Tuesday, January 13, 2015

সন্ত্রাসীদের পুলিশের হাতে তুলে দিন:কালের কন্ঠ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে যা যা করা দরকার তা-ই করা হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেত্রী যে ভুল কর
েছেন, তার খেসারত তাঁকেই দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, 'পাড়া-মহল্লায় যারা বোমা বানায় ও বোমা মারে সেই সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দিন।' খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিএনপি নেত্রীকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি। উনি ঘরে যেতে চাইলে কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু ঘরে না গিয়ে অবরোধ দিয়ে তিনি দেশের মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখছেন। মূলত যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে বাঁচাতে উনি অবরোধ ডেকেছেন।' তিনি বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে-চলবে। কেউ তা বন্ধ করতে পারবে না। অবরোধের নামে জুলুম, অত্যাচার করে মানুষ মারা হবে, আমরা এ অন্যায় সহ্য করব না। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।' জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব কথা বলেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি হলেও বিশ্ব ইজতেমার কারণে দুই দিন পিছিয়ে গতকাল এ জনসভা করা হয়। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হয়। আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি ঠেকাতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ঢাকার আশপাশের ১৪ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে। হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত হন। এ সময় নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে চারদিক মুখরিত করে তোলে। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহামুদ, মহিলা লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার প্রমুখ। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যেমন মা তেমন পুত্র। দেশের মানুষের ওপর জুলুম অত্যাচার শুরু করেছে। দুজন এক হয়ে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চালাচ্ছে।' তিনি আরো বলেন, 'বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় জমায়েত এটা। খালেদা জিয়া ইসলামের ধ্বজা ধরে থাকেন। তাহলে ইজতেমার সময় অবরোধ করেন কেন? সহ্যেরও একটা সীমা থাকে। তবে অবরোধ দিয়েও মুসল্লিদের ইজতেমায় যাওয়া বন্ধ করতে পারেননি তিনি। লাখ লাখ মুসল্লি এতে অংশ নিয়েছে।' যাঁরা ইজতেমায় মুসল্লিদের যেতে সহযোগিতা করেছেন সেই সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'কোন স্বপ্নে উনি বিভোর? উনি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অবরুদ্ধ করে রাখবেন, এটা কখনো হবে না।' খালেদা জিয়াকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের রানি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস করলে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেললে বরদাশত করা হবে না। গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আপনি যে ভুল করেছেন, তার খেসারত আপনাকে ও আপনার দলকেই দিতে হবে। জনগণ কেন এর খেসারত দেবে? জনগণ খেপে গেলে কিন্তু বিপদ হবে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়।' জনগণকে বিএনপির 'অবৈধ' অবরোধ প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'পাড়ায়, মহল্লায় কারা বোমা বানায়, আর কারা বোমা মারে, তাদের ধরে পুলিশে দেবেন। শান্তি বিনষ্ট হতে দেব না। আমাদের যা যা করা দরকার আমরা তা করব।' খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ঘর পালানো উনার পুরনো অভ্যাস। স্কুলে পড়া অবস্থায় উনি সিনেমা করার জন্য বাড়িছাড়া হয়েছিলেন। এরপর জিয়ার সঙ্গে পালিয়ে চলে যান ময়মনসিংহ। মুক্তিযুদ্ধের সময় চলে গেলেন পাকিস্তানি আর্মি অফিসার আসলাম বেগের সঙ্গে। ১৯৮৫ সালে পালালেন পূর্বাণী হোটেলে। '৮৬ সালে সিপাহি-জনতার বিপ্লবের কথা বলে তিন দিন নিরুদ্দেশ হলেন। ২০০৯ সালে বিডিআরের ঘটনার দুই ঘণ্টা আগেই উনি ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন আত্মগোপনে। এর ধারাবাহিকতায় এবার উনি খাট, সোফা, গদি নিয়ে উঠলেন গুলশান কার্যালয়ে। পত্রিকায় বেরিয়েছে, কয়েক দফা উনি খাট পরিবর্তনও করেছেন।' তিনি আরো বলেন, 'নিজে ঘরে থেকে পালাবেন আর বলবেন অবরুদ্ধ। এসব কাণ্ড দেশের মানুষ মেনে নেবে না। উনি ঘরে ফিরে গেলে কেউ বাধা দেবে না।' শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিইউ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনে (আইপিইউ) জয়ী হয়েছি। নির্বাচন যদি বৈধ না হতো তাহলে এতগুলো দেশের ভোট বাংলাদেশ পেত না।' গত এক বছরের সরকারের নানা অর্জনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'এক বছর সফলতার সঙ্গে পার হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এ জন্য কৃতজ্ঞ। এ সময়ে সমুদ্রসীমার রায়ে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছে। মন্দা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক গতি ঠিক রাখতে পেরেছে বিশ্বের এমন পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২। মূদ্রাস্ফীতি ১২-১৩ থেকে নামিয়ে ৬ দশমিক ১-এ নিয়ে এসেছি। দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পেরেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেছি।' তিনি আরো বলেন, 'সরকার যখন সফলতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছে এমন সময় বিএনপি নেত্রীর মাথায় ভূত চাপল, ৫ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন। কিসের আন্দোলন? জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদীদের নিয়ে মানুষ খুন শুরু করলেন।' সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, 'খালেদা জিয়া অবরোধ ডেকে ঘরে বসে আরাম আয়েশ করছেন। তিনি চান অবরোধের নামে গাড়িতে আগুন দিয়ে, মানুষ হত্যা করে, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে। তাই সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।' বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশ গড়ার জন্য কাজ করছেন। আর খালেদা জিয়া দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অবরোধ ডেকে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে চান আর খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান।' আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'খালেদা জিয়ার পোলা (ছেলে), লন্ডনে বসে বাজে কথা কয়। আজকের এই জনসভা থেকে ঘোষণা করতে চাই, তার পোলাকে বাংলাদেশে চিরদিনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে চাই। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।' অবরোধকে অবিলম্বে অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার নয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, '২০১৯ সালে নির্বাচনের মাঠে খেলা হবে। আপনার সাহস থাকলে সেই খেলার মাঠে অংশ নেবেন। এর আগে নির্বাচন হবে না।' সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'ফুঁ দিলে আওয়ামী লীগ উড়ে যাবে এমন দল নয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যে ভুল করেছে, তা এখন টের পাচ্ছে।' তিনি আরো বলেন, 'আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। আপনি (খালেদা জিয়া) চাইলে বয়কট করতে পারেন।'      

No comments:

Post a Comment