Saturday, January 3, 2015

দুই পক্ষই অনড়:প্রথম অালো

৫ জানুয়ারি ঢাকায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং ওই দিন রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ করে রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপি যাতে নামতেই না পারে, সে জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক পদক্ষেপও নেওয়া হবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতাদের পুলিশের নজরদ
ারিতে রাখা হয়েছে। আজ শনিবার ও কাল রোববার রাজধানীতে বিশেষ গ্রেপ্তার অভিযান চলতে পারে। ঢাকার প্রবেশমুখ—যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও আমিনবাজার এলাকা প্রশাসনের কড়া নজরে রাখা হবে। বাসস্ট্যান্ড ও কমলাপুর রেলস্টেশনেও অনুরূপ ব্যবস্থা থাকবে। এসব এলাকার সরকারদলীয় সাংসদদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে পালন করার লক্ষ্যে ওই দিন নয়াপল্টনে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ জন্য প্রস্তুতি নিতে দলের ঢাকা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোকে ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান গতকাল সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা ৫ তারিখে ঢাকায় গণতন্ত্র হত্যা দিবসের সমাবেশ করব। অনুমতি দেবে কি দেবে না, তা সরকারের বিষয়। আমাদের যা করণীয়, তা করব।’ অবশ্য এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের জনসভাও যেকোনো মূল্যে করার কথা বলেছিল বিএনপি। পরে ওই দিন গাজীপুর জেলায় হরতাল দিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে আসে দলটি। তাই ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি না পেলে বিএনপি কতটা কী করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। সরকার ও আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে বিএনপি যাতে রাজপথে কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য দলীয়ভাবে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ আখ্যা দিয়ে ওই দিন ‘বিজয় উৎসব’ করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ দিন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানসহ ঢাকার ১৬টি নির্বাচনী এলাকার ১৬টি স্থানে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে। সমাবেশের আগে বিজয় শোভাযাত্রা বের করবে। প্রতিটি স্থানের সমাবেশে দলের অন্তত একজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংসদ উপস্থিত থাকবেন। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় জনসভায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা যোগ দেবেন। জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকছেন না। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি দেশের সব জেলা ও উপজেলায় বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করার দলীয় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব পালন করার ঘোষণা দিয়েছি। তাহলে বিএনপি ওই দিন গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবে কীভাবে?’ তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা থাকলে অনুমতি দেওয়া হবে না। আর শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নিশ্চয়তা পেলে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। বিএনপি ৩ ও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় জোটগত সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করে। গতকাল পর্যন্ত অনুমতি পায়নি। অবশ্য বিএনপি ৩ ডিসেম্বর কর্মসূচি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তাদের মূল মনোযোগ ৫ জানুয়ারি নিয়ে। বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ের এ সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। শান্তির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’ অনুমতি না পেলে বিএনপি কী করবে—এ প্রশ্নের জবাবে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি করব। এটি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি।’ আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, কেবল ৫ জানুয়ারি নয়, ওই দিন থেকে কয়েক দিন রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারির পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দল সমবেশ করবে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন। এসব কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের যৌথসভা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকার সব সাংসদ এবং মহানগর নেতাদের যৌথসভা হয়। সভায় সব সাংসদ, থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের ৫ জানুয়ারি পাড়ায়-মহল্লায় সক্রিয় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁদের বিজয় শোভাযাত্রা ও সমাবেশ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। যৌথসভা শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির বক্তব্য উসকানিমূলক। তাদের উসকানি বরদাশত করা হবে না। তাঁর দাবি, ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৫ জানুয়ারি আর এক দিন বাকি। ওই দিনের কর্মসূচি নিয়ে উভয় পক্ষ স্ব স্ব অবস্থানে এখনো অনড়। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল ও উদ্বেগ রয়েছে।

No comments:

Post a Comment