Wednesday, January 7, 2015

আবার অস্ত্র কেড়ে পুলিশকে পিটুনি:প্রথম অালো

রাজশাহীতে প্রকাশ্যে পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাঁদের দুই সদস্যকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। হামলাকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন পুলিশের আরও দুজন সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলাকারীদের ছাত্রশিবিরের কর্মী হিসেবে শনাক্ত করলেও সংগঠনটির দাবি, তারা এ ঘটনায় জড়িত নয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে গতকাল মঙ্গলবার নগরের সপুরা এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। এর আগে ২০১২ সালের ৬
নভেম্বর সাহেব বাজার এলাকায় বন্দুক কেড়ে নিয়ে এক পুলিশকে পেটানোর পর সেটি ভেঙে ফেলেছিলেন শিবিরের কর্মীরা। আর ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল শালবাগান এলাকায় অস্ত্র কেড়ে নিয়ে আরও পুলিশের এক সদস্যকে পিটিয়ে জখম করেছিলেন তাঁরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রাত নয়টার দিকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকালের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় এখনো বলা যাচ্ছে না। গতকালের হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন শাহমখদুম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন এবং কনস্টেবল শফিকুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন ও জামাল উদ্দিন। তাঁদের মধ্যে পিটুনিতে গুরুতর আহত শফিকুল ও আমজাদকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। ঢিলে আহত দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের সপুরা এলাকার আলিফ লাম মিম ইটভাটার পাশে রাস্তায় আগুন দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন হরতাল সমর্থকেরা। সেই সময় শাহমখদুম থানার একটি পুলিশ ভ্যান অবরোধস্থলের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু কাছাকাছি এসে পুলিশ সদস্যরা গাড়িটিকে দ্রুত ঘুরিয়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এর আগেই শিবির কর্মীরা ইটপাটকেল নিয়ে ধাওয়া করে গাড়িটি ঘিরে ফেলে ভাঙচুর চালান। এ সময় কনস্টেবল শফিকুল ও আমজাদ গাড়ি থেকে নেমে এলে তাঁদের ওপর ঝঁপিয়ে পড়েন শিবির কর্মীরা। তাঁরা শফিকুলের বন্দুক কেড়ে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে দেন। আমজাদ হোসেনকেও পেটান তাঁরা। তবে বন্দুক তাঁর হাতেই ছিল। হামলার পর চলে যাওয়ার আগে একজন শিবির কর্মী কনস্টেবল শফিকুলের গায়ে একটা গুতো দিয়ে বন্দুকটি খানিকটা দূরে ফেলে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার একপর্যায়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে ধাওয়া করলে শিবিরের কর্মীরা পালিয়ে যান। তখন গুরুতর আহত শফিকুল ইসলাম রাস্তার ওপর উঠে বসেন ও বিজিবির সদস্যরা তাঁকে টেনে ওপরে তোলেন। এ সময় তাঁর মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। ঢিলের আঘাতে গাড়ির ভেতর থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেনের ঘাড় ও হাতে জখম হয়েছে। অপর কনস্টেবল জামাল উদ্দিন পায়ে জখম হন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম দাবি করেন, পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাননি। অবরোধকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টার সময় শিবিরের কর্মীরা পুলিশের ওপর ওই হামলা চালান। ছাত্রশিবিরের ভাষ্য: পুলিশের ওপর হামলার কথা নাকচ করেছে ছাত্রশিবির। রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম দাবি করেন, এই নগরে আজ (মঙ্গলবার) সারা দিন তাঁদের একটিই কর্মসূচি ছিল কোর্টবাজারে। সেটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এর সঙ্গে তাঁদের সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা নেই। পুলিশের ওপর ককটেল: সন্ধ্যায় নগরের হেতেম খাঁ এলাকায় হরতাল-সমর্থকেরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে একটি ককটেল ছুড়ে মেরেছেন। ককটেলটি পুলিশের গাড়ির ওপর বিস্ফোরিত হলেও কেউ হতাহত হননি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোয়া ছয়টার দিকে হরতালের সমর্থনে হেতেম খাঁ সব্জিপাড়া এলাকা থেকে ২০-দলীয় জোটের সমর্থকেরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি সদর হাসপাতালের মোড়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের গাড়িতে ওই ককটেল ছোড়া হয়। মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, হরতালকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করলে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের হটিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানার পুলিশ একজনকে আটক করেছে।

No comments:

Post a Comment