Wednesday, January 7, 2015

মানুষের নামে মানুষ পীড়ন:কালের কন্ঠ

রাজধানী থেকে দেশের ৩৬১টি রুটের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্তত ৫০টি রুটে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচ
ল করেছে। ৮০ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা দামের অভিজাত বাসগুলো রাস্তায় নামানো হয়নি। ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দামের লোকাল বাসগুলো নামানো হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর তিনটি প্রধান বাস টার্মিনাল বা নগরীর ভেতরের কাউন্টারগুলো থেকে অভিজাত বাসগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। তবে অভিজাত বাসগুলোর একটি অংশ রাতে ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। সোমবার রাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুলিশ পাহারায় রাজধানীতে বাস আসে। মহাসড়ক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশি পাহারা দিয়ে দূরপাল্লার গাড়ি চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরো জানা গেছে, বিএনপি জোট টানা অবরোধ ডাকায় ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে পরিবহন মালিকদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য। অথচ গত রবি ও সোমবার ঢাকায় বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশে কর্মী-সমর্থকরা যাতে না আসতে পারে সে জন্য মালিকদের চাপ দেওয়া হয়েছিল যানবাহন বন্ধ রাখার জন্য। এভাবে মানুষের কল্যাণ সাধনের নাম করে রাজনীতি করতে গিয়ে দলগুলো বারবার দেশবাসীকে পীড়ন করেছে। এবারও ক্ষমতাসীন ও প্রতিপক্ষের 'রাস্তা-রাজনীতি'তে পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশের জনসাধারণকে- এ মন্তব্য দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদেরও। প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধ চলাকালে রাজধানী থেকে পুলিশ পাহারায় দূরপাল্লার বাস চালানো হয়েছিল। এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল বিপরীতভাবে। ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ীতে গতকাল দুপুর সোয়া ১টায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের নিচের পথগুলো চঞ্চল হয়ে উঠেছে বাস-মিনিবাসের চলাচলে। উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্কের সামনে দেখা গেল, রাস্তা দখল করে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী-গাউছিয়া পথের আশিয়ান ট্রান্সপোর্টের একটি বাসে (নম্বর-ঢাকা মেট্রো-জ ১৪-২৭৬৮) ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন কন্ডাক্টর মো. মাসুম খান। একই পরিবহনের আরো তিনটি বাস আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে নেওয়া হচ্ছিল যাত্রী। এই দৃশ্য দেখতে দেখতেই চোখের সামনে দিয়ে সাঁই করে ছুটে গেল ঢাকা-কক্সবাজার রুটের আল রাহী পরিবহনের একটি বাস। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচলের এ ধরনের দৃশ্য গতকাল চোখে পড়েছে গুটিকয়েক জায়গায়। যাত্রাবাড়ী কলাপট্টির সামনে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ওপরই দাঁড়িয়ে তিনটি পিকআপ। একটু পরই পিকআপগুলো মুন্সীগঞ্জসহ আশপাশের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। হলুদ রঙের পিকআপের (নম্বর-ঢাকা মেট্রো-ন-১১-২৩১২) সামনে গিয়ে দেখা গেল টাইলস তোলা হয়েছে পেছনে। একটু পরই মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ভবের চকে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হবে। গাড়ির চালক মো. সালাহউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশি ভয় নাই। কারণ, পুলিশের পাহারা আছে। গাড়ির তিনজন কর্মচারী আছে। গাড়ি না চললে খামু কী?' দৃশ্য দুটি গতকাল মঙ্গলবারের হলেও ঠিক আগের দিন সোমবার বা এরও এক দিন আগে রবিবার একই এলাকা ছিল যানবাহনশূন্য। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, জনপথ মোড়, যাত্রাবাড়ী, গোলাপবাগসহ আশপাশের বাস কাউন্টারগুলো ছিল বন্ধ। কারণ, সোমবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির আগে থেকে হঠাৎ করেই সড়ক ও নৌ ধর্মঘট শুরু হয়ে যায়। তবে সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া 'অবরোধ চলবে' ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই রাজধানী ও মহাসড়কের দৃশ্য পাল্টে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার সমর্থিত পরিবহন মালিকদের একটি অংশের নির্দেশে অবরোধ চলাকালে রাস্তায় গাড়ি সচল রাখার অলিখিত সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন সূত্র ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অবরোধ বানচালের কৌশল হিসেবে মহাসড়ক ও রাজধানীতে নামানো হয়েছে পুরনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি। প্রতিপক্ষ ঘায়েলের অস্ত্র পরিবহন : ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিরোধীপক্ষের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দল কৌশলে পরিবহন খাতকে ব্যবহার করে আসছে। প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে পথ ও গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়ে থাকে। এক দশক ধরে এই প্রবণতা প্রকট হয়ে উঠেছে। চারদলীয় জোট সরকার আওয়ামী লীগের বড় ধরনের কর্মসূচি ঠেকাতে পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিত। ছয় বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল হরতাল-অবরোধ আহ্বান করলেই সরকার সমর্থিত সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা গাড়ি চালানোর জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ও বিবৃতি পাঠাচ্ছেন। হরতাল-অবরোধের আগের দিন গাড়ি মালিকদের ডেকে তাঁরা সভাও আহ্বান করেন। বিরোধী দল বা প্রতিপক্ষের বড় কর্মসূচি আহ্বান করা হলে সরকার সমর্থিত পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা উল্টো দেশে পরিবহন বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নেয়। তারা আগের রাতেই মোবাইল ফোনে পরিবহন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। তবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এই পরিবহন নেতারা বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা প্রাণের ভয়ে রাস্তায় গাড়ি নামায়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা গাড়ি বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশ দিইনি। আন্দোলনের নামে গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে বলে আতঙ্কেই চালকরা রাস্তায় গাড়ি নামাচ্ছেন না। রাস্তায় গাড়ি না নামালে তো আমাদের মালিকদেরই ক্ষতি হয়।' চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ মহাসমাবেশ কর্মসূচি দিলে বিএনপির ইন্ধনে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হতো বলে তিনি জানান। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বধীন জোট 'গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলে ওই সময় হঠাৎ করেই দেশে সড়ক, নৌ ও রেল পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর আগে ২০১২ সালের ১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে দেশে সড়ক ও নৌ ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। দেশের দুই শতাধিক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের ফেডারেশনে সরকারি দলের লোক কম। সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে আমাদের ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা হলে শ্রমিকরাই ভয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। আমরা গাড়ি বন্ধ করতে নির্দেশ দিইনি। আওয়ামী লীগ রাজধানীতে মহাসমাবেশ করতে চাইলে ২০০৩ সালে চারদলীয় জোট সরকারের ইন্ধনে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অবরোধ ডেকেছে। অবরোধেও শ্রমিকরা বিপদে পড়বে। শ্রমিকরা কোনো দলের নন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁরা বেশি কষ্টে পড়েন।' সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণ মানুষ রাস্তায় বের না হতে পারলে তারা রোজগার করতে পারে না। চলাচলের পথ ও গাড়ি বন্ধ রাখলে নিরুপায় মানুষ কী করবে? ঘরে বসে থাকলে তো তাদের চলবে না। রাস্তা ও গাড়ি বন্ধের রাজনীতি থেকে সরে অন্য কৌশল নিতে হবে। গাড়িতে আগুন লাগানোর কারণে গাড়ি চালকরা ভীত, যাত্রীরাও আতঙ্কে থাকে। এটা সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। রাজনীতির ভাষা ও কৌশল এমন হতে হবে যে, মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। কারণ, রাজনীতি জনগণের মঙ্গলের জন্য। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, কথায় কথায় সরকার ও প্রতিপক্ষ দলের পথ ও পরিবহন ব্যবহার করে অচলাবস্থা তৈরি করার ফলে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছে। এটা যেন নিয়তি হয়ে গেছে। 'পলিটিঙ্রে লাইগ্যা আমাগো কষ্ট করতে হইতাছে' : গতকাল রাজধানীতে বাসের অভাবে কিছু এলাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ে। সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশায় তিন থেকে চার গুণ ভাড়া দিয়ে তবেই গন্তব্যে পৌঁছে তারা। কুড়িল বিশ্বরোড, গাবতলী, শ্যামলী, নিউ মার্কেট, বাংলামোটর, মগবাজার, মৌচাক, টয়েনবী সার্কুলার রোড, টঙ্গী, আবদুল্লাহপুর, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, শনির আখড়া, কাঁচপুরে এই দুুর্ভোগ চোখে পড়ে। বিকেলে কুড়িল বিশ্বরোডে বাসের জন্য অপেক্ষারত মঈনুল ইসলাম বলেন, 'পলিটিঙ্রে লাইগ্যা আমাগো কষ্ট করতে হইতাছে।' গতকাল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। নৌপথেও যাত্রীরা এসেছে রাজধানীতে। পুলিশ পাহারায় গাড়ি চলবে : অবরোধে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ পাহারায় যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে বাস আর সাইনবোর্ড, গাজীপুর আশুলিয়াসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করবে পুলিশি পাহারায়। জানা গেছে, গতকাল দুপুরে মহাসড়ক পুলিশ পরিবহন ও পোশাক খাতের নেতাদের নিয়ে এ জন্য আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকও করেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে আজ থেকে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন পথে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান রাতে চলাচল করেছে এবং করবে বলে তিনি জানান। জানা গেছে, সোমবার রাতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিজাত বাস বহর পুলিশ পাহারায় ছেড়ে ভোরে রাজধানীতে পৌঁছায়। সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে রূপসী বাংলা, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের তিনটি বাস একসঙ্গে পুলিশ পাহারায় রাজধানীতে আসে। এ রকম বিক্ষিপ্তভাবে রাজধানীতে দূরপাল্লার কিছু বাস আসার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবুও আতঙ্ক, যাত্রী কম : পুলিশ নিরাপত্তা দিলেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা নাশকতার আশঙ্কায় রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাইছেন না। অন্যদিকে গাড়ি বন্ধ রাখলে প্রতিদিন সড়ক পরিবহন খাতে ৩৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সহিংসতার প্রধান টার্গেট পরিবহন। এবার দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দুই দিন আগে থেকেই খোদ রাজধানীতেও একের পর এক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। বাসে ছোড়া হয়েছে পেট্রলবোমা। এ কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাত্রী হয়ে কেউ বাসে উঠতে চাইছেন না। গতকাল নগর পরিবহনের বাসগুলোর বেশির ভাগেই যাত্রী ছিল অর্ধেক। সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর হিসাবে, গত বছরই রাজনৈতিক সহিংসতায় পোড়ানো হয়েছে এক হাজার ১০০ গাড়ি। প্রাণহানি ঘটেছে ৫৬ গাড়িচালক ও সহকারীর। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে, একই সময়ে সহিংসতায় প্রাণপ্রদীপ নিভেছে ২২২ জন যাত্রীর। এক দিন গাড়ি বন্ধ থাকলে দিনে ক্ষতি হচ্ছে ৩৬০ কোটি টাকা। গত বছর ৮৬ দিন গাড়ি বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত গাড়ি আছে ২১ লাখ। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার বাদ দিলে মহাসড়কে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে প্রায় সাত লাখ গাড়ি। পণ্যবাহী পরিবহন কেমন চলছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী বলেন, কাভার্ড ভ্যান আছে ১৪ হাজার। স্বাভাবিক সময়ে চলাচল করে ১০ হাজার। এখন চলছে তিন-চার হাজার। পুলিশ পাহারা জোরদার হলে তা আরো বাড়বে। ট্রাক চলাচল করছে আরো বেশি। রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে নরমাল ও লোকাল বাসগুলো গতকাল চলাচল করেছে। অভিজাত বাসগুলোর বেশির ভাগই বন্ধ রয়েছে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন উত্তরের বিভিন্ন জেলাসহ ৬০টি পথে এক হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক বাস চলাচল করেছে। গাবতলি থেকে সাভার, মানিকগঞ্জ, আরিচা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়েছে। সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, মাধবপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের মতো গন্তব্যের উদ্দেশে বাস ছেড়েছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, অবরোধের মধ্যেও দূরপাল্লার বাস সীমিত আকারে চলাচল করছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা আবুল কালাম জানান, মহাখালী থেকে বেশির ভাগ দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। হানিফ পরিবহন কল্যাণপুর কাউন্টারের কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন রুটে সেখান থেকে প্রতিদিন ৩০০ গাড়ি ছেড়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে কিছু গাড়ি ছাড়বে। দুপুর থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সকাল ১টায় সায়েদাবাদে শ্যামলী পরিবহনের ৭ নম্বর কাউন্টারে গেলে দেখা যায়, সেখানে টিকিটপ্রার্থী নেই। কাউন্টারের ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ১০টা থেকে কাউন্টার খোলার পর ২০-২৫ জন যাত্রী এসেছে। টিকিট দিইনি। বলেছি, গাড়ি চলবে না। বিশ্ব ইজতেমার আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে হয় না। সায়েদাবাদে দোলা পরিবহন, আনন্দ পরিবহন, আরা পরিবহন, একুশে পরিবহন, ইউনিকসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ ছিল। জনপথ মোড়ে বিভিন্ন কাউন্টারের বিক্রয়কর্মী জাকির হোসেন ও মো. সানি জানান, একটি টিকিট বিক্রি করতে পারলে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমিশন পাই। মেট্টো সার্ভিসের গাড়ি চট্টগ্রাম, মিতালি, মেঘনা ও নাজমী পরিবহনের গাড়ি ভোর থেকে সিলেটে গেছে। রাজধানী স্বাভাবিক : রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন পথে গতকাল ফিরে আসে স্বাভাবিক দৃশ্য। সকালে কম থাকলেও ধীরে ধীরে নগর পরিবহন চলাচল বেড়ে যায়। তবে প্রাইভেট কার চলাচল করেছে কম। বাস চলাচল করলেও যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মিরপুর, শাহবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ছিল কম। যাত্রাবাড়ি-টঙ্গী রুটের জে এম সিটিং সার্ভিস, সদরঘাট-গাজীপুরা রুটের সুপ্রভাত পরিবহন, মিরপুর-সদরঘাট রুটের বিহঙ্গ পরিবহন, সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটের বলাকাসহ বিভিন্ন পরিবহন কম্পানির বাস ও মিনিবাসের চলাচল চোখে পড়েছে। তবে এগুলোর বেশির ভাগই ছিল ফিটনেসহীন। সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে জে এম সিটিং সার্ভিসের বাসে (নম্বর-ঢাকা মেট্টো-জ-১৪১২৬৭) উঠে দেখা গেল, বাসটির একাধিক জানালা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আসনগুলোর বেশির ভাগের অবস্থা খারাপ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ট্র্যাফিক) যুগ্ম কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে রাজধানীতে যান চলাচলের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ঢাকা মহানগরীতে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ছোট গাড়ি কম ছিল। বড় গাড়ি বাস ও মিনিবাস বেশি চলাচল করেছে।    

No comments:

Post a Comment