চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২৭৭ মামলার ফাঁদে আটকা পড়েছে বিএনপি-জামায়াতের ৩২ হাজার নেতাকর্মী। এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীরাও এখন ঘরছাড়া। ফলে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারছেন না। ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অবরোধে নাশকতার অভিযোগে নগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ১২টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। গত দুই সপ্তাহে গ্র
েফতার করা হয়েছে ৫শ’ নেতাকর্মীকে। মামলায় এজাহারভুক্ত নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে চলছে পুলিশের অভিযান। মামলার ভয়ে প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং করতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। গ্রেফতারের ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন অধিকাংশ নেতাকর্মী। এর পাশাপাশি নতুনভাবে চাঙ্গা হচ্ছে গত দুই বছরে হরতাল-অবরোধে সহিংসতার অভিযোগে দায়ের করা ২৬৫টি মামলা। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নগর ও ওয়ার্ড কমিটির শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২৫ থেকে ৩০ মামলায় আসামি হিসেবে নাম রয়েছে। হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন সময়ে নাশকতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করে। এরমধ্যে প্রায় ১শ’ মামলার চার্জশিট ইতিমধ্যে আদালতে জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা। এসব মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোটের ৩২ হাজার নেতাকর্মী। আদালতে চার্জশিট দায়ের করা এসব মামলার শুরু হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়া। বাকি মামলার চার্জশিট দ্রুত প্রদানের জন্য সম্প্রতি তদন্ত কর্মকর্তাদের ডেকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল যুগান্তরকে জানান, ২০১৩-১৪ সালে নাশকতার অভিযোগে পুলিশের করা কিছু মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। বাকি মামলার তদন্ত চলছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই ওইসব মামলার তদন্ত শেষ করা সম্ভব হবে। সিএমপি সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরণসহ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় এবং গেল বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা সহিংসতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর বিভিন্ন থানায় দুই বছরে দায়ের করে ২৬৫ মামলা। এরমধ্যে ২০১৪ সালে দায়ের করা ১৬০ মামলায় ১৯শ’ জনের নাম উল্লেখসহ ১৬ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ২০১৩ সালে দায়ের করা ১০৫টি মামলায় ৯১৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৪ হাজার ২৪৭ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে পুলিশ। ২০১৪ সালে নগরীর ১৬টি থানায় পুলিশের করা ১৬০টি মামলার মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ৪১, বাকলিয়ায় ১২, চকবাজারে ৩, সদরঘাটে ২, পাঁচলাইশে ২৬, খুলশীতে ৫, বায়েজিদ বোস্তামীতে ৬, চান্দগাঁওতে ১৩, ডবলমুরিং ৯, হালিশহরে ৬, পাহাড়তলীতে ১৪, আকবরশাহতে ১০, বন্দরে ৭, ইপিজেডে ৩, পতেঙ্গায় ১ এবং কর্ণফুলীতে ২টি। বিস্ফোরক, দ্রুত বিচার ও সন্ত্রাস দমন আইনে করা এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩ হাজার নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩২ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ৬ জানুয়ারি অবরোধের পর থেকে সহিংসতার অভিযোগে পুলিশ যে ১২টি মামলা করেছে তার অধিকাংশ মামলাতেই অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা উল্লেখ না করে বলা হয়েছে ‘আরও অনেকে’ সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল। মামলা আতংকে ঘরছাড়া বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা। এমনকি মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মী এখন আত্মগোপনে। আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি আসলাম চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হকসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। জামায়াতের মহানগর আমীর ও সেক্রেটারিসহ শীর্ষ পর্যায়ে নেতাকর্মী রয়েছে কারাগারে। মামলার কারণে বাকি নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে অংশ নিতে পারছেন না। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে করা ২৬৫ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে এজাহারভুক্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হবে মামলায়। কেননা, এসব মামলায় কিছু কিছু নেতাকর্মী রয়েছে যাদের নাম ৩০ থেকে ৩৫টিতে রয়েছে। তবে ওইসব মামলায় বিএনপি-জামায়াত কর্মী ছাড়াও অসংখ্য নিরীহ লোকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যাদের অধিকাংশের নাম মামলার এজহারে ছিল না। গ্রেফতারের পর এসব মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। দায়ের করা মামলাকে কেন্দ্র করে শুরু থেকে থানা পুলিশের এক ধরনের বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পুলিশ নিরীহ লোকজনকে আটকের পর ওইসব মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে। অন্যথায় এসব মামলায় আসামি করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এ ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ সিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।
No comments:
Post a Comment