Friday, January 9, 2015

দুই পক্ষই হার্ডলাইনে:যুগান্তর

বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ মোকাবেলায় আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। অন্যদিকে বিএনপিও অনড় তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া নিয়ে। এরই মধ্যে সরকার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতায় জড়িত সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র যে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি সমাবেশ করা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ১০ জানুয়ারির মহাসমাবেশ পিছিয়ে ১২ জানুয়ারি
করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি জোট বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শেষ দিন, ১৮ জানুয়ারি সমাবেশ ডাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক সহিংসতায় সারা দেশে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। টানা তৃতীয় দিনের অবরোধে দূরপাল্লা বাদে যানবাহন চলাচল ও অফিস-আদালত খোলা থাকলেও মানুষের মনের শংকা কাটছে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, দুজন বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। হামলা হয়েছে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে। অবরোধে চোরাগোপ্তা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেড়েই চলেছে। অব্যাহত রয়েছে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ। পেট্রল বোমায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে অফিসগামী কর্মজীবী সাধারণ মানুষের মধ্যে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অনির্দিষ্টকাল অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে এ কর্মসূচি প্রতিহত করার। এ নিয়ে দুই দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানের ফলে প্রতিনিয়ত চড়ছে উত্তেজনার পারদ। বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতিতে দুই পক্ষেরই অনড় মনোভাব প্রকট হচ্ছে। সংকট নিরসনের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। নতুন বছরের শুরু থেকে প্রচারমাধ্যমে প্রধান খবর হয়ে রয়েছে রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতাই। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৬ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার তার গুলশান কার্যালয়ের তালা খুলে দিয়েছে পুলিশ। ৫ জানুয়ারি ওই কার্যালয় লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে করা হলে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। অন্যদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভেতর এক রাত কাটিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে ভোররাতে পালিয়ে আÍরক্ষা করেন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করার অনুরোধ জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এতটাই মরিয়া যে তারা বিশ্ব ইজতেমার সময়ও অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মনে আঘাত দিয়েছে। অবশ্য বিএনপির কর্মসূচি জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে দাবি করেন হানিফ। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাদের সঙ্গে অনির্ধারিত জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে বিএনপির অবরোধ মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে গণভবনে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে বিএনপিকে কোনোরকম ছাড় না দেয়ার ব্যাপারে হুশিয়ার করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলের নেতাদেরও রাজপথে সক্রিয় অবস্থানের নির্দেশ দেন। নাশকতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন পুড়ছে অবরোধের আগুনে। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা কাটানোর পাশাপাশি জনসাধারণের চলাচলের জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পাহারায় যানবাহন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দাবি না মানা পর্যন্ত অবরোধ চলবে -রিজভী : যতক্ষণ দাবি মেনে না নেয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার সকালে বারিধারার একটি বাসায় সাংবাদিকদের কাছে দলের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’ বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই প্রেক্ষাপটে ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে বাড়তি উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে জনমনে। এ পরিস্থিতিতে অবরোধ স্থগিত করা হবে কিনা জানতে চাইলে রিজভী বলেন, হরতাল-অবরোধ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। সরকার সেই কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। সারা দেশে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। বুধবার বিএনপির তিনজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন সরকারের নিষ্ঠুর নির্যাতনে সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা আহত হচ্ছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করা না হবে, সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে না দেয়া হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি মেনে নেয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয়ে সরকার আইনশৃংখলা বাহিনী দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাকে কোথাও যেতে দেয়া হচ্ছে না। বিষাক্ত পিপার স্প্রে দিয়ে তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। অবিলম্বে গুলশান কার্যালয় থেকে পুলিশি অবরোধ তুলে নিয়ে খালেদা জিয়ার স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।  

No comments:

Post a Comment