Thursday, January 8, 2015

মাতারবাড়ী ও পায়রা বন্দর ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ কর্মসূচিতে:প্রথম অালো

সরকার মাতারবাড়ী সমন্বিত বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পায়রা বন্দর প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের সংখ্যা ছয় থেকে বেড়ে আটটি হলো। এ ছাড়া ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে দুর্নীতি রোধে ১১ দফা কর্মপন্থা চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্
ট মনিটরিং টাস্কফোর্স’-এর সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পায়রা বন্দরসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা যায় কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখার জন্য সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন। এই কর্মসূচিভুক্ত আগের ছয়টি প্রকল্প হচ্ছে পদ্মা সেতু, কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকায় মেট্রোরেল, বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র; পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে টার্মিনাল নির্মাণ। সভার সূত্র প্রথম আলোকে বলেন, সভায় ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, আগের ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে তিনটির অগ্রগতি এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। এই তিনটি হচ্ছে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, গভীর সমুদ্রবন্দর ও মেট্রোরেল প্রকল্প। অবশ্য মেট্রোরেল প্রকল্পের লাইন ৬-এর জন্য কিছুদিন আগে ভূতাত্ত্বিক জরিপের কাজ শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন প্রকল্পটির বয়স প্রায় পাঁচ বছর। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পরও বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দুই বছরের মধ্যে’ এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন সম্পন্ন হবে। তবে এখনো যা অবস্থা, তাতে বর্তমান সরকারের পূর্ণ মেয়াদেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে সংশয় আছে বলে সরকারি সূত্র জানায়। গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্পটি কারা বাস্তবায়ন করবে, তা নিয়ে রীতিমতো কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। এই প্রকল্পের কাজের জন্য চীন, ভারত, জাপান ও সর্বশেষ সংযুক্ত আরব আমিরাত আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দেশ এ বিষয়ে তাদের পরিকল্পনাও সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। সরকারের জন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন একটি কূটনৈতিক দক্ষতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি সূত্র জানায়, আগ্রহী দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করার জন্য সরকার পায়রা বন্দরসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরেও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের চিন্তা করছে। এ ছাড়া নতুন যে দুটি প্রকল্প গতকালের সভায় ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে পায়রা বন্দরও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কিছু নয়। তবে মাতারবাড়ী প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি অনেক। এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। জাপানের টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিসেস ও নিপ্পন কোয়েই কোম্পানি, জার্মানির ফিশনার জিএমবিআর অ্যান্ড কোম্পানি ও অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগ এই প্রকল্পের পরামর্শক নিযুক্ত হয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে গতকালের সভায় চূড়ান্ত করা ১১ দফা কর্মপন্থার মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়নীতি কিংবা দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির বিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করা। প্রয়োজনে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) পরামর্শ নেওয়া। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এই প্রকল্পের জন্য একটি স্থান রাখতে হবে। সেখানে প্রকল্পের কার্যক্রমের ছবি ও ভিডিওসহ অগ্রগতি উল্লেখ করতে হবে। সিপিটিইউ বা আইএমইডি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকল্প পরিবীক্ষণ করবে। পরিবীক্ষণ ছক অনুযায়ী ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে টাস্কফোর্সের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে।

No comments:

Post a Comment