Friday, January 16, 2015

পরিবহন খাতে ক্ষতি দুই হাজার কোটি টাকা:যুগান্তর

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের ১০ দিনে শুধু পরিবহন খাতে দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখায় দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে কম-বেশি দুইশ’ কোটি টাকা। অবরোধকারীদের হামলায় গত দশ দিনে ১৭১ গাড়িতে অংগ্নিসংযোগ, প্রায় চারশ’ গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়েছে। মারা গেছেন ১৪ পরিবহন শ্রমিক। অবরোধে সারা দেশে ২ লাখের বেশি বাস-ট্রাক অলসভাবে পড়ে আছে
। পরিবহনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। অবরোধ ও হরতালে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ এবং শ্রমিক হতাহতের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে বক্তারা পরিবহন খাতকে অবরোধের আওতামুক্ত রাখা, গাড়ির ওপর হামলা বন্ধ, সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান। হামলা বন্ধ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে দিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ওই মিছিল-সমাবেশ করে। পরিবহন মালিকদের মতে, গাড়ির চাকা না ঘোরায় প্রতিদিনের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পরিবহন খাতে খরচ অব্যাহত রয়েছে। চালক ও হেলপারদের খোরাকি দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে ব্যাংক ঋণের সুদ। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকের কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারায় মামলার আশংকায় রয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে অঘোষিতভাবে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন বিকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কারণে কার্যত আন্তঃজেলা বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন খাতের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, সারা দেশে বাস-ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে তিন লাখ। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন আড়াই লাখ বাস-ট্রাক চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ি থেকে গড়ে ৮ হাজার টাকা আয় ধরা হলে দৈনিক ২০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মালিকরা। এ ছাড়া প্রতিদিনই অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে। ফলে সব মিলিয়ে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ কোটি টাকা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন মালিকরা। এ পরিবহন নেতার তথ্য অনুযায়ী, ১০ দিনে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন মালিকরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহের ফেডারেশন এফবিসিসিআই ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে জানায়, টানা অবরোধের কারণে কেবল পরিবহন খাতেই প্রতিদিন গড়ে ২শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ হিসাবেও গত দশ দিনে ক্ষতি হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। দূরপাল্লার রুটে গাড়ি চলাচল করে এমন একটি বড় কোম্পানির মালিক বলেন, হাইওয়ে চলাচলকারী নতুন নন-এসি গাড়ির দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা এবং এসি গাড়ির দাম এক থেকে আড়াই কোটি টাকা। আগুনে ভস্মীভূত হলে ওই গাড়ি চলাচলের উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে। আগুনে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাংচুরের শিকার হলে মেরামতে কয়েক লাখ টাকা খরচ পড়ে। তবে ছোট গাড়ির দাম ও মেরামত খরচ অনেক কম। হামলার শিকার গাড়ির প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হামলায় অল্প ক্ষয়ক্ষতির শিকার গাড়িগুলো আইনি ঝামেলা এড়াতে থানায় রিপোর্ট করে না। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির খবর গণমাধ্যমে আসে না। তবে যেসব গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়, সেগুলো থানায় মামলা বা জিডি করে থাকে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ১৪ জানুয়ারি ২০ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সারা দেশে অবরোধের প্রথম দিন ৬ জানুয়ারি ১৬, ৭ জানুয়ারি ১৪, ৮ জানুয়ারি ১৪, ৯ জানুয়ারি ১৪, ১০ জানুয়ারি ২২, ১১ জানুয়ারি ২০, ১২ জানুয়ারি ২০ ও ১৩ জানুয়ারি ১১টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভ : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক খোন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, গাড়ি জ্বালিয়ে, পরিবহন শ্রমিকদের পুড়িয়ে কী গণতন্ত্র রক্ষা হবে। আমরা সারা দেশে গাড়ি চলাচল ও পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখব। সরকার যে নিরাপত্তা দিচ্ছে তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেন তিনি। সংগঠনের সদস্য সচিব ওসমান আলী বলেন, পরিবহনের ওপর হামলা বন্ধ না হলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। ফের হামলা হলে নির্দেশদাতা নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে বের করে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে। ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলন হবে- এটাই স্বাভাবিক। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই। তবুও রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রথম হামলার শিকার হয় পরিবহন সেক্টর। তিনি বলেন, সরকারের চাহিদা ও নিয়ম মানার কারণে আমাদের গাড়ি চালাতে হচ্ছে। হামলায় প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। সরকার এ মুহূর্তে যদি আমাদের ক্ষতিপূরণ দেয়, তবে আমাদের সাহস আরও বাড়বে।  

No comments:

Post a Comment