Friday, January 9, 2015

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ও হল ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব:যুগান্তর

বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ও আবাসিক হলের সিট ভাড়া বৃদ্ধি, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ বাতিল করে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান অরাজকতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধ
ি দল সাক্ষাৎ করে। এ সময় তারা রাষ্ট্রপতিকে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। এই প্রতিবেদনেই উল্লিখিত সুপারিশসহ আরও ৪০ দফা সুপারিশ রয়েছে। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। নিয়ম অনুযায়ী এই প্রতিবেদন আসন্ন সংসদে উপস্থাপিত হবে। এ সময় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত ও উচ্চশিক্ষার দুর্বৃত্তায়ন রোধে ইউজিসিকে ভেঙে দিয়ে ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ হিসেবে পুনর্গঠনে ইতিমধ্যে গৃহীত প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নে হস্তক্ষেপের জন্যও রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়। ৪৬৮ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে ইউজিসি শিক্ষার মান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান পরীক্ষা-পদ্ধতি নিয়েও চরম হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এতে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়। জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক একে আজাদ চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, দেশের উচ্চশিক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কমিশন সুপারিশগুলো করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের মাধ্যমে দেশে উচ্চশিক্ষা বিতরণের কাজটি নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। এদের মান উন্নয়ন করতে না পারলে জাতি আগাতে পারবে না। এজন্য সিলেবাস ও কারিকুলামের মানের উন্নয়ন জরুরি। প্রতিবেদনে সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- সেশনজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি ও উত্তরপত্র মূল্যায়নে সমতাবিধান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের ব্যবস্থা, মেধাপাচার রোধে গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি, উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ্যাপ ব্যবসা’ বন্ধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং এজন্য বিধিমালা প্রণয়ন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার অবসান, প্রচলিত ভর্তি পদ্ধতি বন্ধ করে ভর্তি প্রক্রিয়ার আমূল সংস্কার, শিক্ষক নিয়োগে মেধা দক্ষতা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য, শিক্ষকদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় বেতন কাঠামো প্রবর্তন, রাজধানী ও বিভাগের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মেধাবৃত্তি বৃদ্ধি, মাস্টার্স প্রোগ্রাম বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন, ইউজিসি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক ইউজিসি প্রণীত আর্থিক নীতিমালা অনুসরণ, বিভিন্ন নিয়োগ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ খোলাসহ অন্যান্য বিষয়ে সরকারের পূর্বানুমোদন, সরকারি কলেজের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বিভাগীয় পর্যায়ে আলাদা অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং এটি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি কলেজ বিভাগ পর্যায়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়া, কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও পদায়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা ও বিধিমালা অনুসরণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজকতা দূর ও এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ দূর করতে ২০১০ সালের আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারার নিয়োগ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরির নিশ্চয়তা বিধান এবং এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটসহ অন্যান্য ফোরামের নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। দেশে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কলেজের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে। এর বাইরে ৮১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৮টিতে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে লেখাপড়া করাচ্ছে। ওইসব কলেজ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করছে না। এ সম্পর্কে ইউজিসির প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, স্নাতক পর্যায়ে ৪৮ ভাগ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব পালন করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এর থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত স্নাতকদের গুণগত মান আশানুরূপ নয়। কমিশন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক অবস্থা উদ্বেগজনক বলে মনে করে। এতে আরও বলা হয়, বেশির ভাগ কলেজে একাদশ শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কেবল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কারিকুলাম প্রণয়ন এবং পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। এছাড়া বেসরকারি কলেজগুলোর গভর্নিংবডিতেও শিক্ষক নিয়োগের জন্য নির্বাচনী কমিটিতে প্রতিনিধি নিয়োগ করে। সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি করার দায়িত্ব থাকলেও এটি করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক নিয়োগ, এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে পোস্টিং অর্থাৎ বদলি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। ফলে শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলা হয়, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষার ক্ষেত্রে অরাজকতা বিরাজ করছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে ইউজিসি অবগত নয়। পাস করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ।  

No comments:

Post a Comment