরে অর্থাৎ ২০১৩ সালে সমীক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশ আরো তথ্য চায় ভারত থেকে কিন্তু ভারত এ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব তথ্যের ভিত্তিতে জানা যাবে, টিপাইমুখ বাঁধটি হলে বরাক-সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকার পানিসম্পদে কী প্রভাব ফেলবে, গতি পথ কোন দিকে যাবে। আরো জানা যাবে দুই দেশের মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, পানিতে লবণাক্ততা ও নদীর নাব্যতার ভবিষ্যৎ চিত্র। পাশাপাশি কৃষি ও তার সাথে মানুষের জীবনযাত্রার বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।   খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত সাবগ্রুপের বৈঠক হয়েছে মাত্র দুইটি। সাবগ্রুপের বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল নিজ দেশের সরকারের কাছে এ প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা।   তৃতীয় দফা সাবগ্রুপের বৈঠকের চেষ্টা : এ দিকে সাবগ্রুপের তৃতীয় বৈঠকটি আয়োজনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ভারতকে তাগিদ দিয়েছিল। জানা গেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের যৌথনদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন আজ কলকাতা যাচ্ছেন। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে টিপাইমুখ বাঁধ এবং গঙ্গা চুক্তি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ও যৌথনদী কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হবে। সে বৈঠকে আবারো বাংলাদেশ যৌথ সমীক্ষা ভালোভাবে সম্পন্ন করতে তথ্য চাইবে।   ভারত সরকার আন্তর্জাতিক সীমানার প্রায় ২০০ কিলোমিটার উজানে বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখের ভাটিতে একটি ড্যাম নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। টিপাইমুখ ড্যাম ১৬৩ মিটার উঁচু হবে, যা পশ্চিম মণিপুরের বরাক ও ইরাং নদী এবং উত্তর মিজোরামের টিপাই নদীর প্রবাহপথে ৩১ হাজার ১০০ হেক্টর আবাদি জমি জলমগ্ন করবে। এ ব্যাপারে প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক নয়া দিগন্তকে জানান এই বাঁধের কারণে পশ্চিম মণিপুরের হমার ও জেলিয়াংগ্রং নাগা এবং উত্তর মিজোরামের কুকিসহ বিপুল আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়ে যাবে। এই জলমগ্নতার কারণে গাছপালাসহ প্রাণী ও পরিবেশের প্রভূত তি হবে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা ভারতের বরাক নদীর আববাহিকার মাছসহ জলজ প্রাণীর প্রজননপ্রক্রিয়া প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হবে।

No comments:

Post a Comment