Wednesday, January 28, 2015

বড় ঋণখেলাপিদের ঋণ পুনর্গঠন হচ্ছে:প্রথম অালো

বড় ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিতে বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠনের নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এর আওতায় ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি বড় অঙ্কের ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে। গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ গতকাল মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত নীতিমালাটি অনুমোদন করেছে। নীতিমালা অনুসারে মেয়াদি ঋণ পুনর্গঠন হবে সর্বোচ্চ ১২ বছরের জন্য। আর তলবি ও চলমান ঋণ পুনর্গঠন হবে ছয় বছরে
র জন্য। ঋণের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার কম হলে ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন জমা দিতে হবে ২ শতাংশ হারে। আর এক হাজার কোটি টাকা ও তার বেশি পরিমাণ ঋণের জন্য এককালীন জমা দিতে হবে ১ শতাংশ হারে। নীতিমালা অনুসারে কোনো একক বা গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান এককভাবে কিংবা কনসোর্টিয়াম গঠনের মাধ্যমে ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে। একজন গ্রাহক একবারই এ সুবিধা পাবেন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় পুনর্গঠনের আবেদন করা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বৈশ্বিক মন্দা, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম ওঠানামার কারণে অনেক উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অবশ্য অদক্ষতার কারণেও অনেকে সমস্যায় রয়েছেন। এখন এসব প্রতিষ্ঠান ও সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঋণ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, যেসব ঋণগ্রহীতা অপরিহার্য কারণে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি, তাঁদের ঋণ পরিশোধে কিছুটা নীতি-সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করা ও ব্যাংকের ঋণ আদায় নিশ্চিত করতে এ জাতীয় ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ পুনর্গঠিত ঋণগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারির ওপর জোর দেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রতি তিন মাসে পুনর্গঠিত ঋণগুলোর পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পৃথকভাবে পাঠাতে হবে। আর ছয় মাস অন্তর বাংলাদেশ ব্যাংকের সরেজমিনে বিশেষ পরিদর্শন থাকতে হবে ঋণগুলোতে। তবে অভ্যাসগত খেলাপিদের এ সুবিধা দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি অভ্যাসগত খেলাপি হিসেবে তাদেরই উল্লেখ করেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ইতিমধ্যেই তিনবার পর্যন্ত খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করেছে বা একবারও পুনর্গঠন করেছে। পুনর্গঠিত ঋণ পরপর দুটি ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুবিধা বাতিল এবং ঋণটি বিদ্যমান শ্রেণীকরণ নীতিমালা অনুযায়ী শ্রেণীকৃত হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে নেওয়া প্রচলিত আইনগত পদক্ষেপ কার্যকর না হলে দেউলিয়া আইন, ১৯৯৭ এর আওতায় মামলা দায়ের করা যাবে। ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা নেওয়া কোনো গ্রাহক প্রথম তিন বছর কোনো নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না। প্রথম তিন বছরে সর্বশেষ ঋণ মঞ্জুর সীমার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত তলবি ও চলমান ঋণসুবিধা এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত সর্বশেষ মঞ্জুর করা ঋণের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মেয়াদি ঋণ নিতে পারবে। ঋণগ্রহীতার আর্থিক সক্ষমতা ও প্রাক্কলিত ক্যাশ-ফ্লো বা নগদ প্রবাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট প্রতিষ্ঠান দিয়ে প্রত্যয়ন করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলাদিসহ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর ব্যাংক পুনর্গঠিত ঋণের আর্থিক প্রক্ষেপণ, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও বিভিন্ন ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করবে। ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরিচালনা পর্ষদে পাঠাবে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য অনুমোদন করলে পুনর্গঠন প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠাতে হবে। পুনর্গঠিত ঋণগুলো ‘স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট’ বা বিশেষ ব্যবস্থাধীনে শ্রেণীকৃত থাকবে এবং নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে। তবে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোনো ঋণগ্রহীতা এ পুনর্গঠন সুযোগ পাবে না। ব্যাংকগুলো তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে পুনর্গঠিত ঋণের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ঋণ পরিশোধে গ্রাহকের সদিচ্ছা, ব্যাংকের পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক দৃষ্টি এ ব্যবস্থাটি কার্যকর হওয়ার পূর্বশর্ত। এ নীতিমালাটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বৃহদাঙ্ক ঋণের খেলাপজনিত সংকট উত্তরণ সম্ভব হবে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ২১ ডিসেম্বর কয়েকটি বড় গ্রুপের ঋণ কেস-টু-কেস বা প্রত্যেকটির জন্য পৃথক বিবেচনায় পুনর্গঠনের আলোচনা উঠলে পর্ষদ একটি নীতিমালা করার নির্দেশনা দেয়। পর্ষদের নির্দেশনা অনুসারেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এস এম রবিউল হাসানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। গতকাল পর্ষদের বৈঠকে খসড়া নীতিমালাটি উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সব পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের ঋণ পুনঃ তফসিলে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সুবিধার আওতায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃ তফসিল হয়। ব্যাংক খাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ হয়েছে। যা ওই সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা প্রায় ৪ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ।

No comments:

Post a Comment