Monday, January 19, 2015

আইসিসির তহবিল বন্ধে তদবির করবে তেল আবিব:প্রথম অালো

ইসরায়েলের ‘যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) অর্থায়ন বন্ধ করতে তদবির শুরু করেছে তেল আবিব। ফিলিস্তিনিরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ইসরায়েল ও তাদের শক্তিধর মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এর কড়া সমালোচনা করেছে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ব্যাপক অভিযান চালায়। তখন উভয় পক্ষই এক
ে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলে। গাজায় ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী ওই অভিযানে নিহত ২ হাজার ২০০-এর বেশি মানুষের বেশির ভাগই ছিল বেসামরিক লোক। ইসরায়েলি বোমা ও গোলায় গুঁড়িয়ে যায় বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি হাসপাতাল। গাজা থেকে ফিলিস্তিনি কট্টর সংগঠন হামাসের রকেট মারা বন্ধেই ওই অভিযান বলে দাবি করেছিল ইসরায়েল। এরপর নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগভিত্তিক আইসিসিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগ আনে ফিলিস্তিনিরা। গত মাসে তারা সংস্থাটির সদস্যপদ পেতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ফিলিস্তিন আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আইসিসির কৌঁসুলিরা শুক্রবার জানান, গত বছরের ১৩ জুলাই পর্যন্ত গাজায় যেসব ‘অপরাধের’ ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁরা ‘একেবারে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে’ খতিয়ে দেখবেন। প্রাথমিক এই তদন্তের উদ্দেশ্য হবে অভিযুক্ত ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা। এ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বৃহত্তর তদন্ত শুরু করা হবে কি না। আইসিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্ত প্রকৃত তদন্ত নয়; বরং তদন্ত শুরু করার যৌক্তিক ভিত্তি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। ক্ষুব্ধ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল আইসিসির এ ঘোষণাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ কোনো রাষ্ট্র নয়। তাই এ ধরনের ঘটনার তদন্ত করা ওই আদালতের কাজ নয়।’ আর ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, তাঁর দেশ আইসিসির অর্থের উৎস বন্ধ করে দিতে কাজ করছে। ইসরায়েল রেডিওকে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানিতে আমাদের বন্ধুদের কাছে আমরা আইসিসির অর্থায়ন বন্ধ করার দাবি জানাব।’ ক্ষুব্ধ ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইসিসি কাউকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এটা একটা রাজনৈতিক সংস্থা। আমি এরই মধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে টেলিফোনে বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছি। সেসব দেশও মনে করে, এই সংস্থাটির অস্তিত্ব থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’ ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জার্মানির কাছে এরই মধ্যে এ ধরনের একটি অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। আইসিসির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি বলেছেন, ‘সবকিছুই ঠিকঠাক এগোচ্ছে। কোনো দেশ বা ব্যক্তি এখন আর এই তদন্তকে আটকাতে পারবে না। এই প্রাথমিক তদন্তের পর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হবে।’ অন্যদিকে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামপন্থী সংগঠন হামাস বলেছে, ইসরায়েল যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তার সপক্ষে তথ্য-উপাত্ত আইসিসিকে দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড আইসিসির পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। গতকাল জেরুজালেমে পৌঁছে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যানের সঙ্গে বৈঠকের আগে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইসিসির এ সিদ্ধান্ত ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। এর আগে রামাল্লায় ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকির সঙ্গে বৈঠকে জন বেয়ার্ড আইসিসিতে অভিযোগ করার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, যাতে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এ পদক্ষেপের সঙ্গে একেবারেই একমত নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিন কোনো রাষ্ট্র নয়। কাজেই তারা আইসিসিতে যোগ দিতে পারে না। উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার উপায় হচ্ছে সরাসরি আলোচনা, কোনো পক্ষের একতরফা পদক্ষেপ নয়।’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আইসিসির সদস্য নয়। তবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশ রয়েছে, যারা আইসিসির সদস্য এবং ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল। আইসিসি তার কার্যক্রম সচল রাখতে ১২২টি সদস্য দেশের চাঁদার ওপর নির্ভরশীল।

No comments:

Post a Comment