Tuesday, January 6, 2015

অঘোষিত কারফিউ স্থবির দেশ:নয়াদিগন্ত

রাজধানীর ফকিরাপুল কালভার্ট রোডের ফুটপাথের দোকানদার আব্দুল মজিদ। প্রতিদিনের বেচা-বিক্রির লাভ দিয়েই চলে সংসার। এক দিন দোকান খুলতে না পারলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উপোস থাকতে হয়। গতকাল সোমবার বন্ধ দোকানের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। দোকান বন্ধ কেনÑ জানতে চাইলে উত্তরে বললেন, ‘পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। বলেছে দোকান খুললেই ধরে নিয়ে যাবে। কেনÑ জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘আজ নাকি কারফিউ।’ সেগুনবাগিচা এ
লাকায় টঙ দোকান চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান আজিম। তিনি জানালেন, ‘কারফিউর মধ্যে কোনোমতে দোকানে আইছি। মা আইতে নিষেধ করছিলো। কিন্তু কী করমু। দোকান না চললে যে না খাইয়া থাকতে হইবো।’ আব্দুল মজিদ এবং আজিম কেউই জানেন না কী ঘটছে দেশে। তবে তারা এটুকু বুঝতে পেরেছেন দেশে ‘কারফিউ’ চলছে। আসলেই গতকাল রাজধানীজুড়ে ছিল কারফিউ পরিস্থিতি। সরকারি দলের নেতাকর্মী এবং প্রশাসনের লোকজন দোকানপাট, মার্কেট-বিপণি বিতান, পরিবহনÑ সবকিছুই বন্ধ করে দেয়। এতে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো দেশ। ৫ জানুয়ারির ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরেই সরকারি দল ও প্রশাসনের নানা প্রস্তুতি চলছিল। রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ ওই দিন বিকেল ৫টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। একই সাথে আরো কয়েকটি বড় বড় শহরে মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। পুলিশের এই ঘোষণার পরে ওই দিন বিকেল থেকেই পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে। বিকেল ৪টার দিকে বন্ধ করে দেয়া হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট, বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান। এমন কি টঙ দোকানও উঠিয়ে দেয়া হয়। গতকালও এই পরিস্থিতি লক্ষ করা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় ফুটপাথের দোকানও বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এ দিকে গতকাল চরম বিপাকে পড়েন অফিসগামী মানুষ। সকালে তারা রাস্তায় বের হয়ে দেখেন কোনো পরিবহন নেই। হাতেগোনা দু-একটি গণপরিবহনের দেখা মিললেও তাতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সকালে এভাবে গণপরিবহন উধাও হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় গণপরিবহন নিয়ে রাস্তায় নামার কারণে মারধরের শিকার হন পরিবহন চালক ও হেলপার। গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে ঢাকা মেট্রো জ-১৪-১২৬৪ নম্বরের একটি বাসের হেলপারকে মারধর ও বাসটি ভাঙচুর করে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই বাসটি ডেমরা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচল করে। আগের রাতেই স্থানীয় সব পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বলে দেয়া হয় গাড়ি না চালানোর জন্য। সে নির্দেশ না মানায় পুলিশ ওই গাড়ির হেলপার রমজানকে ডেকে নিয়ে মারধর করে এবং গাড়ির দুটো লুকিং গ্লাস ভেঙে ফেলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পান। সায়েদাবাদের এক পরিবহন মালিক বলেন, তাদের গাড়ি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। গত রোববার বিকেল থেকেই দূরপাল্লার সব যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জিলানী মিলটন। তিন দিনের ছুটি পেয়ে তিনি সিলেটে ঘুরতে গিয়েছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে। রোববার রাতের ট্রেনে তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু রাতে স্টেশনে গিয়ে জানতে পারেন ট্রেন বন্ধ। গতকাল পর্যন্ত তিনি আটকে ছিলেন সিলেটে। সাঈফ বাবলু নামে অপর এক পথচারী বলেন, রূপগঞ্জের গাউছিয়া থেকে তার গুলিস্তান আসার কথা ছিল। রাস্তায় এসে দেখেন বাস বন্ধ। সিএনজি অটোরিকশায় তিনি ঢাকা আসছিলেন। তারাবো বিশ্বরোড পর্যন্ত আসার পরে তিনিসহ ওই সিএনজি অটোরিকশার মোট পাঁচ যাত্রীকে পুলিশ নামিয়ে দেয়। এ দিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই এসব করেছেন। উল্লেখ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রাজধানীতে সব প্রকার সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা (১৪৪ ধারা) জারি করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

No comments:

Post a Comment