Wednesday, January 7, 2015

বাস চলছে না, দুর্ভোগ:প্রথম অালো

২০–দলীয় জোটের অবরোধের প্রথম দিন: পুলিশি পাহারায় কাভার্ড ভ্যান ও বাস চালানোর সিদ্ধান্ত সরকারের বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও এবং গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় কিছু যাত্রীবাহী যানবাহন চললেও দূরপাল্লার পথে কোনো বাস চলেনি। তবে রেল ও নৌ যোগাযোগ স্বাভাবিক ছিল। কিছু এলাকায় ঝটিকা মিছিল ছাড়া ঢাকায় অবরোধের সমর্থনে ২০-দলীয় জোট
ের তৎপরতা চোখে পড়েনি। তবে ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে হরতাল–সমর্থকেরা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকালও তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলেন। কার্যালয় থেকে বের হওয়ার ফটকগুলোতে সোমবার দুপুর ১২টায় তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই তালা খোলা হয়নি। গতকাল রাত আটটা পর্যন্ত ঢাকায় সাতটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল সরকারি দল ও বিরোধী জোট। সোমবার পুলিশ ও সরকার-সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির চার নেতা-কর্মী মারা গেছেন। চাঁদপুরে আহত একজন গতকাল মারা যান। এদিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজির কার্যালয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে একটি বৈঠক হয় কাল দুপুরে। পুলিশি পাহারায় রপ্তানি পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান চালানোর সিদ্ধান্ত হয় এ বৈঠকে। আজ থেকে কোনো কোনো মহাসড়কে পুলিশি পাহারায় যাত্রীবাহী বাস চালানোরও সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক পরিবহনমালিক জানান, একসঙ্গে অনেকগুলো বাস-কাভার্ড ভ্যানের বহর তৈরি করে সামনে-পেছনে পুলিশ দিয়ে মহাসড়কে ছাড়া হবে। মহাসড়ক-সংলগ্ন জেলা পুলিশ এর নিরাপত্তা দেবে। এক জেলার সীমানা শেষ হলে অন্য জেলার পুলিশের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে। ২০১৩ সালের শেষ দিকে টানা অবরোধের সময়ও এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে এতে অনেক বাস-কাভার্ড ভ্যান মালিকই সাড়া দেননি। এবারও অনেক মালিক এর সফলতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে। মালিকেরা পরিবহন বসিয়ে রেখে ব্যাংকঋণের সুদ গুনছেন। যাত্রীরাও দুর্ভোগে আছেন। জাতীয় অর্থনীতির গতি ধরে রাখা এবং পরিবহন খাতকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘অবরুদ্ধ’ খালেদা জিয়া গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের টঙ্গীতে বসছে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। এ সময় অবরোধ কর্মসূচি থাকবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট করেনি জোট। সড়ক, রেল ও নৌপথ: অবরোধের প্রথম দিনে গতকাল দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরের বাস চলেনি। ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে বাস চলাচল করলেও তা সংখ্যায় কম ছিল। ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ কম থাকায় ব্যস্ত ঢাকা মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। রেলপথে সব ট্রেনই ছেড়ে গেছে। রেলপথে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, আন্তনগর এবং মেইল উভয় ট্রেনের প্রতিটি কাউন্টারের সামনে মানুষের ভিড়। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিলেটের কলেজছাত্র আকরাম রানা জানান, তাঁর মাকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় এসে আটকা পড়েছেন। বাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে ট্রেনের টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কুমিল্লার লাকসামের মোহাম্মদ জাফর জানান, তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থাকার পর দুই মাস আগে দেশে এসেছেন। ঢাকায় একটি কাজে এসেছিলেন। এখন আর ফিরতে পারছেন না। রেলওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মল্লিক ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার, ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিশেষ দল গঠন করা হয়। রাজধানীতে যানবাহনে আগুন: ঢাকায় অবরোধের পক্ষে ২০-দলীয় জোটের কোনো কর্মসূচি চোখে পড়েনি। তবে ঝটিকা মিছিল ও চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাত আটটা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সাতটি যানবাহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। ককটেল বিস্ফোরণ হয় বেশ কিছু স্থানে। বেলা আড়াইটার দিকে পল্টনে রাজউক ভবনের বিপরীত দিতে বিআরটিসির একটি বাস ও কারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রায় একই সময়ে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগে পুড়িয়ে দেওয়া হয় আরেকটি বাস। দুপুরের দিকে মিরপুর ১০ নম্বরে বিকল্প সিটি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গুলিস্তান ও মহাখালীতে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে তিনটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করেন বিএনপি-সমর্থক আইজীবীরা। বেলা দুইটার দিকে কাছাকাছি নয়াবাজার মোড়ে সাভার পরিবহন লিমিটেডের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে আটটার দিকে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল এলাকায় অবরোধের সমর্থনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রশিবির। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে আটটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় তারা। পরে নয়টার দিকে আবার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় মিছিল বের করে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় শিবির। সারা দেশে সংঘর্ষ: গতকাল দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কমপক্ষে সাতজন আহত হন। পুলিশ দুজনকে আটক করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী হোসেন মার্কেট এলাকায় মিছিল বের করে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল। কিছুদূর যাওয়ার পর পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের লাঠিপেটার জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে মিছিলকারীরা। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সোমবার দুই কর্মী রাকিব মুন্সি ও রায়হান আলীর মৃত্যুর প্রতিবাদে নাটোর জেলা বিএনপি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ হরতালবিরোধী মিছিল করে। বিজিবির সদস্যরাও শহরে টহল দেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আলেখারচর এলাকায় গতকাল সকালে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এতে পাঁচটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছয়টি শটগানের গুলি ও দুটি টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। {প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা এবং গাজীপুর, নাটোর, জামালপুর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি}

No comments:

Post a Comment