Friday, January 16, 2015

অপরাধী কারা?:যুগান্তর

কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ও জনবহুল স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটনার পরপরই নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা গুলি ছুড়ছে, তারা খুবই দক্ষ এবং তাদের নিশানাও নির্ভুল। এমনকি তারা অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করছে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনাও। সবকিছুই ঘটছে সুুপরিকল্পিতভাবে। টার্গেট করে ধীরে ধীরে এগোচ্ছ
ে তারা। কিন্তু অপরাধী কারা- তা এখনও চিহ্নিত হয়নি। নিরাপত্তার ভারি চাদরে ঢাকা বেশ কয়েকটি স্থানে নাশকতা হওয়ায় কর্তব্যরত আইনশৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতা, বিচারক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির গাড়ি, কার্যালয় ও বাড়ি-ঘরে হামলাকারীদের পরিচয় নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি কর্মী নাও হতে পারে বলে ধারণা তাদের। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ ও হরতালসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে চলেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। অন্যদিকে সরকারের পুরো মেয়াদ সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের এমন অনড় অবস্থানকে পুঁজি করে অতীতে বারবার কাজে লাগিয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। যার খেসারত দিতে হয়েছে দুই দলকেই। তাদের ধারণা এ মুহূর্তে আবারও তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে ওই মহলটি। চলমান নাশকতা ও সহিংসতার মধ্যেই দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ (ভিআইপি) ব্যক্তিরা সন্ত্রাসীদের টার্গেট হতে পারেন বলে আশংকা করছেন গোয়েন্দারাও। জানতে চাইলে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের নিরাপত্তার কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ভিআইপিরা টার্গেট হতে পারেন- এই মর্মে ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সেখানে ভিআইপিদের সফর সংক্ষিপ্ত করার কথা বলা হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এএসএম শাহজাহান বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংকট দেখা দিলে সুযোগসন্ধানী মহল বিভিন্ন ধরনের অঘটন ঘটায়। আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, এখনও হচ্ছে। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত এদের চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে দমন করা। ২০ দলীয় জোটের ডাকা চলমান অবরোধে আইনমন্ত্রীর বাড়িতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমাবেশে, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও হাইকোর্ট চত্বরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, বিচারপতি, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের ওপর বিক্ষিপ্ত হামলার ঘটনায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতংক ও উদ্বেগ। পুলিশ-বিজিবি পাহারা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় সর্বশেষ বুধবার মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় পাঁচজন নিহত ও ১১ জন দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর গুলির ঘটনায় সরকার ও বিরোধী রাজনীতিকরাও আতংকের মধ্যে আছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সুসম্পর্ক থাকা বিএনপির এই নেতার ওপর হামলার ঘটনায় সরকারি দলের নেতারাও অস্বস্তিতে পড়েছেন। এর আগেও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা, আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর গুলশানের বাসভবন লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া, উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের মালিবাগ চৌধুরীপাড়া চেম্বারের সামনে ককটেলের বিস্ফোরণ, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকারের বাসার সামনে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল কাদের মিয়া যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাধারণত দুটি বড় গ্র“প থাকে। আর এদের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে ফায়দা নেয় সুযোগসন্ধানী মহল বা তৃতীয় কোনো পক্ষ। রাজনৈতিক অরাজকতা তৈরি করতে পারলেই তৃতীয় পক্ষ সুযোগ বা ফায়দা হাসিলের সুযোগ পায়। এছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে মারাত্মকভাবে রাজনীতিকরণের ফলে একটি অংশের ক্ষোভের কারণেও এসব ঘটনা হতে পারে। তিনি বলেন, যারা আইনশৃংখলা বাহিনীর আশপাশ দিয়ে পেশাজীবীদের গাড়িতে হামলা করছে, তারা খুবই চতুর। এরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতেও দক্ষ। তারা ‘অরগাইনজড ক্রাইম’ করার মতো দক্ষতা রাখে। রাজনীতির ভেতরে ও বাইরে এদের বিচরণ। মো. আবদুল কাদের মিয়া আরও বলেন, অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের অপরাধকে ‘পলিটিক্যালি মোটিভেটেড ক্রাইম’ বলা হয়। আমাদের দেশের রাজনীতিতে যে অপরাধ ছড়িয়ে পড়েছে বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলে ‘ক্রিমিনালাইজেশন ইন পলিটিক্স’। রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করাই এ ধরনের অপরাধের মূল লক্ষ্য। আবার জনমনে আতংক ছড়িয়ে ক্ষুব্ধ করে তোলাও অন্যতম আরেকটি কারণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কূটনীতিকপাড়ায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কারও পক্ষে সহজেই পার পাওয়ার কথা নয়। কানাডিয়ান ও সৌদি দূতাবাসের সামনে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো আছে। গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যেসব স্থানে ককটেল নিক্ষেপ হয়েছে, সেখানকার অধিকাংশ স্থানেই এই ক্যামেরা দিয়ে বেষ্টনী। ককটেল নিক্ষেপের সময়ও নিক্ষেপকারীদের দেখে ফেলা সম্ভব। পুলিশের এ সক্ষমতা আছে। কিন্তু নিক্ষেপকারীরা ধরা পড়ছে না। আবার যেখানে টহল জোরদার আছে তার আশপাশেই নিক্ষেপ হচ্ছে ককটেল। পুলিশও আক্রান্ত হচ্ছে। এ থেকে পুলিশের পেশাদারিত্ব ও কর্তব্য পালন নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আজিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া এসব অপরাধ অন্যান্য সাধারণ অপরাধমূলক ঘটনা থেকে ভিন্ন। এ মুহূর্তের অপরাধগুলোর মধ্যে যেমন গুলি বর্ষণ, ককটেল নিক্ষেপ, বোমাবাজি ইত্যাদিকে অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘পলিটিক্যালি ইনফ্লুয়েঞ্জড ক্রাইম’। এসব অপরাধ সাধারণত রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়া দলের প্ররোচনায় হতে পারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের দ্বারাও ঘটে থাকতে পারে। তবে যে-ই এ অপরাধ ঘটিয়ে থাকুক না কেন, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মাঝে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি করা। জনমনে আতংক ও ত্রাস সৃষ্টি করে সেই দল তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না কিংবা ধরছে না কেন? এ ক্ষেত্রে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত আমাদের দেশের পুলিশ এসব রাজনৈতিক সংঘাতের সঙ্গে অতিপরিচিত, গত কয়েক দশক ধরে তারা এসব সংঘাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তারা জানেন, ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে আজকের ঘটনাই ঘুরেফিরে কাল একইভাবে ঘটবে। তাই তারা হয়তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ধরনের অপরাধীদের ধরছে না। অন্য কারণগুলোর মধ্যে অপরাধের তাৎক্ষণাৎ প্রমাণের অভাবের ফলে হতে পারে। এছাড়া আমাদের পুলিশ বাহিনীর প্রযুক্তিগত অনেক সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যেমন বিচারপতি, পুলিশের কর্মকর্তা ইত্যাদি শ্রেণীর ব্যক্তিদের ওপর পৃথকভাবে হামলা হচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সামনে দিয়েই। তবুও পুলিশ অপরাধীদের ধরতে পারছে না, এটা একটি ‘রহস্যজনক’ বিষয় বলা যেতে পারে। রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ এসব কর্তাব্যক্তির ওপর চোরাগোপ্তা হামলার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া ছাড়া এ সমস্যার উত্তরণ হবে বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া যুগান্তরকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ অবরোধ হচ্ছে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। পুলিশ ফোর্সের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। তারা জনসাধারণ জানমালের নিরাপত্তায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। যে কোনো সহিংসতা ও নাশকতার প্রচেষ্টা পুলিশ কঠোর হাতে দমন করবে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ গবেষক মো. আশরাফুল আলম যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের অপরাধ সাধারণত সমাজের এক শ্রেণীর রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি যেমন, বেকার যুবক, নেশাগ্রস্ত কিংবা বস্তিতে থাকা দরিদ্র মানুষের দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। তারা কারো নির্দেশে বা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তি, গোষ্ঠীর প্ররোচনায় কিংবা আর্থিক লাভের আশায় তারা এ অপরাধ করে থাকে। এ ধরনের অপরাধ রাজনৈতিক প্রভাবের জন্য হয়ে থাকে। আর অপরাধ সংঘটনের পেছনে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই দায়ী থাকে। কারণ রাষ্ট্র যখন নিরপেক্ষ ভূমিকা থেকে একটু সরে এসে ভিন্নপথ বেছে নেয়, তখনই অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে। বর্তমানে দেশে যে ধরনের অপরাধ ঘটছে তা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ছোট ঘটনা এক সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রাজনৈতিক সংঘর্ষে রাষ্ট্র যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হয়। রাজনৈতি দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও আলোচনাই এর একমাত্র সমাধান। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, একই পরিস্থিতির কারণে ২০১৩ সালে সহিংসতার শিকার হয়েছে ১৫৬ শিশু। আর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে ৪১ জন। আহত হয়েছে ১০৭ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ ধরনের পরিস্থিতে দেশে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ দিতে হয় ৪৯৬ জনকে। আহত হয়েছে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ। ৯৫ জন আগুনে পুড়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ২২ জন মারা যায়। এ সময় ১৫ জন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান হামলা-নাশকতায়। ওই বছর ২৮ ফেব্র“য়ারি সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে যে নাশকতা শুরু হয় তা ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। শুধু ওই সময় সহিংসতায় ১৮ জেলায় ৭৭ জন প্রাণ হারায়। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া চলমান অবরোধে ২১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আর বিপুলসংখ্যক নিরীহ মানুষ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়াউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হল এটি জনগণের নজর টানতে চেষ্টা করবে। যেহেতু বর্তমানে একটি অরাজক আন্দোলন চলছে, তাই এ আন্দোলন স্বাভাবিকভাবেই জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা থেকেই তারা বিচারপতির বাসভবনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের বাসাবাড়ি কিংবা তাদের অবস্থানের ওপর হামলা করছে। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়লে এবং স্বাভাবিক আন্দোলন কর্মসূচির সুযোগ দিলে এ ধরনের হামলা কমবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে এই অপরাধবিজ্ঞানী বলেন, দলীয় কর্মীরা পিছু হটলে পেশাদারদের দিয়ে এসব কাজ করানো হয়। বর্তমানে যারা ককটেল মারছে তাদের বেশিরভাগই পেশাদার। সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করে এসব হামলা চালানো হয়। এটি অরাজক আন্দোলনেরই বৈশিষ্ট্য। তিনি আরও বলেন, আমাদের পুলিশে অপ্রতুলতা রয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকা এর অন্যতম কারণ। তবে একেবারে যে ধরতে পারছে না তা নয়। কারণ বর্তমানে যে ধরনের আন্দোলন চলছে, সাধারণত এ ধরনের আন্দোলনে চোরাগোপ্তা হামলা বেশি হওয়াতে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এসব ঘটনা কমিয়ে আনতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সহনশীলতার পরিচয় দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। যদি সত্যিকারার্থেই বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায়, তাহলে তাদের সুযোগ দেয়া উচিত। এতে বোমা হামলার মতো ঘটনাগুলো কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, ক্ষমতার বদল নয়, চাই টেকসই সমাধান ও শান্তিশৃংখলা। বর্তমান পরিস্থিতি হচ্ছে জনগণের একাংশের অসন্তুষ্টির বহির্প্রকাশ। তার কারণ, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে বিএপি ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক দুর্নীতি ও অপশাসন করেছে। সেই থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণ জনগণ বিপুল ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী তথা মহাজোটকে ক্ষমতা এনেছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে- মহাজোট ক্ষমতায় এসেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। তাই তাদের ভেতরে অসন্তুষ্টি কাজ করছে। আর এর মাঝে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল সুযোগ নিয়ে বোমাবাজি ও ককটেল গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রভাব পড়ছে জনগণের ওপর। সুশাসন ও গণতন্ত্র চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা বদল না হলেও ভোটের অধিকারের মাধ্যমে মানুষের ভেতরে সন্তুষ্টি ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে হানাহানি, মারামারি, দলবাজি ও অবিচার আরও বাড়বে।  

No comments:

Post a Comment