Wednesday, January 28, 2015

উৎকণ্ঠার শহরে সুরের প্রশান্তি:প্রথম অালো

অবরোধ আর উৎকণ্ঠার শহরে শান্তির বারতা হয়ে নেমে এল গান। নীলাভ মঞ্চ আর হৃদয় আকুল করা গানে রাজধানী স্নাত হলো আরেকবার। টানা অবরোধের উত্তাপ ছিল আমাদের এই নগরে। ছিল সহিংসতার চোখরাঙানি। কিন্তু শেষতক জয় হয়েছে শুধুই সংগীতের। সংগীতই সম্ভবত পারে যাবতীয় উৎকণ্ঠা আর সহিংসতার আগুন দূরে সরিয়ে মানবতার জয়গান গাইতে। সংগীতের সেই জাদুকরি ক্ষমতার সঙ্গেই গতকাল আরেকবার পরিচয় করিয়ে দিল সুফি গানের উৎসব। সব মিলিয়ে বিজয় স
রণির সামরিক জাদুঘর মাঠের শ্রোতারা পার করলেন সংগীতময় এক রাত। ‘সুফি ফেস্ট ঢাকা ২০১৫’ শিরোনামের ব্লুজ কমিউনিকেশনস আয়োজিত, আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত এই অনন্য আয়োজন ঘিরে ছিল প্রত্যাশা অনেক। সেই প্রত্যাশার চাপ এমনই যে সেটা অবরোধ কিংবা হরতালের বাধাকে অনায়াসে ছাপিয়ে যেতে পারে। হলোও তাই। শীতের সন্ধ্যায় বহুজাতিক এই আয়োজনে বাংলাদেশের গর্বিত প্রতিনিধি হয়ে অর্ণব আর তাঁর বন্ধুরা যখন উঠলেন মঞ্চে, ততক্ষণে বাড়তে শুরু করেছে ভিড়ও। অর্ণবরা শুরু করেন ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ দিয়ে। তারপর তাঁরা সদলবলে গেয়েছেন, ‘অমৃত মেঘের বারি’, ‘মাওলা’, ‘চরণছাড়া করো না হে দয়াল’-এর মতো গানগুলো। অর্ণবের পরে ছিল ভারতের গুজরাটের দল সিডি গোমার পরিবেশনা। বহুকাল আগে পূর্ব আফ্রিকার একদল সুফি সাধক ভারতে এসে বসতি গড়েছিলেন। তাঁদের একটি প্রজন্ম এখনো আছে গুজরাটে। তাঁদেরই কয়েকজন মিলে দাঁড় করিয়েছেন আফ্রিকান ধাঁচের দল ‘সিডি গোমা’। তাঁদের ব্যতিক্রমী পরিবেশনায় দর্শক ছিল মন্ত্রমুগ্ধ। তবে বড় চমকটা দেখিয়েছে তিউনিসিয়ার দল ‘মেশকেত’। দরদি সুরে তাঁরা জানান দিয়েছে উত্তর আফ্রিকার এই দেশ আদতেই সুফি গানের ঐতিহ্যের দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে। আর সবার শেষে মঞ্চে আসেন জাভেদ আলী। প্রথম রাতের শেষটা নিজের করে নিয়েছেন বলিউডের এই সংগীতশিল্পী। ‘আসসালামুআলাইকুম ঢাকা’ বলে জাভেদ শুরু করেছেন তাঁর পরিবেশনা। দর্শক-শ্রোতারা আকুল হয়েছেন এ আর রহমানের সুর করা জাভেদের ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল গান ‘কেহনে কো জশনে বাহারা’-এর সুরে। জাভেদের পরিবেশনা চলেছে গভীর রাত অবধি। সুফি ফেস্টের উদ্বোধন সন্ধ্যায় ঢাকার বিজয় সরণির সামরিক জাদুঘর মাঠে ‘সুফি ফেস্ট ঢাকা ২০১৫’-এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসের আগুনে যখন মানুষ পুড়ছে, তখন সবচেয়ে বেশি দরকার মানবতা। আর সংগীতই পারে মানুষের মানবতাবোধকে জাগাতে। আমাদের দেশ লালন-হাসনের দেশ। আমাদের দেশেও সুফি সংগীতের ধারা অত্যন্ত শক্তিশালী।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। আরও চমক আজ সন্ধ্যায় শুরু হবে সুফি গানের উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। আগামী দুই দিনে থাকবে স্পেনের জিক্র, ডেনমার্কের সেরেনাস ও মিসরের মওলাইয়ার মতো বিখ্যাত সুফি গানের দলগুলোর পরিবেশনা। থাকবেন রাহাত ফতেহ আলী খান। ব্লুজ কমিউনিকেশনসের প্রধান নির্বাহী ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে বিশ্বের বিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে আমরা কনসার্ট আয়োজন করেছি। কিন্তু ঢাকায় আন্তর্জাতিক শিল্পীদের নিয়ে সুফি উৎসবের মতো একটি ভিন্নধারার আয়োজন এই প্রথম।’

No comments:

Post a Comment